—প্রতীকী চিত্র।
দেউলিয়া বিধির (আইবিসি) মাধ্যমে ঋণখেলাপি সংস্থার থেকে বকেয়া আদায় কমে আসা এবং সেটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ উঠছে বহু দিন ধরে। এই অবস্থায় সম্প্রতি মূল্যায়ন সংস্থা ক্রিসিলের সমীক্ষা জানিয়েছে, এই আইন চালু হওয়ার পরে সাত-সাতটা বছর কাটিয়ে ফেললেও এর মাধ্যমে সারা দেশে ব্যাঙ্কের বকেয়া টাকা উদ্ধার করার ছবিটা তেমন উজ্জ্বল নয়। ভারতে ঋণ শোধের সংস্কৃতিকে তা আগের থেকে উন্নত করলেও, গত কয়েক বছরে বকেয়া আদায় কমেছে। দেউলিয়া হয়ে এই বিধির আওতায় আশ্রয় নেওয়া সংস্থাগুলির বকেয়ার সমস্যা মেটানোর (রিজ়লিউশন) প্রক্রিয়া ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, দেউলিয়া হয়ে যাওয়া সংস্থার বকেয়া ঋণ মেটানোর সমস্যার দ্রুত ফয়সালা করতে এই আইন এনেছিল কেন্দ্র। এতে ব্যাঙ্ক বা ঋণদাতারা বকেয়া টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উদ্ধার করে নিজেদের আর্থিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পারেন। দেউলিয়া সংস্থাটিকে বিক্রি করে বা গুটিয়ে নিয়ে পুঁজির জোগাড় করতে পারেন। কিন্তু ক্রিসিলের রিপোর্ট দেউলিয়া বিধির মূল লক্ষ্যের সামনেই প্রশ্নচিহ্ন ঝুলিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছে তারা।
ক্রিসিলের রিপোর্ট বলছে, সাত বছরে আইবিসি-র মাধ্যমে ৮০৮টি মামলায় ৩.১৬ লক্ষ কোটি টাকার বকেয়া উদ্ধার হয়েছে। তবে এখনও ১৩ হাজারের কাছাকাছি মামলা ঝুলে। অথচ ২০১৯ সালের মার্চে যেখানে দেশে বকেয়া আদায়ের হার ছিল ৪৩%, তা গত সেপ্টেম্বরে নেমেছে ৩২ শতাংশে। পাশাপাশি, দেউলিয়া আইনে মামলার ফয়সালা হতে এক সময়ে গড়ে ৩২৪ দিন লাগত। এখন লাগছে দ্বিগুণেরও বেশি (৬৫৩ দিন)। অথচ আইনে বলা আছে ৩৩০ দিনের মধ্যে মামলা মেটাতে হবে।
দেউলিয়া আদালত যে আশানুরূপ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারেনি, তার পিছনে বেঞ্চের (আঞ্চলিক আদালত) সংখ্যা কম হওয়া এবং বকেয়ার অঙ্ক স্থির করতে বেশি সময় লাগাই অন্যতম কারণ বলে দাবি ক্রিসিলের। সংস্থার ডিরেক্টর সুশান্ত সারোদের মতে, গোটা প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করা এবং দেউলিয়া আদালতে সেটি ওঠার আগেই ফয়সালার ব্যবস্থাটির সম্প্রসারণ দেউলিয়া আইনকে আরও বেশি কার্যকরী করতে তুলতে পারে।
যদিও সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেউলিয়া বিধি কার্যকরের আগে চালু থাকা ঋণ পুনর্গঠনের ব্যবস্থায় ৫%-২০% বকেয়া আদায় হত। সেই তুলনায় আইবিসি-র অধীনে আদায় বেড়েছে। ক্রিসিলের সিনিয়র ডিরেক্টর মোহিত মাখিজা জানান, দাবি, সংস্থা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় দেউলিয়া আদালতে যাওয়ার আগেই প্রায় ৯ লক্ষ কোটি টাকা বকেয়ার ফয়সালা হয়েছে।