—প্রতীকী ছবি।
সেনসেক্স গত বুধবার নতুন নজির (৬৩,৫২৩) গড়লেও সপ্তাহ শেষে তা ধরে রাখতে পারেনি। বৃহস্পতি-শুক্রবার মোট ৫৪৪ পয়েন্ট নেমে ফিরে গিয়েছে ৬২ হাজারে (৬২,৯৭৯)। এটা ঠিক যে, উঁচু বাজারে লগ্নিকারীদের শেয়ার বেচে লাভ ঘরে তোলার তাগিদ বাড়ে। ফলে সংশোধন আসায় বাজার নামে। তবে গত দুই লেনদেনে সেটা ছাড়াও পতনের অন্য কারণ রয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এর মধ্যে অন্যতম, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসা উষ্ণ বাতাস এল নিনোর প্রভাবে কিছু অঞ্চলে কৃষিতে ক্ষতির আশঙ্কা। তীব্র তাপপ্রবাহও বর্ষা দেরিতে আসায় ফসল বোনার কাজ সময়ে হয়নি। ফলে কৃষি উৎপাদন কমার উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। গবেষণা সংস্থা নমুরার অর্থনীতিবিদদের মতে, এল নিনোর প্রভাব বেশি হলে তা চলতি অর্থবর্ষে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হারকে ৫.৫ শতাংশে নামাতে পারে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস ৬.৫%।
গত সপ্তাহের শেষে বাজারকে ফের মূল্যবৃদ্ধির চড়ার আশঙ্কাই গ্রাস করেছিল। খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার ৪.২৫ শতাংশে নেমেছে। কিন্তু কম কৃষি উৎপাদন তাকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত ঠেলে তুলতে পারে। ফলে দেশে থমকে যাওয়া সুদ যে বাড়বে না, তা বলা যাচ্ছে না। কৃষিকাজ মার খেলে গ্রামীণ অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়তে পারে। তাতে চাহিদা কমবে পণ্যের। যা সার্বিক চাহিদাকে আরও ঢিমে করবে। চড়া মূল্যবৃদ্ধি এবং ঢিমে চাহিদায় সংস্থা উৎপাদন কমাবে। লগ্নিকে করবে নিরুৎসাহ। ধাক্কা খাবে কর্মসংস্থান। ফলে আগামী ক’মাস শেয়ার বাজার তেজী থাকবে কি না বলা মুশকিল।
পশ্চিমের দেশগুলির অর্থনীতিও ভাল জায়গায় নেই। গত সপ্তাহে ব্রিটেনে সুদ বেড়েছে। ইউরোপীয় অঞ্চলের শীর্ষ ব্যাঙ্কও সুদ বাড়িয়েছে। আমেরিকা এবং ইউরোপীয় অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়ায় টানা কমছে ভারতের রফতানি। এটিও বড় চিন্তার বিষয়।
প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকা সফরে চোখ ছিল বাজারের। দেশে যুদ্ধ বিমানের এঞ্জিন তৈরির জন্যে জিই অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। আমেরিকার প্রযুক্তিতে তা তৈরি করবে হিন্দুস্তান এয়্যারোনটিক্স। ভারতে সেমিকনডাক্টর চিপ তৈরি করবে আমেরিকার মাইক্রন টেকনোলজি। এল নিনোর চাপ থাকায় এই সব খবরের সদর্থক প্রভাব দেখা যায়নি শেয়ার সূচকের উপরে। তবে প্রতিরক্ষা শিল্পে স্বনির্ভর হতে হবে, কেন্দ্রের এই বার্তায় বেশ চাঙ্গা হয়েছে এ ক্ষেত্রের ডজন খানেক সংস্থা। ভবিষ্যতে এই শিল্প ভাল করবে, এই আশায় এরই মধ্যে এসেছে ডিফেন্স ফান্ড।
(মতামত ব্যক্তিগত)