ফাইল চিত্র।
সংশোধন ব্যাপারটি শেয়ার বাজার যেন ভুলেই গিয়েছিল। লাফিয়ে বাড়ছিল সূচক। ১৫ জুলাই সেনসেক্স প্রথম পা রাখে ৫৩ হাজারের ঘরে। ৪ অগস্ট পেরোয় ৫৪ হাজার। পরের সাত দিনে ৫৫ হাজারে। গত বুধবার অল্প সময়ের জন্য ঢুকেছিল ৫৬ হাজারের ঘরেও, তবে থিতু হতে পারেনি। এমন রকেট গতিতে একের পর এক শিখর পেরোতে থাকা ভারতীয় বাজার গত সপ্তাহেই সামান্য সংশোধনের স্বাদ পেয়েছে। চারটি কাজের দিনে সেনসেক্স নেমেছে নিট ১০৮ পয়েন্ট এবং নিফ্টি ৭৯। লগ্নিকারীদের স্বার্থে এত উঁচু বাজারের জমি মজবুত রাখার জন্য সূচকের পতন অত্যন্ত জরুরি। যদিও বাজার যে উচ্চতায় দাঁড়িয়ে, তাতে গত সপ্তাহের পতনের জের তেমন টেরই পাওয়া যায়নি। কিছু ছোট ও মাঝারি সংস্থার শেয়ারে লগ্নিকারীরা শুধু একটু বেশি ভুগেছেন।
বিশ্ব জুড়েই সূচক নেমেছে গত সপ্তাহে। আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজ়ার্ভ বন্ড কেনা কমাবে, এই আলোচনা শুরু হওয়া যার কারণ। আশঙ্কা, তা সত্যি হলে নগদের জোগান কমবে। তার উপরে কিছু দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। তবে ভারতের থেকেও বেশি পতন দেখেছে হংকং, কোরিয়া, চিন, জাপান এবং রাশিয়ার বাজার। ভারতে সূচক খুব বেশি না-পড়লেও ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় দাঁড়িয়ে সেনসেক্স ও নিফ্টি। সামনে অন্যান্য দেশে বর্ধিত সংক্রমণ, বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে চিন্তা, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের চোখ রাঙানিও।
জুলাইয়ে ভারতে ১১,৩০৮ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছিল বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। অগস্টে বুধবার পর্যন্ত কেনে ৫০০০ কোটির। কিন্তু শুক্রবার বেচে ২২৮৭ কোটির শেয়ার। বাজারে বেশি পতন রুখেছে মিউচুয়াল ফান্ডের বিপুল লগ্নি। বিদেশি সংস্থা শেয়ার বিক্রি বহাল রাখলে এই সপ্তাহে সূচকের দুর্বলতা প্রকট হতে পারে।
বাজারের এই উত্থানের কারণ—
খুচরো মূল্যবৃদ্ধি জুনের ৬.২৬% থেকে জুলাইয়ে ৫.৬৯ শতাংশে নামা, পাইকারি বাজারে ১২.০৭% থেকে ১১.১৬ শতাংশে।
জুনে ১৩.৬% শিল্প বৃদ্ধি। যদিও গত বছর জুনের নিচু ভিতের তুলনায় এই উঁচু বৃদ্ধি হওয়ারই ছিল।
বিশ্ব অর্থনীতির উন্নতি ও জুলাইয়ে ভারতের প্রায় ৫০% রফতানি বৃদ্ধি। তুলনা গত বছরের নিচু ভিতের সঙ্গেই।
স্টেট ব্যাঙ্কের পরে টাটা স্টিল-সহ কিছু বড় সংস্থার ভাল আর্থিক ফল।
সব মিলিয়ে অর্থনীতির দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানো এবং করোনা পুরো নিয়ন্ত্রণে এলে বৃদ্ধিতে জোয়ার আসার আশা।
হালে সূচকের বিপুল উত্থান বহু মানুষকে টেনেছে শেয়ার এবং ফান্ডের দিকে। জুলাইয়ে ইকুইটি (শেয়ার) ফান্ডে লগ্নি এসেছে ২২,৫৮৩ কোটি টাকা। ২৭ মাসে সর্বাধিক। এসআইপি পথে ফান্ডে লগ্নি এসেছে ৯৬০৮ কোটি টাকা। এসআইপি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৩.৭% বেড়ে হয়েছে ৪.১৭ কোটি। ফান্ডে মোট সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৩৫.৩ লক্ষ কোটি টাকা। বেড়েছে শেয়ারে সরাসরি লগ্নিও। গত শুক্রবার পর্যন্ত বিএসই-তে নথিবদ্ধ লগ্নিকারীর সংখ্যা ৭.৭৩ কোটি। নথিবদ্ধ শেয়ারের মোট মূল্য ২৩৮.১১ লক্ষ কোটি টাকা।
(মতামত ব্যক্তিগত)