প্রতীকী ছবি।
গুজরাতি নববর্ষ সম্বৎ ২০৭৮-এর শুরুটা হয়েছে বেশ ভাল। প্রায় ৩০০ পয়েন্ট বেড়ে সেনসেক্স ফের ৬০ হাজার পার করেছে। কিন্তু সারা বছরটা যে ২০৭৭-এর মতো যাবে না, সে ব্যাপারে বাজার বিশেষজ্ঞদের অনেকেই একমত। আগের ক’দিন কিছুটা সংশোধন দেখা গেলেও এখনও যথেষ্ট তেতে রয়েছে শেয়ার বাজার। হাজার দুয়েক পয়েন্ট পড়লেও সেনসেক্স এখনও রয়েছে বিপুল উচ্চতায়। অর্থনীতির অবস্থা এবং সংস্থাগুলির আর্থিক ফলের নিরিখে যাকে একটু বেশি বলেই মনে হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে সুদ বৃদ্ধি এবং টাকার জোগানে রাশ টানা হতে পারে— এই দুই আশঙ্কাকে সঙ্গী করেই এখন চলতে হবে বাজারকে। বিদেশে সুদ বাড়ানো হলে আশঙ্কা থাকবে বিদেশি লগ্নির প্রস্থানের। ফলে এই পরিস্থিতিতে নতুন বছরে বাজার সম্পর্কে খুব বেশি আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না।
গত সপ্তাহে অবশ্য বাজার কয়েকটি ভাল খবর পেয়েছে, যা সেনসেক্স ও নিফ্টি দুই সূচককেই কিছু দিন শক্তি জোগাবে। সেগুলি হল—
* অক্টোবরে ১.৩০ লক্ষ কোটি টাকার জিএসটি সংগ্রহ। যা এই কর চালু হওয়ার পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম।
* উৎসবের মরসুমে পণ্যের চাহিদা বাড়ায় অক্টোবরে বেড়েছে কারখানার উৎপাদন। আইএইচএস মার্কিটের শিল্পোৎপাদন সূচক গত মাসে হয়েছে ৫৫.৯। সেপ্টেম্বরের ছিল ৫৩.৭।
* গত মাসে ভাল রকম বেড়েছে পরিষেবাও। সেপ্টেম্বরে ৫৫.২-এর তুলনায় অক্টোবরে আইএইচএস মার্কিটের পরিষেবা সূচকও এক লাফে বেড়ে হয়েছে ৫৮.৪।
* ভাল ত্রৈমাসিক ফল করেছে স্টেট ব্যাঙ্ক। জুলাই-সেপ্টেম্বরে নিট মুনাফা ৪৫৭৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৬২৬ কোটি টাকা। ৩২% লাভ বেড়েছে বেসরকারি গৃহ ঋণ সংস্থা এইচডিএফসির। ২৮৭০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে তা হয়েছে ৩৭৮০ কোটি।
* অক্টোবরে রফতানি ৪২.৩৩% বেড়ে ছুঁয়েছে ৩৫৪৭ কোটি ডলার।
* সারা দেশে ভাল বর্ষা হওয়ায় ফলন ভাল হওয়ার আশাও বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে চাঙ্গা হবে গ্রামীণ অর্থনীতি।
এতগুলি অনুকূল শর্তের পাশাপাশি আশঙ্কার দিকও কিন্তু কম নয়। মূল্যবৃদ্ধিকে রোখা না গেলে সুদ বাড়াতে হতে পারে বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনীতিকে। আর সত্যিই যদি তেমন হয়, তবে শেয়ার বাজারে তা ভাল রকম ধাক্কা দিতে পারে। টাকার জোগানে রাশ টানা হলে তারও প্রভাব পড়বে শেয়ার সূচকের উপরে। ফলে এখন সূচকের দিকে তাকিয়ে নয়, শেয়ার কেনাবেচা করতে হবে নির্দিষ্ট কিছু শেয়ারের উপরে নজর রেখে।
সরকার ও ব্যাঙ্ক বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার কারণে ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার জন্য বর্তমান সময়কে বেশ অনুকূল বলে মনে করা হচ্ছে। সুবিধাগুলি মোটামুটি এই রকম—
* গৃহ ঋণ পাওয়া এখন বেশ সহজ। প্রয়োজনের অধিকাংশটাই ঋণ হিসেবে
মেলে। চাইলে ঋণ শোধের মেয়াদও বেশ লম্বা হতে পারে। ফলে আয়ত্তের মধ্যে থাকে মাসিক কিস্তি বা ইএমআই।
* এই ঋণের সুদ এখন একদম তলানিতে। কোনও কোনও ব্যাঙ্ক সুদ ধার্য করছে মাত্র ৬.৪০%।
* শেয়ার, সোনা ইত্যাদি সম্পদের দাম অনেকটা বাড়লেও মধ্যবিত্তের ফ্ল্যাটের দাম এখনও রয়েছে নাগালের মধ্যে।
* পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্ট্যাম্প ডিউটিতে যে ছাড় দিয়েছিল তার মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩১ জানুয়ারি। বড় শহরে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত মূল্যের সম্পত্তির উপরে স্ট্যাম্প ডিউটি কমিয়ে করা হয়েছে ৪%। অন্যত্র এই হার মাত্র ৩%। মূল্য ১ কোটি টাকার বেশি হলে এই দুই হার যথাক্রমে ৫% এবং ৪%।
(মতামত ব্যক্তিগত)