টেলিকম শিল্পের মাসুল-যুদ্ধ আগেই শুরু করে দিয়েছিল মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্স জিয়ো।
প্রতিযোগিতার পুরনো ব্যাকরণ চুরমার করার পথে আর এক ধাপ!
কার্যত নিখরচার ফিচার ফোন, সেই সঙ্গে নিচু খরচের পরিষেবা দিয়ে টেলিকম শিল্পের মাসুল-যুদ্ধ আগেই শুরু করে দিয়েছিল মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্স জিয়ো। পিছনে ফেলে দিয়েছিল তাদের আগে ব্যবসা শুরু করা সমস্ত টেলিকম সংস্থাকে। মাথা গলিয়েছে ব্রডব্যান্ডের বাজারেও। তার পরে লকডাউনের মধ্যে বিদেশের অন্তত ১০টি সংস্থাকে নিজেদের জিয়ো প্ল্যাটফর্মে টেনে এনে খুচরো ব্যবসার বাজারেও ঝড় তোলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে তারা। আর এ বার টেলিকম ক্ষেত্রে আরও জাঁকিয়ে বসার জন্য নতুন দু’টি পদক্ষেপ শুরু করল দেশের বৃহত্তম শিল্প গোষ্ঠী।
মঙ্গলবার রিলায়্যান্স জিয়োর ডিরেক্টর আকাশ অম্বানী জানান, সস্তার প্রিপেড পরিষেবার পর কম দামি পোস্টপেড পরিষেবাকে ঢেলে সাজিয়েছেন তাঁরা। তাতে কম খরচে যেমন ফোন করা যাবে, তেমনই ব্যবহার করা যাবে ইন্টারনেট, দেখা যাবে বিভিন্ন বিনোদনমূলক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। বৃহস্পতিবার থেকেই। পাশাপাশি সূত্রের খবর, অগস্টে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের বার্ষিক সাধারণ সভায় সস্তা স্মার্টফোন বাজারে আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর মুকেশ অম্বানী নাকি ইতিমধ্যেই সেই রাস্তায় কয়েক ধাপ এগিয়েছেন। দেশের যে সমস্ত সংস্থা যন্ত্রাংশ জুড়ে মোবাইল ফোন তৈরি (অ্যাসেম্বল) করে তাদের ইতিমধ্যেই বড় অঙ্কের বরাত দেওয়া হয়েছে। দু’বছরে নাকি প্রায় ২০ কোটি সস্তার ৪জি স্মার্টফোন হাতে চান তিনি। যার দাম ৪০০০ টাকা।
আরও পড়ুন: কৃষি বিলের ধাক্কায় বিরাট পতন শেয়ার বাজারে, লগ্নিকারীরা খোয়ালেন ৪.৫ লক্ষ কোটি
আরও পড়ুন: ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের পক্ষে রাজন
ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, প্রিপেডের মাসুল সস্তা হলেও পোস্টপেডের মাসুল তার চেয়ে কিছুটা বেশি। তার উপর নির্ভর করেই সম্প্রতি ব্যবসা কিছুটা বেড়েছে টেলিকম সংস্থাগুলির। বুকে কিছুটা বাতাস নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। এ বার পোস্টপেডের সস্তা প্ল্যানের মাধ্যমে তাদের সেই জমিও কাড়তে চাইছে জিয়ো। তবে কারও কারও বক্তব্য, পোস্টপেড প্ল্যানে এই ধরনের সুবিধা বাকি সংস্থাগুলিও দেয়। সেগুলির থেকে জিয়ো কতটা সস্তা তা তাদের প্ল্যানগুলি বাজারে এলেই বোঝা যাবে। বিশেষ করে যখন টেলিকম ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রক ট্রাই সংস্থাগুলিকে পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছেন, গ্রাহকদের পরিষেবার খরচ বোঝাতে হবে স্পষ্ট ভাবে।
দ্বিতীয়ত, ভারতে স্মার্টফোনের ব্যবহার বিপুল ভাবে বাড়লেও জনসংখ্যার অর্ধেকের হাতে এখনও তা পৌঁছয়নি। সস্তা স্মার্টফোনের মাধ্যমে সেই বাজারও ধরতে চাইছেন মুকেশ। বিশেষ করে যখন মোদী সরকারে দেশীয় উৎপাদনের উপর জোর দিয়ে ভারতকে আত্মনির্ভর করার কথা বলছে, তখন জিয়োর মুকেশের কাছেও তুরুপের তাস হতে পারে সস্তার দেশীয় ৪জি স্মার্টফোন।
এ দিনই সংসদে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় ধোত্রে জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী টেলিকম সংস্থাগুলিকে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে বকেয়া স্পেকট্রাম ও লাইসেন্স ফি-র ১০% মেটাতে হবে। সে ক্ষেত্রে দাঁতে দাঁত চাপা প্রতিযোগিতার বাজারে জিয়োর প্রতিযোগীদের উপরে চাপ বাড়তে পারে। এই অবস্থায় তারা কী কৌশল নেয় সে দিকেই তাকিয়ে সমগ্র টেলিকম শিল্প।