—প্রতীকী চিত্র।
পাইকারি বাজারে চাষি পণ্য বেচছেন কম দামে। কিন্তু বাজারে ক্রেতা হিসেবে জিনিসপত্র কিনতে তাঁর খরচ হচ্ছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। এটাই কি চাষির আয় দ্বিগুণ করার প্রক্রিয়া, প্রশ্ন তুলল বিরোধীরা। পাইকারি বাজারে খাদ্যপণ্য, জামা-কাপড়, তেল-রান্নার গ্যাসের মতো জ্বালানি-সহ বেশিরভাগ পণ্যের দাম কমার পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করে শুক্রবার কেন্দ্রকে বিঁধেছে কংগ্রেস। দেশের দুই বাজারে মূল্যসূচকের বিপরীত মুখ নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে। অভিযোগ করেছে, সাধারণ ক্রেতা খুচরো বাজারে পাইকারি দর কমার সুবিধা পাচ্ছেন না। সেই সুবিধা পাচ্ছে শুধু ‘সুট বুটের সরকার’ এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
কোভিডের পরে চড়া মূল্যবৃদ্ধিতে কার্যত দিশাহারা আমজনতা। অনেকেই খরচে কাটছাঁট করছেন। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যানে প্রকাশ, খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার দু’বছরের মধ্যে সবচেয়ে নীচে নেমেছে (৪.২৫%)। আর পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধি (-) ৩.৪৮%। অর্থাৎ পণ্যের দাম কমেছে বা মূল্যহ্রাস। মূলত খাদ্যপণ্য, অশোধিত তেল-সহ জ্বালানি ইত্যাদির পাইকারি দর কমাই তার মূল কারণ।
কংগ্রেসের মুখপাত্র গৌরব বল্লভের বক্তব্য, মে মাসে পাইকারি বাজারে মূল্যহ্রাস হলেও খুচরো বাজারে খাদ্য ও পানীয়ের দাম বেড়েছে ৩.২৯%। একই ভাবে অশোধিত তেল, রান্নার গ্যাস, পেট্রল, ডিজ়েলের পাইকারি দাম শূন্যের নীচে নেমেছে। কিন্তু খুচরো বাজারে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৪.৬৪%। পোশাকের পাইকারি দাম সামান্য বাড়লেও, জামাকাপড় ও জুতোর খুচরো বাজারে দাম বেড়েছে ৬ শতাংশেরও বেশি। তাঁর প্রশ্ন, বেশিরভাগ নিত্যব্যাবহার্য পণ্যের পাইকারি দাম কমার সুবিধা কেন খুচরোর বাজারের মূল ক্রেতাকে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না? তাঁদের দাবি, পাইকারি বাজারে চাষির পণ্য দাম কমে যাওয়া মানে চাষিরা কম দামে বাজারে তাঁদের পণ্য বিক্রি করলেও নিজেদের ব্যবহারের জন্য খুচরো বাজারে কিনতে গিয়ে মূল্যবৃদ্ধির কবলে পড়ছেন। একই ভাবে অশোধিত তেল থেকে অন্যান্য জ্বালানির দাম পাইকারি বাজারে কমলেও খুচরো বাজারে রান্নার গ্যাস, পেট্রল ডিজ়েলের দাম কমেনি। তার মানে কী মূল্যহ্রাসের পুরো সুবিধা উপভোগ করছে সরকার? কেন সাধারণ ক্রেতা তা পাচ্ছেন না, কেন ‘সুট বুটের সরকার নীরব দর্শক হয়ে বসে, প্রশ্ন তুলেছেন গৌরব।
তবে কেন্দ্র আগেই মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ পড়ার ছবি তুলে ধরতে সচেষ্ট। তেমনই আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনের আগে মধ্যবিত্তের খাবারের থালায় যাতে দামের ছেঁকা না লাগে, তা-ও যে তাদের মাথাব্যাথার কারণ, তা স্পষ্ট হয়েছে অতি সম্প্রতি। চাল, গম, ডাল — এ সবের দাম যাতে না বাড়ে, সে জন্য কেন্দ্রের শীর্ষস্তর থেকে খাদ্য ও উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রকের কাছে নির্দেশ গিয়েছে। পাশাপাশি, গমের দাম বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্র যেমন মজুতের উপরে ঊর্ধ্বসীমা জারি করেছে, তেমনই জোগান বাড়িয়ে দাম কমানোর লক্ষ্যে রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছেন খোদ খাদ্য সচিবও।
তবে আগামী দিনে বাস্তবে হাটে-বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়ে সাধারণ ক্রেতা কতটা সুফল পান, সেটাই এখন দেখার।