অনাদায়ী ঋণের সমস্যায় দ্রুত রাশ টানা যাবে বলে হালে বারবার আশা প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। কিন্তু সেই আলোর দেখা পাওয়া এখনও দূর অস্ত্ বলেই ধারণা ব্যাঙ্কিং শিল্পের। বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির। তাদের ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকের ফলাফলে স্পষ্ট যে, বেশিরভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেরই লোকসান বাড়ার অন্যতম কারণ অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে উদ্বেগ বাড়িয়েছে বন্ডের বাজারের ক্ষতিও। সব মিলিয়ে যা অবস্থা, তাতে অনাদায়ী ঋণের পরিস্থিতি শোধরাতে বছর দেড়-দুই লেগে যাওয়ার আশঙ্কা করছে তারা।
এই অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ২,৪১৬ কোটি টাকা লোকসান করেছে স্টেট ব্যাঙ্ক। দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান রজনীশ কুমারের আশঙ্কা, জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে অনুৎপাদক সম্পদের হাল আরও খারপ হতে পারে! অর্থাৎ, সে জন্য সংস্থান হিসেবে আরও বেশি অঙ্ক তুলে রাখতে হতে পারে তাদের।
স্টেট ব্যাঙ্কের বেঙ্গল সার্কলের চিফ জেনারেল ম্যানেজার পার্থপ্রতিম সেনগুপ্তের আবার দাবি, ‘‘আমাদের লোকসানের অন্যতম কারণ বন্ডে লগ্নি থেকে লোকসান।’’ এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞ বি কে দত্ত বলেন, ‘‘অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে শেয়ার বাজার তেজি ছিল। তাই তুলনায় বন্ডের বাজার ছিল মন্দা। সেখানে লেনদেন করে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের যা ক্ষতি হয়েছে, সেই বাবদ আর্থিক সংস্থানও করতে হয়েছে তাদের। লোকসান বাড়ার সেটিও কারণ।’’
আরও পড়ুন: শিল্প বৃদ্ধি ৭.১%, স্বস্তি খুচরো দরেও
তবে ক্ষতির মূল কারণ যে অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ) বৃদ্ধি, তা মানছে প্রায় সমস্ত ব্যাঙ্কই। ইউকো ব্যাঙ্কের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর চরণ সিংহ বলেন, ‘‘অর্থনীতির হাল যত দিন না ফিরছে, তত দিন অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা মেটা কঠিন।’’ তাঁর আশা, বছর খানেকে চাকা ঘুরতে পারে।
লোকসান কেন?
• পুরনো ধার শোধ করতে হিমশিম বহু সংস্থা। তার একটি অংশ পরিণত হচ্ছে অনুৎপাদক সম্পদে
• অর্থনীতি পুরোদস্তুর মুখ তোলেনি এখনও। তাই অনাদায়ী ঋণ বাড়ছে নতুন করে
• ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ডের বাজার ছিল মন্দা। সমস্যা বেড়েছে সেখানে হওয়া লোকসান খাতে টাকা তুলে রাখতে গিয়েও
• সংস্থান করতে হচ্ছে ট্রাইব্যুনালে যাওয়া সংস্থার ঋণের জন্যও
বি কে দত্ত বলেন, ‘‘পুরনো ঋণই বেশি করে অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হচ্ছে। অনেক সংস্থাই আগে নেওয়া ধার শোধ করতে পারেনি।’’ তাঁর মতে, অনুৎপাদক সম্পদ বৃদ্ধির সেটি একটি কারণ।
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সংগঠন আইবিএ এবং বণিকসভা ফিকি-র যৌথ সমীক্ষা অনুযায়ী, তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ৫৮% ব্যাঙ্কেরই অনুৎপাদক সম্পদ বেড়েছে। তা ছাড়া, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, যত ঋণ আদায় হচ্ছে, নতুন করে এনপিএ তৈরি হচ্ছে তার কয়েক গুণ বেশি। স্টেট ব্যাঙ্কেই নতুন করে ২৫ হাজার কোটি ঋণ এনপিএ হয়েছে। সংস্থা দেউলিয়া আইনে ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনালে গেলে, ঋণের ৫০% সংস্থান করতে হচ্ছে তার জন্যও। সংস্থা গোটানোর রায় হলে, সেই সংস্থান ১০০%। এনপিএ বৃদ্ধির সেটিও কারণ।