—ফাইল চিত্র।
গত বছর যে-তারিখে হয়েছিল, এ বারও দেশ জুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক ঠিক সেই দিনেই। ২ সেপ্টেম্বর। তা এড়াতে ইতিমধ্যেই কোমর বেঁধে নেমেছে কেন্দ্র।
সোমবার এ নিয়ে বৈঠকে বসেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সব কিছু সত্ত্বেও অন্তত এখনও পর্যন্ত ধর্মঘট থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনও ইঙ্গিত দেয়নি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি। শেষ পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে, এই ধর্মঘটে ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা, কারখানা, পরিবহণ সমেত অর্থনীতির প্রায় সব ক্ষেত্রেই কাজ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা। যদিও শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ধর্মঘটের বিরোধিতা করায় এ রাজ্যে তা কতখানি সফল হবে, সে প্রশ্ন থাকছে।
একগুচ্ছ দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রায় প্রতি বছরই দেশ জুড়ে সাধারণ ধর্মঘট ডাকে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি। বছরের পর বছর অনেক দাবি একও থাকে। শিল্পমহলের এক বড় অংশের তাই প্রশ্ন, কী লাভ হয় এমন কর্মনাশা ধর্মঘটে?
বণিকসভা সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ধর্মঘট সমস্যার সমাধান নয়। এতে সমাজের সব স্তরের মানুষের ক্ষতি। ধাক্কা অর্থনীতিতেও।’’ এর থেকে বরং কথা বলে সমাধান খোঁজার পক্ষপাতী তিনি। অম্বুজা নেওটিয়া গোষ্ঠীর কর্ণধার হর্ষ নেওটিয়ার মতেও, আগে অন্তত আলোচনার রাস্তা খোঁজা জরুরি। তিনি বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, ধর্মঘট বা বন্ধে সকলেরই সমস্যা।’’ অনেকের আশঙ্কা, বিশেষত ধাক্কা খাবে ব্যাঙ্ক, বিমার মতো আর্থিক পরিষেবা। যেখানে বাম ইউনিয়নগুলির রমরমা।
সিটুর অন্যতম সম্পাদক দেবাঞ্জন চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, ‘‘আন্দোলনের মাধ্যমে বহু দাবি আদায় করেছি।’’ দীর্ঘকাল একই দাবিতে সরব থাকার পক্ষে তাঁর যুক্তি, তা করা হয় লাগাতার আন্দোলনের প্রয়োজনে।
অর্থনীতির উপর আঘাত আসা রুখতে ধর্মঘট আটকানোর শেষ চেষ্টায় নেমেছে কেন্দ্র। এ দিন এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, বিদ্যুৎ ও কয়লামন্ত্রী পীযূষ গয়াল ও শ্রমমন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয়। গত সপ্তাহেও শ্রমিক সংগঠনগুলিকে ধর্মঘট থেকে সরে আসার আবেদন জানিয়েছিলেন দত্তাত্রেয়। মোদীও চান, গরিব মানুষের কল্যাণে তাঁর সরকার যে-সমস্ত পদক্ষেপ করছে, সেগুলির আরও প্রচার হোক। কিন্তু সমস্ত কিছু সত্ত্বেও ধর্মঘট থেকে সরে আসার কোনও লক্ষণ বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা এখনও দেখাননি।
বরং সমস্যা আরও জটিল হতে পারে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল তাঁর রাজ্যের জন্য নতুন ন্যূনতম মজুরির হার ঘোষণা করায়। যা কেন্দ্রের বর্তমান ন্যূনতম মজুরির প্রায় দ্বিগুণ। এই সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কাছে পাঠানোও হয়েছে। এআইইউটিইউসির সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর সাহার কথায়, শেষমেশ প্রস্তাব অনুমোদিত হয় কি না, সে দিকেই তাকিয়ে তাঁরা।
বিএমএস-এর সভাপতি বৈজনাথ রায় বলেন, কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সরকার ফয়সালার ব্যাপারে কিছু ঘোষণা না-করলে তারা ধর্মঘটে সামিল হবেন। দাবি না-মানলে একই পথে হাঁটার কথা জানিয়েছেন আইএনটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি রমেন পান্ডেও। এআইবিইএ-র সভাপতি রাজেন নাগরের দাবি, ধর্মঘটের আওতায় আছে সব ব্যাঙ্ক। অল ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সমীর ঘোষ বলেন, ধর্মঘট হবে শীর্ষ ব্যাঙ্কের সমস্ত দফতরে।
এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপে শেষ মুহূর্তে কোনও রফাসূত্র বেরোয় কি না, সকলের নজর আপাতত সে দিকেই।
তথ্য সহায়তা: প্রেমাংশু চৌধুরী ও দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত