করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমশ গ্রাস করছে ভারতের পর্যটন শিল্পকে। সংস্থা-কর্তাদের দাবি, ভারতে ভাইরাসের প্রকোপ এখনও অন্য কয়েকটি দেশের মতো ভয়াবহ আকার না-নিলেও, পর্যটকদের পায়ে বেড়ি পরিয়েছে। এক দিকে, দেশে বিদেশি পর্যটকের প্রবেশ ও ভারতীয়দের বিদেশ ভ্রমণে কড়াকড়ি বসেছে। অন্য দিকে, সংক্রমণের ছড়ানোয় রাশ টানতে দেশের মধ্যেও যাতায়াতে বসেছে নানা নিষেধাজ্ঞা। ফলে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় পর্যটন সংস্থাগুলির। আশঙ্কা, কাজ হারাবেন বহু মানুষ। পরিস্থিতি যুঝতে গাড়ি ও টেলিকম শিল্পের মতোই কেন্দ্রের কাছে একগুচ্ছ আর্থিক সাহায্যের আর্জি জানিয়েছে জাতীয় ও পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্প মহল। যার মধ্যে রয়েছে আর্থিক ত্রাণ, বিভিন্ন ছাড়, বিমান টিকিট বাতিল হলে পুরো টাকা ফেরত।
সংবাদ সংস্থার খবর, বিজেপি সাংসদ রাজীব প্রতাপ রুডিও সংসদে এই শিল্পকে সহায়তার আর্জি জানান। বলেন, জার্মানি পর্যটন শিল্পকে ৪০০০ কোটি ইউরো সাহায্য করেছে। ভারতেও তেমন কিছু না-করলে পরিস্থিতি জটিল হবে।
অর্থনীতির ঝিমুনির কারণে আগেই কিছুটা ব্যবসা হারিয়েছিল পর্যটন। রাজনৈতিক গোলমালের কারণে শীতের মরসুমে হাতছাড়া হয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীরের বাজার। তাই গ্রীষ্মের মরসুমের অপেক্ষায় দিন গুনছিল অধিকাংশ সংস্থা। কিন্তু ভাইরাস-সংক্রমণ সবটা লণ্ডভণ্ড করে দিল, বলছে শিল্প মহল।
শুধু পর্যটন সংস্থাই নয়, ভুগছে হোটেল, রেস্তরাঁ, পরিবহণ ইত্যাদিও। যারা এই শিল্পের অবিচ্ছদ্য অঙ্গ। সামগ্রিক ভাবে সেগুলির সংগঠন এফএআইটিএইচের পর্ষদের কর্তা পি পি খন্নার দাবি, চিনে সমস্যা শুরুর সময়েই তাঁরা অর্থমন্ত্রীকে সুদূরপ্রসারী প্রভাবের আশঙ্কা নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। পর্যটনমন্ত্রী প্রহ্লাদ সিংহ পটেল, বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দফতরকেও সংক্রমণের মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান।
রাজ্য সরকারকে এ দিন গোটা পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন পর্যটন সংস্থাগুলির সংগঠন আইএটিও এবং এডিটিওআইয়ের রাজ্য-সভাপতি দেবজিৎ দত্ত। ইন্ডিয়া টুরিজ়মের পূর্বাঞ্চলীয় কর্তাদের সঙ্গেও এ নিয়ে বৈঠক করেছেন তিনি, পশ্চিমবঙ্গে পর্যটন সংস্থাগুলির সংগঠন টিএএবি-র সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জন বসু ও অন্যান্যরা। তাঁদের আশঙ্কা, ব্যবসায় এর ধাক্কা বহাল থাকবে অন্তত এক বছর। কারণ ভারত-সহ বিশ্ব জুড়েই অর্থনীতির সঙ্কটে ডোবার আশঙ্কা। শিল্পের প্রশ্ন, ছ’মাস পরে বেড়ানোয় নিষেধাজ্ঞায় উঠলেও আর্থিক অবস্থা কতটা ঘুরবে? আগ্রহীরা বেড়াতে যেতে পয়সা খরচে রাজি হবেন?
পর্যটন শিল্পের দাবি, এই ব্যবসা পরিচালনার খরচ বেশ চড়া। পরিস্থিতি এমন চললে ক’মাসের বেশি টিকে থাকা কঠিন। হিসেব অনুযায়ী, দেশে কর্মসংস্থানের ৮% আসে পর্যটন থেকে। একটি প্রত্যক্ষ কাজ একাধিক পরোক্ষ কাজের সুযোগ খোলে। এখনই বেতন দেওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হলে চাকরিতে কোপ পড়ার আশঙ্কা।