প্রতীকী ছবি।
দেশের পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য আগামী অর্থবর্ষে মূলধনী খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ৫.৫৪ লক্ষ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তিনি জানিয়েছেন, গত অর্থবর্ষের তুলনায় এই খাতে ব্যয় ৩৪.৫ শতাংশ বাড়াতে চায় কেন্দ্র। এ দিন বাজেট বক্তৃতায় ‘ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার পাইপলাইন’-এর লক্ষ্যপূরণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি ও সম্পদ থেকে আয়ের উপরে জোর দেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৯-এর ডিসেম্বরে ‘ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার পাইপলাইন’-এর অধীনে ৬,৮৩৫টি প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। এখন সেই প্রকল্পের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭,৪০০টিতে। ১.১০ লক্ষ কোটি অর্থমূল্যের ২১৭টি প্রকল্পের কাজ শেষ।
নির্মলা জানান, ‘ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার পাইপলাইন’-এর লক্ষ্যপূরণে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে জন্য সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে অর্থের জোগান বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘‘বাজেটে আমি এই লক্ষ্যপূরণের জন্য তিনটি পথে এগোতে চাই। প্রথমত, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করে। দ্বিতীয়ত, সম্পদ থেকে আয়ের উপরে জোর দিয়ে। তৃতীয়ত, কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির বাজেটে মূলধনী খাতে ব্যয় বাড়িয়ে।’’
অর্থমন্ত্রী জানান, একটি উন্নয়ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান (ডেভেলপমেন্ট ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন) তৈরির জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তিন বছরের মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানের হাতে ৫ লক্ষ কোটি টাকার তহবিল তৈরি করতে চায় কেন্দ্র। ওই প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য শীঘ্রই একটি বিল আনা হবে।
‘ন্যাশনাল মানিটাইজ়েশন পাইপলাইন’ প্রকল্পও ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী। জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের চালু সম্পদ থেকে আয় বাড়ানোর উপরে জোর দিতে চাইছে সরকার। কোন কোন সম্পদ থেকে আয় বাড়ানোর কাজ কতটা এগিয়েছে তা লগ্নিকারীদের জানাতে হিসেব তৈরি রাখা হবে।
অর্থমন্ত্রী জানান, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ও পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন একটি করে পরিকাঠামো বিনিয়োগ তহবিল (ইনভেস্টেমেন্ট ট্রাস্ট) তৈরি করেছে। তাতে দেশ ও বিদেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা লগ্নি করবেন। ৫ হাজার কোটি টাকা আয় হতে পারে এমন পাঁচটি চালু রাস্তা ও ৭ হাজার কোটি টাকা আয় হতে পারে এমন বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিকাঠামো ওই তহবিলগুলির অধীনে নিয়ে আসা হবে। ‘ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর’ তৈরি হলে রেল সেগুলিকে আয় বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করবে। পরের দফায় যে বিমানবন্দরগুলি তৈরি হবে সেগুলি থেকেও আয়ের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়াও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের টোল বুথ, তেল ও গ্যাসের পাইপলাইন, ‘টিয়ার টু’ ও ‘টিয়ার থ্রি’ স্তরের শহরের বিমানবন্দর, রেলের অন্য পরিকাঠামো, ‘সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউজ়িং কর্পোরেশন’ ও ‘নাফেড’-এর গুদাম থেকেও আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে।
অর্থমন্ত্রী জানান, ‘ভারতমালা পরিযোজনা’-র অধীনে ৩.৩ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরির বরাত ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৩,৮০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়েছে। ২০৩০-এর মধ্যে উপযোগী রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে ‘ন্যাশনাল রেল প্ল্যান ফর ইন্ডিয়া-২০২০’ তৈরি করেছে রেল। শহরে বাস পরিষেবা বাড়াতে বরাদ্দ হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য পাঁচ বছরে ৩,০৫,৯৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে।
অর্থমন্ত্রী জানান, মূল বন্দরগুলি পরিচালনার ভার বেসরকারি সংস্থার হাতে ছাড়া হবে। সে জন্য ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ‘পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ’-এর পথে ২ হাজার কোটি টাকা অর্থমূল্যের সাতটি প্রকল্পের বরাত দেবে মূল বন্দরগুলি।
অনেকের প্রশ্ন, পরিকাঠামো খাতে এই বিপুল ব্যয়ের জন্য সরকার টাকা পাবে কোন উৎস থেকে? চলতি অর্থবর্ষে রাজকোষ ঘাটতি ৯.৫ শতাংশে পৌঁছেছে। সরকার মেনে নিয়েছে, আগামী অর্থবর্ষে বাজার থেকে তাদের ১২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, সরকার অনেক ক্ষেত্রেই বেসরকারি সংস্থার উপরে নির্ভর করতে চাইছে। কিন্তু অর্থনীতির চলতি পরিস্থিতিতে বেসরকারি সংস্থা পরিকাঠামোয় এত লগ্নি করতে চাইবে কি? কারণ, এই ক্ষেত্রে লগ্নির ফল পেতে সময় বেশি লাগে।