প্রতীকী ছবি।
অতিমারির মধ্যেই গত বছরের এপ্রিল থেকে এ বছর জানুয়ারি পর্যন্ত ভারত থেকে অক্সিজেন রফতানি দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানা গিয়েছিল সরকারি তথ্যে। দেশে অক্সিজেনের হাহাকার শুরুর পরে কেন্দ্রের ওই নীতি প্রশ্নের মুখে পড়ে। এ বার তারা প্রায় একই রকম অভিযোগে বিদ্ধ হল কাঁচা পাট নিয়ে। প্রশ্ন উঠল, দেশে যখন পাটের তীব্র আকাল, তখন চটের বস্তা তৈরির ওই কাঁচামালের রফতানি আটকায়নি কেন সরকার? পাটমহল সূত্রের দাবি, গত অগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লক্ষ বেল (১ বেল=১৮০ কেজি কাঁচা পাট) বিদেশে গিয়েছে। ২ লক্ষ বেল রফতানি হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রকের সামনেই। ৩ লক্ষ বেল চোরা পথে। অথচ পাটের অভাবে চটের বস্তা তৈরি ধাক্কা খাওয়ায় সম্প্রতি পাঁচটি চটকল বন্ধ হয়েছে এই রাজ্যে। অনেকগুলি বন্ধের মুখে। বেকার হয়েছেন বহু কর্মী। এ জন্য মূলত ওই রফতানিকেই কাঠগড়ায় তুলছে চটশিল্প ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চটকল মালিকের তোপ, ‘‘পাটের রফতানি আটকে দেশীয় শিল্পের সমস্যা মোকাবিলা করতে না-পারাকে কেন্দ্রের ব্যর্থতা হিসেবেই দেখছে চটশিল্প।’’
তবে জুট কমিশনার মলয়চন্দন চক্রবর্তীর দাবি, সমস্যা মেটাতে তাঁরা চেষ্টার কোনও ত্রুটি করেননি। তিনি বলেন, ‘‘সমস্যা যখন সবে মাথা তুলতে শুরু করেছে, তখন থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ করতে শুরু করেছিলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল বাজারে যতটা কাঁচা পাট পাওয়া যাচ্ছে, তা যেন সমস্ত চটকলের মধ্যে প্রয়োজনের আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হয়।’’
চটশিল্প মহলের অভিযোগ, সমস্যা আরও জটিল হয়েছে এক শ্রেণির অসাধু চটকল মালিক কাঁচা পাট মজুত করতে থাকায়। ততদিন বাজারে পাটের আকাল শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে রফতানিও চলছে পুরোদমে। মলয়বাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘পাট মজুত রুখতেও আমরা একাধিক পদক্ষেপ করেছি। মজুতের পরিমাণ বাঁধতে পাঁচটি নির্দেশ জারি করেছি গত বছর ২৫ অগস্ট থেকে। এখন চটকলগুলিতে এক মাসের প্রয়োজনের বেশি কাঁচা পাট জমানো বারণ। জুট বেলের ব্যবসায়ীরাও একলপ্তে ৫০০ কুইন্টালের বেশি মজুত করতে পারেন না।’’
শিল্পমহলের আশঙ্কা, মাস তিনেকের আগে সমস্যা মেটার সম্ভাবনা নেই। কারণ, ২০২১-২২ পাট মরসুমের নতুন কাঁচা পাট আগামী অগস্টের আগে বাজারে আসবে না। বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে সমস্যা মেটানোর যে কথা বলা হচ্ছে, তা-ও সম্ভব নয় বলে মনে করছে তারা। কারণ, বাংলাদেশেও পাটের আকাল চলছে। সেখানে পাটের দাম ভারতের থেকেও বেশি।