ফাইল চিত্র।
দিন সাতেক আগে কেন্দ্রীয় তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে ওএনজিসি-র প্রকল্পে বাণিজ্যিক ভাবে তেল উত্তোলনের সম্ভাবনা উস্কে দিয়ে জানিয়েছিলেন, শীঘ্রই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে আসবেন তিনি। সূত্রের খবর, সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী সপ্তাহেই ইন্ডিয়ান অয়েলের (আইওসি) এক অনুষ্ঠানে কলকাতায় আসছেন প্রধান। সংশ্লিষ্ট মহলে জল্পনা, সাম্প্রতিক আশ্বাস অনুযায়ী সেই সময় ওএনজিসি-র প্রকল্পের অগ্রগতি সরেজমিনে দেখতে যেতে পারেন তিনি। কারণ একাংশের বক্তব্য, বিধানসভা ভোটের আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজ্য সফরে এলে ওই প্রকল্পকে অন্যতম তুরুপের তাস হিসেবে তুলে ধরার সুযোগ ছাড়বে না বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার।
সম্প্রতি মার্চেন্ট চেম্বারের সভায় ওই তেল প্রকল্পে অগ্রগতির দাবি করে প্রধান জানান, হলদিয়ার শোধনাগারে (ইন্ডিয়ান অয়েল) অশোকনগরে পাওয়া অশোধিত তেলের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, তার পরিমাণ ৩০ কিলোলিটার।
উপাদানের মাত্রার ভিত্তিতে এই শিল্পের পরিভাষায় অশোধিত তেল সাধারণত দু’রকমের হয়— ‘সুইট’ ও ‘সাওয়ার’। সমস্ত শোধনাগারে, বিশেষ করে পুরনো শোধনাগার হলে দু’রকম তেল থেকেই অন্যান্য জ্বালানি তৈরির ব্যবস্থা থাকে না। কোথাও প্রথমটির প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব, তো কোথাও দ্বিতীয়টির। আবার পারাদ্বীপ বা পানিপথে ইন্ডিয়ান অয়েল কিংবা জামনগরে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের আধুনিক শোধনাগারে দু’টিরই প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব। অশোকনগরের তেলের ধরন, মান ইত্যাদি নিয়ে অনুষঙ্গিক নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, কোথায় সেটির প্রক্রিয়াকরণ করা সম্ভব বোঝার জন্য।
•২০০৯ সালে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সন্ধানের জন্য অশোকনগরের ব্লকটি পায় ওএনজিসি।
• ২০১৪ সালে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ।
• দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলাকালীন তৃতীয় কুয়ো খোঁড়ার পরেই ২০১৭ সালে তেল-গ্যাসের সম্পর্কে নিশ্চিত হয় সংস্থা।
• চার একর জমিতে পাইলট প্রকল্প চলছে।
• আরও ১২ একর জমি চেয়েছে সংস্থা, বেশির ভাগই খাস জমি।
• রাজ্যের নির্দেশে জমি হস্তান্তরের প্রাথমিক কাজ শুরু জেলা প্রশাসনের।
• ক্ষতিপূরণ ও কাজের দাবিতে কিছু বিক্ষোভ হলেও, ভবিষ্যতে উন্নয়নের আশায় সার্বিক ভাবে বুক বাঁধছে গোটা এলাকা।
প্রধানের রাজ্য সফরের প্রাথমিক সূচিতে অশোকনগর কিংবা ওএনজিসির কলকাতার দফতরে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার সম্ভাবনা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে। ওএনজিসি সূত্রের অবশ্য দাবি, তারা এখনও কোনও বার্তা তেল মন্ত্রকের থেকে পায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, প্রধান রাজ্য সফরে আসার ইচ্ছার কথা নিজেই জানিয়েছিলেন। ফলে আইওসি-র অনুষ্ঠানে এলে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় উদ্যোগী হওয়ার কথা। আর তাতে যেমন প্রকল্পটি নিয়ে কেন্দ্রের উদ্যোগী হওয়ার বার্তা যাবে, তেমনই সেই সূত্রে রাজ্য বিজেপি-ও ভোটের আগে শিল্পায়নের হাওয়া তোলার সুযোগ পাবে। তা-ও আবার পশ্চিমবঙ্গের মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যে। কারণ, বাণিজ্যিক ভাবে তেলের উৎপাদন শুরু হলে তা এই এলাকাই শুধু নয়, সার্বিক ভাবে রাজ্যের আর্থিক উন্নয়নেও বিপুল গতি আনবে। যে কথা প্রধানও বলেছেন।
সংশ্লিষ্ট মহল তাই দিন গুনছে মন্ত্রীর আসার অপেক্ষায়।