সমীক্ষকদের বক্তব্য ছিল, করোনার বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে অর্থনীতির চাকা গড়াচ্ছে ঠিকই। কিন্তু পাল্লা গিয়ে কাজের খোঁজও বাড়ছে। তার উপরে গ্রামে কাজ না-পেয়ে অনেকে শহরে ফিরছেন।
ফাইল চিত্র।
অতিমারির তৃতীয় ঢেউ কাটিয়ে আর্থিক কর্মকাণ্ডে গতি এলে কাজের বাজারের হাল ফিরবে বলে আশা ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল উল্টো ছবি। শুধু যে দেশে বেকারত্ব বাড়ল তা-ই নয়, শহরাঞ্চলে তা ছাড়িয়ে গেল ১০ শতাংশের গণ্ডিও। উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র সমীক্ষা বলছে, ১৩ মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহে দেশে বেকারত্বের হার ৭.৭৩%, গ্রামে ৬.৪৫% এবং শহরে ১০.৩৬%। তিনটিই আগের থেকে বেশি।
এর আগেই সমীক্ষকদের বক্তব্য ছিল, করোনার বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে অর্থনীতির চাকা গড়াচ্ছে ঠিকই। কিন্তু পাল্লা গিয়ে কাজের খোঁজও বাড়ছে। তার উপরে গ্রামে কাজ না-পেয়ে অনেকে শহরে ফিরছেন। ফলে অতিমারির প্রকোপ হালকা হতে না হতেই চাকরিসন্ধানীদের ভিড় বেড়েছে। কিন্তু এখনও সেই তুলনায় নিয়োগ হচ্ছে না, বলছেন বিশেষজ্ঞেরা। ফলে বিশেষত শহরে এতটা উঁচু বেকারত্ব। যার অন্যতম কারণ হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে অশোধিত তেল-কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বাজেটের দিকেও আঙুল তুলেছে সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ শ্রমিক সংগঠন বিএমএস। মঙ্গলবার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিনয় সিংহের দাবি, “সিমেন্ট, ইস্পাতের দাম বৃদ্ধির ধাক্কা লেগেছে নির্মাণে। শহরে বহু কর্মী এই শিল্পে কাজ করেন। তাঁদের বড় অংশ কাজ হারিয়েছেন। তার উপরে বাজেটে ১০০ দিনের কাজে বরাদ্দ কমায় পরিযায়ী-সহ আরও বহু শ্রমিক কোভিডের পরে শহরে কাজের আশায় ভিড় করেছেন। কিন্তু অনেকেই এখনও কাজ পাননি। বেড়েছে বেকারত্ব।’’
আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্তের মতে, ‘‘যুদ্ধের কারণে হোটেল, পর্যটন-সহ একাধিক ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে। আমদানি-রফতানি ব্যাহত হওয়ার জের স্পষ্ট বন্দর ও কাস্টমসের চাকরিতে। যাঁরা দিনমজুরি করতেন, তাঁদের অনেকের কাজও গিয়েছে। উপরন্তু মূল্যবৃদ্ধির জেরে অত্যাবশ্যক পণ্যের দাম বাড়ায় মানুষ টিভি, ফ্রিজ, এসি-র মতো পণ্য খুব দরকার ছাড়া কিনছেন না। সেমিকন্ডাকটরের অভাবেও সংস্থাগুলি গাড়ি-সহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন কমাচ্ছে। সংস্থার ব্যবসা কমায় খরচ ছাঁটতে কর্মীও কমাচ্ছে। পরিসংখ্যানে এরই প্রতিফলন।’’ শহরে মহিলা কর্মীর সংখ্যা কমে ২১.১% হওয়াও বেকারত্ব বৃদ্ধির অন্যতম কারণ, দাবি পটনা আইআইটি-র অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামাণিক।