প্রতীকী ছবি।
১০,০০০। ১৫,০০০। ২০,০০০। সিইএসসি-র বিদ্যুৎ বিলে চোখ রেখে অনেকেরই ঠাহর হচ্ছে না জেগে আছেন, না দুঃস্বপ্ন দেখছেন। শহর জুড়ে প্রশ্ন, যতই মানুষ ঘরবন্দি থাকুন, যতই গরম পড়ুক, সাধারণ রোজগেরেদের বাড়িতে বিদ্যুতের বিল এত চড়া হয় কী করে? ফেসবুকে বিলের ছবি দিয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন গ্রাহক। ছয়লাপও হোয়াটসঅ্যাপ। আমপান ঘূর্ণিঝড়ের পরে দীর্ঘ দিন আলো-জল না-ফেরায় যে রকম রাগে-হতাশায় পথে নেমেছিলেন আমজনতা, তেমন রাগই যেন ফিরে আসছে অস্বাভাবিক বেশি বিলের অসহায়তা গ্রাস করার পরে। তাঁদের প্রশ্ন, লকডাউনে সব কারবার বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ সংস্থা যে ক্ষতি গুনেছে, তা-ই কি উসুল করার চেষ্টা এটা?
অভিযোগ উড়িয়ে সিইএসসি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট (ডিস্ট্রিবিউশন) অভিজিৎ ঘোষের দাবি, লকডাউনের সময় প্রভিশনাল বিল তৈরি হয়েছিল আগের ছ’মাসের গড় বিলের হিসেবে। মিটার রিডিংয়ের পরে পুরো বিদ্যুৎ খরচ আসছে। তাই টাকাটা বেশি। তবে একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার জুলাইয়ের বিল মেটানোর সময় ১০ দিন বাড়িয়েছে তারা। সংস্থার এমডি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, চাইলে গ্রাহক তিন কিস্তিতেও টাকা দিতে পারবেন। অনেকের প্রশ্ন, বিলের হিসেব নিয়েই যেখানে বিভ্রান্তি, সেখানে কিস্তি কেন? কিস্তিতে হলেও, বিল তো সেই দিতেই হচ্ছে। বিশেষত ফোনে, চিঠিতে, মেল-এ যেখানে অভিযোগের বন্যা বয়ে যাচ্ছে!
গ্রাহকদের অভিযোগ
• বিদ্যুৎ খরচের অঙ্ক মিলছে না।
• ফলে অস্বাভাবিক বেশি বিল। তা-ও মূলত দু’মাসের (এপ্রিল-মে)
• চড়া মাসুল (উঁচু স্ল্যাবে ফেলে) নেওয়া হচ্ছে অন্যায্য ভাবে।
• যাঁদের ইলেকট্রিসিটি ডিউটি দেওয়ার কথা নয়, তাঁদের অনেকের বিলেই তা যোগ হচ্ছে।
• বিল নিয়েই যখন বিভ্রান্তি, তখন কিস্তিতে মেটানোর সুযোগ দিয়ে কী হবে?
• করোনার অনিশ্চয়তার মধ্যে আমজনতাকে এমন চাপে ফেলা অনৈতিক।
বিদ্যুৎ সংস্থার দাবি
• বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের নিয়ম মেনেই বিল।
• এপ্রিল, মে ভরা গরম। বিদ্যুৎ লাগে বেশি।
• লকডাউনে সকলে ঘরবন্দি থাকাতেও বিদ্যুতের খরচ বেড়েছে।
• সব মিলিয়ে বিলও তাই কিছুটা বেশি।
ভুরি ভুরি অভিযোগ পাচ্ছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও। তাঁর দাবি, সিইএসসি-র বিল নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে ভীষণ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। সবার প্রশ্ন বিল কেন এত বেশি, তাঁরা কী করবেন? অনেকেই অসহায় বোধ করছেন। রাজ্যের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংগঠন অ্যাবেকার সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যুৎ চৌধুরীর মতে, কিস্তি কোনও সমাধান হতে পারে না। তাঁর তোপ, লকডাউনের সময় মিটার রিডিং এখন একসঙ্গে নেওয়াতেই বহু গ্রাহক উঁচু স্ল্যাবের মাসুলের আওতায় পড়ছেন। প্রদ্যুৎবাবুর দাবি, অবিলম্বে ‘স্ল্যাব বেনিফিট’ দিয়ে বিল কমানো হোক। সিইএসসি অবশ্য বলছে, উঁচু স্ল্যাবে মাসুল নেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি ব্যাখ্যা করার পরে অনেকেই নাকি বুঝতে পেরে মেনেও নিচ্ছেন। চড়া বিলের অভিযোগ তুলছেন বণ্টন সংস্থার গ্রাহকদের একাংশও।