—ফাইল চিত্র।
মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মে— দু’মাসেরও বেশি সময় কার্যত বন্ধ ছিল দেশের উড়ান পরিষেবা। তলানিতে ঠেকেছিল বিমানবন্দরের রোজগার। সম্প্রতি উড়ান চালু হলেও রোজগার তেমন বাড়েনি। কবে তা আগের জায়গায় পৌঁছবে সেই ছবিও স্পষ্ট নয়। এই অবস্থায় দেশ জুড়ে কেন্দ্রের অধীনে থাকা বিমানবন্দরগুলিতে অবিলম্বে খরচ ছাঁটাইয়ের নির্দেশ দিল বিমান মন্ত্রক। সূত্রের খবর, সে ক্ষেত্রে রুটিন রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি হাত পড়তে পারে কর্মী-অফিসারদের বেতনেও।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বিমান নামার ‘ল্যান্ডিং চার্জ’, বিমানবন্দরে বিমান দাঁড় করিয়ে রাখার ‘পার্কিং চার্জ’, বিপণি ও বিমান সংস্থার অফিসের ভাড়া-সহ বিভিন্ন খাতে রোজগার হয় বিমানবন্দরগুলির। কিন্তু বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় ‘ল্যান্ডিং চার্জ’-সহ বিভিন্ন ভাড়া পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, বিমান শিল্পের যা অবস্থা, তাতে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হওয়া বিমানগুলিকে ‘পার্কিং চার্জ’ দিতে বাধ্য করা হলে সংস্থাগুলি দেউলিয়া হয়ে যাবে। এখন পরিষেবা বাড়লেও তা কবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে এবং বিমানগুলিতে আগের মতো যাত্রী হবে তা-ও অস্পষ্ট।
মন্ত্রক সূত্রের খবর, লকডাউন শুরুর আগে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে মাসে গড়ে ১১৮ কোটি টাকা রোজগার হচ্ছিল। এপ্রিলে তা এক ধাক্কায় নামে ২.৫ কোটিতে। সেটাও হয়েছিল মূলত পণ্য বিমান ও বন্দে ভারত প্রকল্পে উড়ান চলায়। মে-র শেষে কলকাতায় উড়ান শুরু হওয়ায় জুনে রোজগার বেড়ে হয় ২৫ কোটি। কিন্তু এ বার ছ’টি শহর থেকে কলকাতায় উড়ান বন্ধের সিদ্ধান্ত আরও সঙ্কট তৈরি করতে পারে। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিমানবন্দরগুলির আয় তলানিতে পৌঁছনো অস্বাভাবিক নয়। ফলে এই ধাক্কা সামাল দেওয়ার উপায় নিয়েই এখন মাথা ঘামাতে হচ্ছে বিমান মন্ত্রক ও বিভিন্ন পক্ষকে। এই প্রেক্ষিতেই পরিষেবা খাতে খরচ ছাঁটার ভাবনা।
বিমানবন্দরের আয়
• বিমানের ল্যান্ডিং চার্জ
এবং পার্কিং চার্জ।
• বিমানবন্দরে বিপণি, বিমান সংস্থার অফিসের ভাড়া।
• বিজ্ঞাপন, গাড়ির পার্কিং ফি, যাত্রীদের ইউজার্স ডেভেলপমেন্ট ফি।
রোজগারে ধাক্কা
• জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা বিমানবন্দরে গড় আয় ১১৮ কোটি টাকা।
• এপ্রিলে ২.৫ কোটি। আর জুনে ২৫ কোটি।
পরিকল্পনা
• এই অর্থবর্ষে কলকাতা-সহ পূর্ব ভারতের বিমানবন্দরগুলির রক্ষণাবেক্ষণে ধরা হয়েছিল ৯৬ কোটি। তা ৭৫ কোটি করার ভাবনা।
• দেশ জুড়ে ২৭০ কোটি টাকা সাশ্রয়ের চেষ্টা।
• নির্মাণ, বৈদ্যুতিক পরিকাঠামো, গাড়ি, যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণে কমানো হবে খরচ।
• কমানো হতে পারে কর্মী-অফিসারদের বেতন।
দিল্লি থেকে আসা নির্দেশে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবর্ষে কলকাতা-সহ পূর্ব ভারতের বিমানবন্দরগুলিতে রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৯৬ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। তা কমিয়ে ৭৫ কোটি করতে হবে। মন্ত্রক সূত্রের খবর, দেশের সমস্ত বিমানবন্দর থেকে শুধু রক্ষণাবেক্ষণ খাতেই প্রায় ২৭০ কোটি বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে। কমানো হতে পারে কর্মী এবং অফিসারদের বেতনও।
কলকাতায় বিমানবন্দরের কর্মী সংগঠনের নেতা কৈলাশপতি মণ্ডলের মতে, ‘‘এখন আঞ্চলিক উড়ান পরিষেবা প্রকল্প বন্ধ রাখা উচিত। কিন্তু তা না-করে ছোট ছোট বিমানবন্দরে কোটি কোটি টাকা ঢালা হচ্ছে। খরচ কমানোর নামে কর্মীদের বেতন ছাঁটার কথা বলা হচ্ছে। এটা মানা যায় না।’’