এ বার উদ্বৃত্ত জমি বিক্রির পথে হেঁটে রাষ্ট্রায়ত্ত বার্ন স্ট্যান্ডার্ডকে চাঙ্গা করার পরিকল্পনা পেশ করেছেন কর্তৃপক্ষ। যা রেল মন্ত্রকের অনুমোদিত হলে তিন বছরে সংস্থার হাল ফেরার কথা।
সংস্থাটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে এই নিয়ে গত ১৭ বছরে তৃতীয় বার পরিকল্পনা তৈরি হল। তবে এ বারের প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য হল, পুনরুজ্জীবনের অর্থ পেতে কেন্দ্র বা রেল মন্ত্রকের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চায় না সংস্থা। কর্তৃপক্ষ ২৫৩ কোটি টাকার পরিকল্পনা তৈরি করে জমা দিয়েছেন রেল মন্ত্রকের কাছে, যা সংস্থা নিজেই জোগাবে উদ্বৃত্ত জমি বিক্রি করে। উল্লেখ্য, ওয়াগন তৈরিতে দেশের বৃহত্তম সংস্থাটিকে ২০১০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তদানীন্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রুগ্ণ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রকের হাত থেকে রেল মন্ত্রকের অধীনে নিয়ে আসেন। সংস্থার চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম এ আলম বলেন, ‘‘মাসখানেকের মধ্যেই প্রকল্পটি রেল মন্ত্রকের অনুমোদন পাবে বলে আশা।’’
কী ভাবে ওই ২৫৩ কোটি টাকার ব্যবস্থা করা হবে? আলম বলেন, ‘‘অব্যবহৃত অবস্থায় বিভিন্ন অঞ্চলে পড়ে থাকা সংস্থার ৩৫০ একর জমি আমরা চিহ্নিত করেছি। কারখানা বা উৎপাদনে কোনও রকম ব্যাঘাত না- ঘটিয়েই ওই জমি বিক্রি করা সম্ভব। তা থেকে কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। যা দিয়ে পুনরুজ্জীবন প্রকল্পটি কার্যকর করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।’’
নতুন মোড়
• প্রকল্প ২৫৩ কোটি টাকার
•
টাকা দিতে হবে না রেল মন্ত্রক বা কেন্দ্রকে
•
সংস্থান সংস্থার জমি বিক্রি খাতে আসা তহবিল থেকে
•
ধাপে ধাপে মেটানো হবে কর্মীদের প্রাপ্য, পাওনাদারদের বকেয়া ও বাকি পড়া কর
আলম বলেন, আগের প্রকল্পগুলিতে সংস্থাটিকে চাঙ্গা করে তোলার জন্য হয় কেন্দ্র অথবা রেল মন্ত্রককে টাকার সংস্থান করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এ বার টাকার সংস্থান করবে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড নিজেই। তাই তাঁর আশা, মাসখানেকের মধ্যেই প্রকল্পটি অমুমোদন করবে রেল মন্ত্রক। আলম জানান, পুনরুজ্জীবন প্রকল্পে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে তিনটি বিষয়কে।
প্রথমত, রয়েছে কর্মীদের বকেয়া ও প্রাপ্য মেটানোর বিষয়টি। সংস্থার কর্মীরা ১৯৯৭ সালের বেতন কাঠামো পাচ্ছেন। প্রকল্পে ২০০৭ সালের বেতন কাঠামো দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। বর্তমানে বার্ন স্ট্যান্ডার্ডে ১৬৩০ জন কর্মী কাজ করেন। এর মধ্যে ৫৩০ জন স্থায়ী কর্মী। বাকিরা ঠিকাদারের।
দ্বিতীয়ত, কর্মীদের প্রাপ্য মেটানোর পরে মেটানো হবে পাওনাদারদের বকেয়া।
তৃতীয়ত, মেটানো হবে বিভিন্ন ধরনের বকেয়া কর।
এই তিনটি খাতে ১০০ কোটি টাকার মতো খরচ করা হবে বলে প্রকল্পে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৭০ কোটি টাকা যন্ত্রপাতি কেনা এবং কার্যকরী মূলধন খাতে খরচ করা হবে।
রুগ্ণ হয়ে যাওয়ার পরে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড ১৯৯৪ সালের নভেম্বর মাসে বিআইএফআরে যায়। এরপর ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে একটি পুনরুজ্জীবন প্রকল্প বিআইএফআর অনুমোদন করে। কাজও শুরু হয়। কিন্তু ২০০১ সালে প্রকল্পটির রূপায়ণ সম্ভব নয় বলে ঘোষণা করা হয়। এর পর ২০১৬ সালেও একটি পুনরুজ্জীবন প্রকল্প বিআইএফআরে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পটিতে কর্মীরা-সহ সমস্ত পক্ষের সায় না-পাওয়ায় সেটি খারিজ করে বিআইএফআর।
এ দিকে শুধু নতুন বেতনক্রম চালুই নয়, অবসরপ্রাপ্ত এবং অন্য কর্মীদের সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড এক্স-অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি অনুতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘১৮০ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী শুধু প্রভিডেন্ট ফান্ড ছাড়া অন্য কোনও বকেয়া টাকা পাননি।’’