প্রস্তুতি: জিএসটি রূপায়ণের কাজ কত দূর, দিন কয়েক আগেই তার পর্যালোচনা সারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই বৈঠকে তাঁর সঙ্গে রাজস্ব সচিব হাসমুখ আঢিয়া, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। পিটিআইয়ের ফাইল চিত্র
আগামী ১ জুলাই থেকে জিএসটি চালুর লক্ষ্যে শেষ বেলার প্রস্তুতি ঝালিয়ে নিতে চায় কেন্দ্র। আর অনেক রাজ্য চায় করের হার নিয়ে ব্যবসায়ী ও শিল্পমহলের ওজর-আপত্তি ‘দিল্লির দরবারে’ তুলে ধরতে। এই পরিস্থিতিতে রবিবার বৈঠকে বসছে জিএসটি পরিষদ। সব কিছু ঠিকঠাক চললে, ১ জুলাই জিএসটি চালু হওয়ার আগে যা পরিষদের শেষ বৈঠক হওয়ার কথা।
সরকারি সূত্রের খবর, আলোচনায় যোগ দিতে দিল্লি যাচ্ছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। জিএসটি বিল এখনও বিধানসভায় পাশ করেনি পশ্চিমবঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর অর্থমন্ত্রী গত কয়েক সপ্তাহে বারবার বলেছেন যে, এখনও জিএসটি চালুর জন্য পুরোদস্তুর তৈরি নন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে আলোচনার টেবিলে অমিতবাবুর অবস্থান কী হয়, সে দিকে নজর রয়েছে সকলের।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, রাজ্যের কথায় গুরুত্ব দিয়ে পরিষদ যে-ভাবে সোনা, বস্ত্রশিল্পে জিএসটির হার কম রেখেছে, তাতে অমিতবাবু খুশি। রবিবারের বৈঠকে সিনেমার টিকিটে ২৮% কর চাপানোর প্রস্তাবেও আপত্তি তুলবেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, এতে বিশেষ করে বিপদে পড়বে বাংলার মতো আঞ্চলিক সিনেমা।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের খবর, এ দিন ওই প্রস্তাবিত ২৮% কর নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন বাংলা সিনেমার প্রথম সারির অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজকরা। এমনকী এ নিয়ে এক দিনের প্রতীকী ধর্মঘট ডাকার কথাও বলেছেন তাঁরা। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতে, এ ভাবে কোনও আলোচনা ছাড়া জিএসটি চালু করা ঠিক নয়। এর আগে ওই চড়া কর-প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন দক্ষিণী নায়ক কমল হাসনও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ৩ জুন পরিষদের বৈঠকের পরে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের বলা হয়েছিল, নিজের-নিজের রাজ্যে ফিরে গিয়ে ব্যবসায়ী ও শিল্পমহলের (বিশেষত ছোট-মাঝারি) প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলতে। যাতে তাঁদের সুবিধা-অসুবিধা-আপত্তি-আশঙ্কার কথা রবিবারের বৈঠকে তুলে ধরতে পারেন তাঁরা। ফলে অনেক অর্থমন্ত্রী হয়তো করের বিভিন্ন হার নিয়ে আপত্তির কথা তুলতে পারেন।
আলোচনা হওয়ার কথা শেষ বেলার প্রস্তুতি নিয়েও। পশ্চিমবঙ্গের দাবি, নতুন কর ব্যবস্থা চালুর পরিকাঠামো এখনও পুরোদস্তুর তৈরি নয়। এর জন্য তৈরি নয় শিল্পমহলও। বিশেষত সাধারণ ব্যবসায়ী ও ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলি। উল্টো দিকে, কেন্দ্র বলছে, ১ জুলাই থেকে জিএসটি চালু করতে তারা বদ্ধপরিকর এবং পুরোদস্তুর তৈরি। যাতে তা মসৃণ ভাবে করা সম্ভব হয়, সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে চাইছে তারা। তাই এ দিনের বৈঠকে এ প্রসঙ্গ ওঠাও প্রত্যাশিত।
জিএসটি চালুর দিন আর মাত্র সপ্তাহ তিনেক দূরে হলেও, এখনও সেই সংক্রান্ত বিল বিধানসভায় পাশ করায়নি এ রাজ্য। ফলে ১ জুলাইয়ে বাকি দেশে চালু হওয়া সত্ত্বেও এখানে তা না-হওয়ার সম্ভাবনা কতখানি, তা নিয়ে চিন্তিত ব্যবসায়ীরা।
বিশেষজ্ঞদের অনেকে অবশ্য বলছেন, নিশ্চয়ই এ বিষয়ে বিকল্প রাস্তা ভেবে রেখেছে রাজ্য। কারণ, খাতায়-কলমে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্য ভ্যাট-সহ পুরনো কর আদায় করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিস্তর।
অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, সত্যিই যদি ১ জুলাই জিএসটি চালু হয় আর রাজ্য তা না-মানে, সে ক্ষেত্রে এখানে পণ্য-পরিষেবা কেনা-বেচা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। তাঁদের যুক্তি, তখন অন্য রাজ্যে পণ্য তৈরি করা কোনও সংস্থা পশ্চিমবঙ্গে তা বিক্রি করতে এলে এখানকার ডিলার সেটি কিনতে সমস্যায় পড়বেন। আবার তেমনই এখানকার সংস্থা ভিন্ রাজ্যে পণ্য বেচতে গেলে মুশকিল হবে সেই লেনদেনে ‘ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট’ (আগের স্তর পর্যন্ত আগেই মেটানো করের টাকা ফেরত) পাওয়া নিয়ে।
কৃষিপণ্য ছাড়া যত জিনিসপত্র পশ্চিমবঙ্গে কেনা-বেচা হয়, তার ৮০-৯০ শতাংশই আসে ভিন্ রাজ্য থেকে। ফলে বাকি দেশে জিএসটি চালু হয়েছে কিন্তু এ রাজ্য মানেনি, এমন হলে এখানে বিক্রিবাটায় প্রায় তালা পড়ে যাওয়ার কথা। ক্ষতি হবে রাজস্বেরও। এতখানি ঝুঁকি শেষ পর্যন্ত রাজ্য নেবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। যদিও শেষমেশ কী হবে, তা পুরোটাই নির্ভর করছে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে ভাবনা-চিন্তার উপর।