উর্জিত প্যাটেল। —ফাইল চিত্র।
সম্পর্কের এতটাই অবনতি হয়েছিল যে ভেঙে পড়েছিল যোগাযোগ। বিরোধ তুঙ্গে ওঠার প্রমাণ দিয়ে এমনকি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর উর্জিত পটেলকে ‘টাকার (শীর্ষ ব্যাঙ্কের মুদ্রা ভান্ডার) উপরে কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে থাকা সাপ’ বলতেও নাকি ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজের বই ‘উই অলসো মেক পলিসি’-তে প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন বলে সংবাদমাধ্যমের খবর। ২০১৮ সালের শুরু থেকে সে বছরের ডিসেম্বরে পটেলের ইস্তফা পর্যন্ত ঠিক ভাবে সরকার ও শীর্ষ ব্যাঙ্ক তথা উর্জিতের সম্পর্কে ভাঙন ধরেছিল, সে কথাও বিশদে বর্ণনা করেছেন তিনি।
কেন্দ্রের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে গভর্নর পদে ফিরতে চাননি রঘুরাম রাজন। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে সেই পদে উর্জিতকে আনেন খোদ মোদী। তাঁর নেতৃত্বে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুৎপাদক সম্পদ যুঝতে কড়া আইনের ঘোষণা করেছিল আরবিআই। গর্গের দাবি, সরকারের সঙ্গে সে ভাবে আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা নিয়ে মোদী সরকারের আপত্তি তো ছিলই। তার উপরে পরবর্তী কয়েক মাসে ঋণনীতিতে টানা সুদের হার বাড়িয়েছিল উর্জিতের নেতৃত্বাধীন ঋণনীতি কমিটি। অনাদায়ি ঋণের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় কেন্দ্রের উপরে চাপ বাড়াচ্ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে আরও পুঁজি ঢালার জন্য। গভর্নর নিজে বলেছিলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ তাদের উপরে নজরদারি চালানোর পথে বাধা। শীর্ষ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার ভাগ এবং তাদের কাজে সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে উর্জিতের মতবিরোধ চরমে ওঠে।
তার মধ্যে পটেল জানান, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে মোদী সরকারের ইলেকটোরাল বন্ড প্রকল্প একমাত্র রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কেরই বাজারে ছাড়া উচিত এবং সেটাও আবার বৈদ্যুতিন মাধ্যমে। যা নিয়ে আপত্তি ছিল কেন্দ্রের অন্দরে। গর্গের দাবি, যে ভাবে পটেল শীর্ষ ব্যাঙ্ক পরিচালনা করছিলেন, তা পছন্দ হচ্ছিল না তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির। তাঁদের মধ্যে যোগাযোগও ক্রমশ কমে আসে।
২০১৮ সালেরই ১৪ সেপ্টেম্বরে মোদী, জেটলির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন উর্জিত। সেখানে অর্থনীতির জন্য চার দফা দওয়াইয়ের কথা বলেন তিনি। সেগুলি হল— দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভকর ব্যবস্থা তুলে নেওয়া, রাজকোষ ঘাটতি মেটাতে বিলগ্নিকরণের লক্ষ্য বাড়ানো, এআইআইবি এবং এনডিবি-র মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ভারত সরকারের বন্ড কিনতে উৎসাহ দেওয়া এবং ছোট শিল্প-সহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে কেন্দ্রের বিপুল বকেয়া দ্রুত মিটিয়ে দেওয়া।
গর্গের বক্তব্য, এই সমস্ত সমাধানকেই ‘অবাস্তব’ বলে দাবি করেছিলেন জেটলি। অবস্থা এতটাই চরমে ওঠে যে একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন প্রিন্সিপাল সচিব পি কে মিশ্রের মাধ্যমেই সরকারের সঙ্গে আরবিআই-এর যোগাযোগ ছিল। পরিস্থিতিতে বিরক্ত মোদী পটেলের সমস্ত কথা শুনলেও, ‘আরবিআই অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ এবং কেন্দ্রের সঙ্গে বিরোধী মেটানোর কোনও প্রচেষ্টা তারা করছে না’ বলে জানা। আর তার পরেই মোদী বলেন, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে বিপুল অর্থের ভাঁড়ার থাকলেও, তা ভাগ না করে ‘তার উপরে সাপের মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে রয়েছেন উর্জিত’।