বিক্ষোভ: বুধবার বিবাদী বাগে বিএসএনএল কর্মীদের সভা।
হুঁশিয়ারি ছিলই। এ বার বিএসএনএলের কর্মী ইউনিয়নগুলি স্পষ্ট জানিয়ে দিল, এই রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থাকে ৪জি স্পেকট্রাম দেওয়া না হলে ৩ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট করবে তারা। শুধু তা-ই নয়, সমস্ত সরকারি প্রকল্পের কাজও বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইউনিয়নগুলি। কর্মীরা ধর্মঘট করলে গ্রাহক পরিষেবা ব্যাপক ভাবে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা।
৪জি পরিষেবার মাধ্যমে চুটিয়ে ব্যবসা করছে বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলি। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিএসএনএলের হাতেই ৪জি স্পেকট্রাম নেই। এই অবস্থায় সংস্থাটির ইউনিয়নগুলির অভিযোগ, সরকারের কাছে বহু বার দাবিদাওয়া জানিয়ে কাজ হয়নি। একই সঙ্গে রয়েছে বেতন কাঠামো সংস্কারের দাবিও।
বুধবার নয়াদিল্লিতে অল ইউনিয়ন্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন্স অব বিএসএনএলের (এইউএবি) বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কেন্দ্র দাবি না মানলে ৩ ডিসেম্বর থেকে ধর্মঘট করবে তারা। অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে পঞ্চায়েত স্তরে দ্রুত গতির ব্রডব্যান্ড পরিষেবা চালুর মতো সরকারি প্রকল্পের কাজও বয়কট করা হবে।
দৌড়ে পিছিয়ে
• সমস্ত বেসরকারি সংস্থা ৪জি পরিষেবা দিলেও খোদ রাষ্ট্রায়ত্ত বিএসএনএলের হাতেই নেই সেই স্পেকট্রাম। ফলে প্রতিযোগিতায় ধাক্কা খেতে হচ্ছে সংস্থাটিকে।
• ইউনিয়নের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে কেন্দ্র আশ্বাস দিলেও এখনও স্পেকট্রাম দেওয়া হয়নি।
কর্মীদের দাবি
• যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ৪জি স্পেকট্রাম দিতে হবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটিকে।
• চালু করতে হবে সংশোধিত বেতন কাঠামো।
না হলে...
• ৩ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে বিএসএনএলের ইউনিয়নগুলি।
• দেওয়া হয়েছে সরকারি প্রকল্পগুলি বয়কট করার হুঁশিয়ারি। যা অনেকের চোখে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
আশঙ্কা
• টেলিকম পরিষেবার বড় অংশই
এখন স্বয়ংক্রিয়। কিন্তু কর্মীরা কাজ না করলে ব্যাহত হতে পারে পরিকাঠামো (বিটিএস, সুইচ ইত্যাদি) রক্ষণাবেক্ষণ। যার জেরে বিঘ্ন হতে পারে পরিষেবায়।
• গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রগুলিতেও যদি কাজ ব্যাহত হয়, তা হলে বিল জমা নেওয়া-সহ একাধিক পরিষেবা
থমকে যেতে পারে।
ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, ৩ ডিসেম্বরের আগে ইউনিয়নগুলির সঙ্গে কেন্দ্র কোনও বোঝাপড়ায় পৌঁছতে পারে কি না, তা পরের প্রশ্ন। কিন্তু একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ইউনিয়নের সরকারি প্রকল্পই বয়কটের হুঁশিয়ারি কার্যত নজিরবিহীন। বুধবার কলকাতা-সহ বিভিন্ন সার্কলে বিক্ষোভ পদযাত্রাও করেছেন সংস্থার কর্মীরা।
তবে বিএসএনএলের কর্মীরা যদি সত্যিই ধর্মঘটের পথে হাঁটেন, তা হলে গ্রাহক পরিষেবা বিঘ্নিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞ মহলের বক্তব্য, টেলিকম ক্ষেত্রের পরিষেবা এখন অনেকটাই স্বয়ংক্রিয়। কিন্তু তা হলেও পরিকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের দৈনন্দিন পরিষেবা ব্যাহত হবে। বিঘ্নিত হতে পারে গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রগুলিতে বিল কিংবা অভিযোগ জমা নেওয়ার ব্যবস্থাও। দেরি হতে পারে ব্রডব্যান্ড বা ল্যান্ডলাইন সারানোতেও। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, স্পেকট্রামের দাবিতে ধর্মঘট করলে উল্টে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি বাজার হারাবে না তো? নষ্ট হবে না তো বিএসএনএলের ভাবমূর্তি?
এইউএবির রাজ্য আহ্বায়ক অনিমেষ মিত্র জানিয়েছেন, পরিষেবার কোনও অংশ ধর্মঘটের আওতার বাইরে রাখা হবে কি না, সে ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি তিনি। অনিমেষবাবুর বক্তব্য, তাঁরা ধর্মঘটের পথে যেতে চাননি। কেন্দ্রীয় সরকারই কর্মীদের এই পথে যেতে বাধ্য করেছে।