প্রতীকী ছবি।
গত অর্থবর্ষে করোনার ঝড়ে ৭.৩% সঙ্কুচিত হয়েছিল দেশের অর্থনীতি। শুক্রবার পরিসংখ্যান দফতর (এনএসও) জানাল, তলানিতে নামা সেই জিডিপির ভিত্তিতে চলতি অর্থবর্ষে তা বাড়বে ৯.২%। কিন্তু সেই স্বস্তির পূর্বাভাসের মধ্যেও থাকল একরাশ উদ্বেগ।
আপাত ভাবে ৯.২% বৃদ্ধিকে বেশি বলে মনে হলেও, কোভিডের আগের বছর, অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের তুলনায় চলতি অর্থবর্ষের জিডিপি বৃদ্ধি মাত্র হতে পারে ১.২%। তবে পূর্বাভাস অনুযায়ী অন্তত সেটুকু হলেই বিশ্বের যে সব অর্থনীতি প্রাক্-কোভিড পর্যায়ে ফিরে যেতে পেরেছে, সেই তালিকায় ভারতের নাম ঢুকে যাবে।
এ দিন এনএসও ২০২১-২২ সালের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে প্রথম আগাম পূর্বাভাস প্রকাশ করেছে। পরিসংখ্যান বলছে, সরকারি খরচ, সামগ্রিক লগ্নির পরিমাণ ফিরতে পেরেছে কোভিডের আগের জায়গায়। কিন্তু ১ ফেব্রুয়ারির বাজেটের আগে অর্থ মন্ত্রকের কাছে চিন্তার কারণ হল, গৃহস্থের খরচ ও কেনাকাটার পরিমাণ এখনও কোভিডের আগের জায়গায় পৌঁছয়নি। অর্থাৎ, অর্থনীতি অনেকটা ঘুরে দাঁড়ালেও সকলের কেনাকাটা, খরচের পরিমাণ সমান ভাবে বাড়েনি।
ডিসেম্বরে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক পূর্বাভাস করেছিল, চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধি ৯.৫% ছোঁবে। তবে সে ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া ছিল, কোভিড আর মাথা তুলবে না। কিন্তু বাস্তবে ফের সংক্রমণ বাড়ছে। দোকান-বাজার, আর্থিক কর্মকাণ্ডে জারি হচ্ছে বিধিনিষেধ। এই অবস্থায় সরকারি পূর্বাভাস শীর্ষ ব্যাঙ্কের চেয়ে সামান্য হলেও কম। যদিও অনেক অর্থনীতিবিদ ওমিক্রনের ধাক্কায় আরও কম বৃদ্ধিরও আশঙ্কা করছেন। এ দিনের পূর্বাভাসের ভিত্তিতে জিডিপির অঙ্ক ধরেই অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বাজেটের হিসাব কষবেন। সে ক্ষেত্রে পূর্বাভাসের তুলনায় বৃদ্ধি অনেকটা কম হলে সেই হিসাব গুলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক মূলত খুচরো মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মাথা ঘামায়। কিন্তু এখন নতুন চিন্তার কারণ পাইকারি বাজারদর।
এনএসও-র মতে, এই অর্থবর্ষের বৃদ্ধির ইঞ্জিনে জ্বালানি দিচ্ছে মূলত কৃষি, খনি, কারখানার উৎপাদন। পাইকারি দর বেশি বলে মূল্যবৃদ্ধি-সহ বৃদ্ধির হার ছোঁবে ১৭.৬%। উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়বে কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বাণিজ্য-হোটেল-পরিবহণ। তবে পূর্বাভাসে সব থেকে আশার দিক হল, নতুন পুঁজির পরিমাণ জিডিপির ২৯.৬%। সাম্প্রতিককালে যা সর্বোচ্চ। ২০০৭-০৮ অর্থবর্ষে তা ৩৬% ছুঁলেও মোদী জমানায় ২৭ শতাংশের ঘরেই আটকে ছিল। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রফতানি জিডিপির ২০ শতাংশের বেশি, আমদানি ২৩ শতাংশের উপরে। অর্থাৎ, বিশ্ব অর্থনীতির উন্নতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বাণিজ্যও বাড়ছে।