এ যেন উলট্পুরাণ।
আনুগত্যের স্বীকৃতি হিসেবে বাড়তি সুবিধা দিয়ে গ্রাহক ধরে রাখা আধুনিক বিপণনের চেনা কৌশল। কিন্তু মূলত ল্যান্ডলাইন গ্রাহক ধরে রাখতে ইতিমধ্যেই সে পথে হেঁটেও পেশাদারি মনোভাবের অভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত বিএসনএল তেমন সাফল্য ছুঁতে পারছে না বলেই প্রকল্পটির যৌক্তিকতা নিয়ে এ বার প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
সংস্থা সূত্রে খবর, ল্যান্ডলাইন ও ব্রডব্যান্ড গ্রাহকদের জন্য ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে বিশেষ ‘লয়্যালটি পয়েন্ট’ পরিষেবা চালু করেছিল বিএসএনএল। সেই পয়েন্ট ভাঙিয়ে পরে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে সংস্থারই অন্য নম্বরে নিখরচায় ফোন করার সুযোগ দিয়েছিল তারা।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, তাতে তেমন সাড়া মিলল কোথায়?
রাজ্যে তাদের প্রায় ১০ লক্ষ গ্রাহকের মধ্যে হাজার জনও সেই সুবিধা নেননি। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, পেশাদার মনোভাবের অভাবেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি বিপণন কৌশলের এই সুযোগকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ। সুযোগটি সম্পর্কে গ্রাহকদের সচেতন করায় খামতি থাকছে কি না, উঠছে সে প্রশ্নও। বস্তুত, মোবাইল ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে ও ল্যান্ডলাইন গ্রাহক সংখ্যা হু হু করে কমে যাওয়া ঠেকাতেই এই প্রকল্প চালু হয়।
নিয়ম অনুযায়ী, মাসিক বিল ৪০০ টাকা বা তার বেশি হলে অথবা প্রতি দু’মাসে ৮০০ টাকা বা তার বেশি হলে এবং নির্দিষ্ট তারিখের আগে তা মেটালে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক লয়্যালটি পয়েন্ট পাওয়ার যোগ্য। পয়েন্টের সংখ্যা বিলে উল্লেখ থাকে। তা শর্তসাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময় পরে ভাঙানো যায়। প্রতিটি পয়েন্টের বিনিময়ে মেলে অন্য একটি বিএসএনএল নম্বরে (ল্যান্ডলাইন বা মোবাইল) একটি করে নিখরচায় কল করার সুযোগ। এ ভাবে ন্যূনতম ৫০ পয়েন্ট থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ পয়েন্ট (২৫-এর গুণিতকে) ভাঙানো যায়। অর্থাৎ, কেউ ৭৫ পয়েন্ট ভাঙালে নিখরচায় ৭৫টি কল করতে পারবেন। সংস্থার কর্তারা জানিয়েছেন, ভাঙানোর যোগ্য পয়েন্ট-গুলির পুরোটা একেবারে বা আংশিক ভাবে ভাঙাতে পারেন গ্রাহক। তবে ভাঙানো পয়েন্ট পরের বিল চক্রের (সাইক্ল) আগেই খরচ করতে হবে। পরের বিলে সেটি যোগ হবে না।
সংস্থা সূত্রের খবর, ক্যালকাটা টেলিফোন্সের প্রায় ৬.৫ লক্ষ গ্রাহকের মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ৬৬০ জন এই সুযোগ নিয়েছেন ১১০০ বার। অর্থাৎ, অনেকেই একাধিক বার লয়্যালটি পয়েন্ট ভাঙিয়েছেন। অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলে গ্রাহক প্রায় ৩.৫ লক্ষ। তার মধ্যে ২৭০ জন সুযোগ নিয়েছেন ২৯৯ বার। যদিও ওই সার্কেলে এই সুযোগ নেওয়ার যোগ্য প্রায় ১.৪২ লক্ষ জন।
বাড়তি সুবিধা দিয়েও সাড়া মিলছে না কেন? সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, গোড়ায় কিছু প্রচার হলেও পরে তেমন হয়নি। ফলে গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা কম। আবার অনেকেই মনে করেন সুবিধা চাওয়ার প্রক্রিয়াটিও সহজ নয়। বিএসএনএলের সব গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে সব তথ্য সব সময়ে মেলে না। তেমনই নিখরচায় ফোনের সুযোগ শুধুমাত্র বিএসএনএল নম্বরেই মেলায় অনেকেই এ নিয়ে আগ্রহী হন না।
প্রচার বা সচেতনতার অভাবের কথা মানছেন ক্যালকাটা টেলিফোন্সের প্রিন্সিপ্যাল জেনারেল ম্যানেজার অপূর্ব কুমার কুণ্ডু ও বিএসএনএল-এর ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং) অসীম কুমার সিন্হাও। তবে অসীমবাবুর দাবি, যেহেতু এখন রাত ৯টা থেকে পর দিন সকাল পর্যন্ত বিএসনএলের ল্যান্ডলাইন ফোন থেকে অন্য যে কোনও ফোনে (বিএসএনএল বা অন্য সংস্থা) বিনামূল্যে ফোন করা যায়, তাই হয়তো লয়্যালটি পয়েন্টের জন্য আলাদা করে আবেদন জানাতে চান না অনেকেই। যদিও লয়্যালটি পয়েন্ট-এর আওতায় সুবিধা দিন-রাত সব সময়েই মেলে।
তবে সব মিলিয়ে সুবিধা দিয়েও গ্রাহকের কাছে পৌঁছতে এখনও বহু যোজন দূরেই বিএসএনএল।