—প্রতীকী চিত্র।
গ্রামাঞ্চলে চাহিদার স্থবিরতা উদ্বেগ বাড়াচ্ছিল অর্থনীতিতে। তবে ভোগ্যপণ্য ক্ষেত্রের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান উল্লেখ করে আজ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রতিবেদনে দাবি করা হল, পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। গত জানুয়ারি-মার্চে চাহিদা বৃদ্ধির নিরিখে শহরকে পিছনে ফেলে দিয়েছে গ্রাম। নতুন অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকেও (এপ্রিল-জুন) সেই ধারা বজায় থাকার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যদিও একই সঙ্গে চিন্তা বাড়িয়ে সেই মাসিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শস্য, আনাজ, ডাল এবং মাছ-মাংসের দাম অদূর ভবিষ্যতেও দেশের খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধিকে ৫ শতাংশের কাছাকাছি রেখে দিতে পারে। অন্য দিকে, দেশীয় মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রা জানিয়েছে, গত জানুয়ারি-মার্চে জিডিপি বৃদ্ধির হার হতে পারে ৬.৭%।
ডেপুটি গভর্নর মাইকেল দেবব্রত পাত্রের নেতৃত্বে আধিকারিকদের একটি দল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। অবশ্য রীতি অনুযায়ী শীর্ষ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, প্রতিবেদনের বক্তব্য লেখকদের নিজস্ব। সেখানে বলা হয়েছে, গত দু’বছরে এই প্রথম বার স্বল্পমেয়াদি ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধিতে শহরকে পিছনে ফেলে দিয়েছে গ্রাম। গত জানুয়ারি-মার্চে দেশে ভোগ্যপণ্যের বিক্রিবাটা মাথা তুলেছে। চাহিদা বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৫%। এর মধ্যে গ্রামে তা ছিল ৭.৬% এবং শহরে ৫.৭%। এপ্রিলেও তার ধারাবাহিকতার ইঙ্গিত মিলেছে। গ্রামে চাহিদা বেড়েছে খাবারদাবার বাদে অন্যান্য পণ্যের, বিশেষত ব্যক্তিগত রূপসজ্জার। দেশে বেড়েছে গাড়ি বিক্রি, টোল ট্যাক্স সংগ্রহ। সব মিলিয়ে নতুন অর্থবর্ষের (২০২৪-২৫) প্রথম ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার হতে পারে ৭.৫%। উল্লেখ্য, গত অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭.৬% হতে পারে বলে শেষ ঋণনীতিতে জানিয়েছিল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। আগামী ৩১ মে শেষ ত্রৈমাসিক ও অর্থবর্ষের পরিসংখ্যান প্রকাশ করতে পারে কেন্দ্র।
একই সঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসছে। তবে খাবারদাবারের মাথা তুলে থাকা দাম স্বল্পমেয়াদে তাকে ৫ শতাংশের কাছাকাছি রেখে দিতে পারে। খাদ্যপণ্য এবং জ্বালানি বাদে অবশিষ্ট মূল্যবৃদ্ধির হার (কোর ইনফ্লেশন) কমা সত্ত্বেও। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে সুদের হার কমার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এ দিকে, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের চতুর্থ তথা শেষ ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বৃদ্ধির হার কিছুটা কমে ৬.৭ শতাংশে নামতে পারে বলে ইঙ্গিত দিল মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রা। আগের তিনটি ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৮.২%, ৮.১% এবং ৮.৪%। জানাল, গোটা অর্থবর্ষে তা ৭.৮% হয়ে থাকতে পারে। যদি অবশ্য আগের পরিসংখ্যান নতুন করে সংশোধন করা না হয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে সরকার হাত উপুড় করে মূলধনী খরচ করেছে। কিন্তু মার্চে তা ধাক্কা খেয়েছে নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধির জন্য। ফলে গোটা ত্রৈমাসিকে তার একটা প্রভাব পড়বে। বৃদ্ধির হারও আগের তিনটি ত্রৈমাসিকের মতো হবে না।
দেশীয় মূল্যায়ন সংস্থার মুখ্য অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ারের বক্তব্য, বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসায় মুনাফা কমার ফলে বেশ কয়েকটি শিল্প ক্ষেত্রের লাভের ক্ষমতা কমেছে। চতুর্থ ত্রৈমাসিকে তার কিছুটা বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে গ্রস ভ্যালু অ্যাডেডের (জিভিএ) উপরে। উল্লেখ্য, নির্দিষ্ট সময়ে দেশে উৎপাদিত পণ্য ও পরিষেবার সামগ্রিক মূল্য হল গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট (মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি)। তার সঙ্গে ভর্তুকি যোগ করে এবং নিট কর বাদ দিলে পাওয়া যায় জিভিএ। নায়ারের দাবি, অর্থবর্ষের শেষ দিকে পরোক্ষ কর বৃদ্ধির হার কমার ফলে জিডিপি এবং জিভিএ-র ফারাক কমবে। তবে একই সঙ্গে চতুর্থ ত্রৈমাসিকে নতুন কিছু ইতিবাচক দিকও দেখা গিয়েছে। ভাল বর্ষার পূর্বাভাসে বেড়েছে ট্র্যাক্টরের বিক্রি। গ্রামাঞ্চলে বিক্রিবাটা বৃদ্ধি লক্ষণ দেখতে পেয়েছে ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলি।