—প্রতীকী চিত্র।
মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে গিয়ে নাগাড়ে সুদ বাড়াতে হয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে। তার জেরে বিপুল চড়ে গিয়েছে বাড়ি-গাড়ি কিনতে নেওয়া ধারে সুদের হার। খরচের বোঝায় ধাক্কা খাচ্ছে সাধারণ রোজগেরে মানুষের নিজস্ব আস্তানা তৈরির লক্ষ্য। এই পরিস্থিতিতে স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় মূলত শহরাঞ্চলের এমন বাসিন্দাদের জন্য নিজস্ব ঠিকানার স্বপ্ন ফেরি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘোষণা করেছিলেন, খরচের বোঝা কমাতে আবাসনের বিশেষ প্রকল্প আনবেন তাঁরা। পরে আবাসন মন্ত্রক জানায়, সুরাহা দেওয়া হবে গৃহঋণে। সোমবার সূত্রের খবর, চড়া সুদের গৃহঋণে ভর্তুকি দিতে আগামী পাঁচ বছরের জন্য ৬০ হাজার কোটি টাকা খরচ করার কথা বিবেচনা করছে কেন্দ্র। ভোটের মুখে দ্রুত এই আর্থিক সুবিধা আনার কথা ঘোষণা করা হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি সূত্রের খবর, ৯ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে সুদে ৩-৬.৫ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হতে পারে ওই প্রকল্পে। ২০ বছরের জন্য ঋণগ্রহীতারা ৫০ লক্ষ টাকার কম ধার নিয়ে থাকলে, ভর্তুকির এই সুবিধা পাবেন। গ্রাহকের ঋণ নেওয়া অ্যাকাউন্টে সরাসরি চলে যাবে ভর্তুকির টাকা। এই প্রকল্পে শহরাঞ্চলের প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা বলে মনে করা হচ্ছে।
আবাসন মন্ত্রক অবশ্য এই খবরের প্রেক্ষিতে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ব্যাঙ্কিং মহল সূত্রের খবর, সরকারের সঙ্গে ব্যাঙ্কগুলির শীঘ্রই বৈঠক হতে পারে। ব্যাঙ্কগুলিকে এখনও ঋণ দেওয়ার কোনও লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়নি। তবে তাদের একাংশ সম্ভাব্য গ্রাহকদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিশেষ সূত্র।
এই মুহূর্তে খাবার থেকে শুরু করে ওষুধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুর দাম আগের থেকে অনেকটা চড়া। তার উপরে কষ্টেসৃষ্টে ফ্ল্যাট-বাড়ি কিনেছেন, এমন বহু সাধারণ আয়ের মানুষ ঋণের খরচ চালাতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হচ্ছেন। একাংশের পক্ষে তা বয়ে নিয়ে যাওয়াই কঠিন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের মতে, আয়ের তুলনায় খরচ বেড়ে যাওয়ায় এই শ্রেণির হাতে পুঁজি কমেছে বলেই সাধ্যের আবাসনের (অ্যাফর্ডেবল হাউসিং) বিক্রি মার খাচ্ছে। ক্রেতা মহলের দাবি, মুখে না মানলেও মোদী সরকার বিলক্ষণ জানে, কিছু রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা এবং আগামী বছর লোকসভা ভোটের আগে দামের চাপ ক্ষুব্ধ আমজনতাকে তাদের প্রতি বিমুখ করতে পারে। যে কারণে ভোটের আগেই আবাসনে ভর্তুকির সুবিধা আসার সম্ভাবনা আছে। ঠিক যে ভাবে কিছু দিন আগে হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া গৃহস্থের হেঁশেলে ব্যবহারের রান্নার গ্যাসের দাম সিলিন্ডার পিছু ২০০ টাকা কমিয়ে দেওয়া হল। বিরোধীরা অবশ্য অভিযোগ তুলেছিল, গ্যাসের দাম বিপুল বাড়ানোর পরে মাত্র ২০০ টাকা কমিয়ে ভোট বাক্সে ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি। যা খয়রাতির রাজনীতি ছাড়া কিছুই নয়।
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মোদী শহরের ভাড়া বাড়ি, বেআইনি কলোনি কিংবা ঝুপড়িতে বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিজের বাড়ির সুযোগ তৈরির জন্য বিশেষ প্রকল্প আনার কথা ঘোষণা করেছিলেন। অগস্টের শেষে কেন্দ্রীয় আবাসন মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী জানান, ওই প্রকল্পের খুঁটিনাটির কাজ চলছে। সেপ্টেম্বরেই তা চালু হওয়ার আশা।