পাট শিল্পে ফাটকা ঠেকাতে এবং চটজাত পণ্য রফতানির বাজার ফিরে পেতে এ বার কাঁচা পাটের দামও বেঁধে দিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর আগে চটের বস্তার দাম সম্প্রতি বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক।
বস্ত্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, কাঁচা পাটের দাম কুইন্টল প্রতি ৪৭০০ টাকায় বেঁধে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কাঁচা পাট মজুত করতে থাকায় বেশ কিছু দিন ধরে হু হু করে বাড়ছে কাঁচা পাটের দাম। বর্তমানে কাঁচা পাটের দাম প্রতি কুইন্টলে ৫৭০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। পাট শিল্পমহল সূত্রের খবর, মাত্র দিন সাতেকের মধ্যেই দাম কুইন্টাল প্রতি ৬ হাজার টাকা বেড়ে গিয়েছে।
মজুত করা কাঁচা পাট উদ্ধার করার জন্য রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টা এর মধ্যেই ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলেই কাঁচা পাটের ফাটকা বাজারে লাগাম পরানো সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ পাট শিল্পমহলের অনেকের। এর আগে রাজ্য মজুত করা চটের বস্তার উদ্ধারেও সচেষ্ট হয়েছিল। কিন্তু তাতেও তারা সফল হয়নি। অবস্থা সামাল দিতে এই প্রথম চটের বস্তার দাম বেঁধে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় সরকার। কাঁচা পাটের ক্ষেত্রেও একই পথে হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র।
কাঁচা পাটের দাম না-বেঁধে শুধু চটের বস্তার দর বেঁধে দেওয়ায় ক্ষোভ ছিল চটকল মালিকদের। উল্লেখ্য, ইন্ডিয়ান জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (আইজেএমএ)-এর চেয়ারম্যান মণীশ পোদ্দার অভিযোগ করেছিলেন যে, কাঁচা পাটের দাম না-বেঁধে শুধু বস্তার দাম বেঁধে দেওয়ার ফলে চটকলগুলি লোকসানের মুখে পড়তে চলেছে। কারণ, বস্তা তৈরির কাঁচা মাল হল কাঁচা পাট। কাঁচামালের দাম বাড়তে থাকলে বস্তা তৈরির উৎপাদন খরচ দিন দিন বাড়বে। অথচ কেন্দ্র দাম বেঁধে দেওয়ার ফলে বস্তার দাম তাঁরা বাড়াতে পারবেন না। এ বার কাঁচা পাটের দামও বেঁধে দেওয়া হলে চটকলগুলির সমস্যা কিছুটা কমবে বলে মনে করছে পাট শিল্পমহল।
কাঁচা পাটের দাম বাড়তে থাকায় শুধু চটকলগুলিই যে সমস্যায় পড়ছে, তা নয়। দ্রুত রফতানির বাজার হারাচ্ছে চটের চাদর, বাজার করার শপিং ব্যাগ ইত্যাদি পাটজাত পণ্য।
আইজেএমএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং পাটজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য তৈরি শক্তিগড় জুট পার্কের কর্ণধার সঞ্জয় কাজারিয়া বলেন, ‘‘কাঁচা পাটের দাম ক্রমশ বাড়তে থাকার ফলে পাটজাত পণ্যের উৎপাদন খরচও হালে বেড়ে গিয়েছে। এর ফলে ওই সব পণ্যের বিদেশের বাজার আমরা দ্রুত হারাচ্ছি। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত অবলম্বে কাঁচা পাটের ফাটকা বন্ধ করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’’
উল্লেখ্য, শুধু চটের বস্তা তৈরির উপর নির্ভরতা কমাতে বিভিন্ন পাটজাত পণ্য তৈরিতে জোর দেওয়ার লক্ষ্যেই তৈরি করা হয়েছে শক্তিগড় জুট পার্ক। এই শিল্প তালুকে তৈরি পণ্যের একটা বড় অংশ রফতানি করাই সেখানে গড়ে ওঠা বিভিন্ন কারখানার উদ্দেশ্য।
এ দিকে চটের বস্তার দাম বেঁধে দেওয়ার পর তার দাম কমতে শুরু করেছে বলে দাবি করেছেন জুট কমিশনার সুব্রত গুপ্ত। কাঁচা পাটের মজুতদারি ধরার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ব্যর্থ হলেও জুট কমিশনারের দফতর নিজে তদন্ত চালিয়ে অতিরিক্ত মজুত উদ্ধার করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। নিয়ম অনুযায়ী ২ মাসের কাঁচা মাল মজুত রাখতে পারে চটকলগুলি। কিন্তু তদন্তে দেখা গিয়েছে যে, একাধিক মিল তিন মাস বা তার বেশি সময়ের জন্য কাঁচা পাট মজুত করে রেখেছে। শুধু চটকলগুলিই নয়, এক শ্রেণির কাঁচা পাট ব্যবসায়ীও অতিরিক্ত মুনাফা করার লক্ষ্যে মজুত করার রাস্তায় নেমেছে। এই মজুতদারিই কাঁচা পাটের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মন্তব্য করেন জুট কমিশনার। তিনি জানান, ‘‘মজুতদারি মোকাবিলা করতে এ বার আমরা কাঁচা পাটের দামও বেঁধে দেওয়ার কথা ভাবছি।’’