অপেক্ষার সময় শেষ, এ বার সঞ্চয়-লগ্নি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হিসাব কষতে বসে পড়লেই হল। প্রতীকী ছবি।
নতুন অর্থবর্ষের (২০২৩-২৪) প্রথম দু’সপ্তাহ পেরিয়ে আমরা এখন তৃতীয় সপ্তাহে। লগ্নির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে যে সব তথ্য জানা দরকার, তার অনেকটাই জানা হয়ে গিয়েছে গত কয়েক দিনে। জানা হয়েছে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির পরিবর্তিত সুদের হার। নতুন কর কাঠামো চালু হয়েছে এই অর্থবর্ষের গোড়া থেকেই। পুরনো না নতুন, কর ব্যবস্থা বাছাই নিয়ে ভাবনা-চিন্তা চলছে। একাংশ সিদ্ধান্ত নিয়েও নিয়েছেন। অন্য দিকে, এই দফার ঋণনীতিতে সুদ বাড়ায়নি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার (৫.৬৬%) নেমেছে আরবিআইয়ের বেঁধে দেওয়া ৬% সহনসীমার নীচে। ফলে আপাতত ঋণে আর সুদ বৃদ্ধির আশঙ্কা নেই। তীব্র তাপপ্রবাহের ভ্রুকুটি থাকলেও, আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস এ বারও বর্ষা স্বাভাবিক হবে। তার মানে, অপেক্ষার সময় শেষ। এ বার সঞ্চয়-লগ্নি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হিসাব কষতে বসে পড়লেই হল।
এখন দেখে নেওয়া যাক বর্তমান পরিস্থিতিতে কে, কোথায় লগ্নি করার কথা ভাবতে পারেন—
যাঁদের আয় ৭.২৭ লক্ষ টাকার কম এবং নতুন কর কাঠামোর আওতায় থাকতে চান, তাঁদের আয়ের পুরোটাই থাকবে করমুক্ত। এই শ্রেণির মানুষ উঁচু সুদের হারযুক্ত সুরক্ষিত প্রকল্প বড় মেয়াদে টাকা রাখুন। নিশ্চিত নিয়মিত করমুক্ত রোজগার স্বস্তি দেবে।
যাঁদের আয় ১৫ লক্ষ টাকার মধ্যে থাকার সম্ভাবনা, তাঁদের কর দিতে হবে ৫%-২০%। এঁরা এমন প্রকল্পে টাকা রাখুন, যাতে করের পরে নিট আয় মূল্যবৃদ্ধির ৬% সীমার উপরে থাকে।
যাঁরা ৩০% করের আওতায় পড়বেন, তাঁরা এমন জায়গায় লগ্নি করুন যেখানে কর ছাড়ের কিছু সুবিধা রয়েছে বা সম্ভাব্য আয় ৯ শতাংশের আশেপাশে থাকতে পারে। প্রকল্পগুলি মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি— পিপিএফ, সুকন্যা সমৃদ্ধি, জীবন বিমা প্রকল্পে বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়াম জমা, যেখানে ১০ (১০ডি) ধারায় কর ছাড়ের সুবিধা আছে, ৩৫ শতাংশের বেশি শেয়ারে (একুইটি) লগ্নি করা হয় এমন ব্যালান্সড ফান্ড, শেয়ার ভিত্তিক ফান্ড এবং সরাসরি ভাল শেয়ারে লম্বা মেয়াদের লগ্নি।
যাঁরা পুরনো কর কাঠামোয় থাকতে চান, তাঁদের দেখতে হবে কর ছাড়ের বিভিন্ন সুবিধা যাতে পাওয়া যায়। পিপিএফ এবং ৮০সি ধারায় ছাড় পাওয়া যায়, এমন সব প্রকল্পে তাঁরা ১.৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করতে পারেন। যাঁরা নতুন কাঠামোয় থাকবেন, তাঁদের এই লগ্নি করার প্রয়োজন নেই। তবে ভবিষ্যৎ জীবন এবং পরিবারে জন্য সম্পদ সৃষ্টির স্বার্থে সম-পরিমাণ অর্থ বড় মেয়াদে বিভিন্ন প্রকল্পে জমিয়ে যেতে পারেন। এই কর কাঠামোয় লগ্নি করা টাকার উপর কর ছাড় না থাকলেও, স্বাধীন পেশার মানুষদের পিপিএফ এবং অন্যান্য ভাল প্রকল্পে নিয়মিত পুঁজি ঢালার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া উচিত হবে। নিউ পেনশন সিস্টেম অর্থাৎ এনপিএস তাঁদের জন্য বড় মেয়াদে টাকা জমানোর জন্য একটি আকর্ষণীয় প্রকল্প। সরকারি ফ্লোটিং রেট বন্ডে (পরিবর্তনশীল সুদের হারে ঋণপত্র) এখন সুদ পাওয়া যাচ্ছে ৭.৩৫%। এই হার জুলাই মাস থেকে বেড়ে ৮.০৫ শতাংশে পৌঁছতে পারে।
অনেক দিন পরে ভাল সময় এসেছে প্রবীণ নাগরিকদের জন্যে। সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমে লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা বেড়ে ৩০ লক্ষ টাকা হওয়ার পাশাপাশি সুদের হার বেড়ে হয়েছে ৮.২০%। বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক প্রবীণদের সুদ দিচ্ছে ৭.৭৫% থেকে ৮%। ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি (এনবিএফসি) দিচ্ছে আরও একটু বেশি।
গত ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত চলতি অর্থবর্ষের বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মহিলাদের জন্য একটি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প আনার কথা ঘোষণা করেছেন। ওই বিশেষ প্রকল্পটিতে ৭.৫% সুদ পাওয়া যাচ্ছে। মহিলাদের জন্য উদ্যোগ ভাল হলেও, এই মুহূর্তে বিভিন্ন প্রকল্পে একই ধরনের অথবা আরও বেশি সুদের হার পাওয়ার সুযোগ থাকায় প্রকল্পটি কতটা জনপ্রিয় হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্প বা এনএসসি-তে এখন সুদ দেওয়া হচ্ছে ৭.৭% হারে। ডাকঘর ৫ বছর মেয়াদি টাইম ডিপোজ়িটে সুদ ৭.৫% এবং মাসিক আয় প্রকল্পে ৭.৪%। মূল্যবৃদ্ধির হার কিছুটা নেমে আসায় এই সব প্রকল্পে আর নতুন করে সুদের হার বাড়ার সম্ভাবনা কম। সুতরাং সুযোগ হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে সঞ্চয় বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করে নিতে হবে সেগুলিকে।
(মতামত ব্যক্তিগত)