MUDRA Loan

মুদ্রা ঋণে ভাটা, পিছোল রাজ্য

সরকারি হিসাবে, ২০১৯-২০ সালে মুদ্রা ঋণ বণ্টনে বাংলা ছিল চার নম্বরে। ২০২০-২১ সালে হয় দ্বিতীয়, পরের বছর প্রথম। সেই সময়টা ছিল কোভিডকাল।

Advertisement

অঙ্কুর সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৪ ০৮:২৯
Share:

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। —ফাইল চিত্র।

দেশে নতুন উদ্যোগপতি এবং ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে সহজে ঋণের বন্দোবস্ত করতে ২০১৫-এ মুদ্রা প্রকল্প এনেছিল কেন্দ্র। যার আওতায় ৫০,০০০ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কম সুদে ধার দেওয়া হয়। তা বণ্টনের ক্ষেত্রে এক সময় প্রথম সারিতেই ছিল পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু কেন্দ্রের তথ্য বলছে, রাজ্যে ভাটা পড়েছে স্বনির্ভর হওয়ার এই তহবিলের চাহিদায়। মুদ্রায় ধার নেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে বাংলা। এগিয়ে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্য।

Advertisement

সরকারি হিসাবে, ২০১৯-২০ সালে মুদ্রা ঋণ বণ্টনে বাংলা ছিল চার নম্বরে। ২০২০-২১ সালে হয় দ্বিতীয়, পরের বছর প্রথম। সেই সময়টা ছিল কোভিডকাল। অথচ অতিমারির ধাক্কা কেটে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে যখন, তখনই পিছিয়ে গিয়েছে রাজ্য। ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪, টানা দু’বছরই বাংলা পঞ্চমে। আগে রয়েছে বিহার, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশ।

অর্থনীতিবিদ সুমন মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘মূলত বড় শিল্পের অনুসারী শিল্প হিসেবে যে সমস্ত ছোট ছোট কারখানা তৈরি হয়, তাদের অনেকেই এই ঋণ নেয়। এ রাজ্য থেকে যেহেতু বড় শিল্পই চলে যাচ্ছে, তাই অনুসারী স্থাপনেও ভাটা। তা ছাড়া, ঋণ শোধ না করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। অনাদায়ি হওয়ার আশঙ্কায় বহু ব্যাঙ্ক তা মঞ্জুরে অনীহা দেখাচ্ছে।’’ রাজ্যে মুদ্রা ঋণের চাহিদা কমার জন্য প্রচার এবং সচেতনতার অভাবকেও দায়ী করছেন শিল্প বিশেষজ্ঞ সুপর্ণ মৈত্র। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘বাংলার মানুষ ঝুঁকিবিমুখ হয়ে পড়ছেন। তাই ভয় পাচ্ছেন স্বনির্ভরতার এই সুযোগ নিতে। তার উপর যে সব প্রকল্পের জন্য ঋণের আবেদন করা হচ্ছে সেগুলি কতটা বাস্তবসম্মত এবং লাভজনক, সেই প্রশ্নও উঠছে।’’ তবে অনাদায়ি ঋণের সমস্যা যে মুদ্রা প্রকল্পকে ধাক্কা দিচ্ছে, সে কথা বলছেন সুপর্ণও। দু’জনেরই বক্তব্য, ‘‘রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশে ধার দেওয়ার আগে ব্যাঙ্কগুলি তা ফেরত পাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখে। এ রাজ্যে মুদ্রায় সেই সম্ভাবনা কম দেখেই হয়তো তারা পুঁজি বণ্টনে অনিচ্ছুক।’’

Advertisement

বঙ্গীয় প্রাদেশিক ব্যাঙ্ক কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজেন নাগর বলেন, ‘‘এই প্রকল্পে গড়ে প্রায় ৬৫-৭০ শতাংশ ধারই ফেরত আসছে না। তাই ঋণদাতারা সতর্ক।’’ ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, সব রাজ্যেই মুদ্রায় মোট আবেদনের গড়ে ৮-১০ শতাংশ বাতিল হয়। তার পরেও যে হারে বাংলায় ঋণ বৃদ্ধির কথা ছিল, সে ভাবে বাড়েনি। ক্ষুদ্রশিল্প দফতরের এক কর্তা জানান, রাজ্য সরকারের যে ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড রয়েছে সেখানেও সাড়া আশানুরূপ নয়। মনে করা হচ্ছে, সরকারি ঋণ প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে স্বনির্ভর হওয়ার প্রবণতাতেই ভাটা পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের প্রশ্ন, রাজ্যের যুবসমাজ উদ্যোগপতি বা ছোট ব্যবসায়ী হয়ে পায়ের তলার জমি শক্ত করতে চাইছে না কেন? এর বড় কারণ খয়রাতির রাজনীতি কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement