ফাইল চিত্র।
বাজারে ফের দাঁত বসাল কোভিড। শুধু ভারতে নয়, গোটা বিশ্বে।
মূলত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন প্রজাতি ওমিক্রনের সন্ধান মেলায় শুক্রবার হুড়মুড়িয়ে পড়ল সেনসেক্স। অনেকটা গত বছরের ২৩ মার্চের মতো। তখন ভারতে সদ্য হানা দিয়েছে অতিমারি। তাকে রোখার জন্য লকডাউন ঘোষণা হতেই ৩৯৩৫ পয়েন্ট তলিয়ে গিয়েছিল সূচক। এক সময় ঠেকেছিল ২৫,৮৮০ অঙ্কে। পরে লকডাউন শিথিল হতে থাকায় এবং অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরার লক্ষণে লাগাতার উত্থান দেখেছে বাজার। ১৯ অক্টোবর সেনসেক্স পেরোয় ৬২ হাজারের গণ্ডি। অর্থাৎ মাত্র ১৯ মাসে ২৬ হাজার পয়েন্টের লাফ। সেই সূচকই গত শুক্রবার ১৬৮৮ খুইয়ে ৫৭,১০৭-এ নেমেছে ফের করোনার আতঙ্ক গ্রাস করায়। অর্থাৎ সর্বোচ্চ জায়গা থেকে ৫০০০ পয়েন্ট পেছনে। আর তার হাত ধরেই খুলেছে নতুন লগ্নির সুযোগ। বহু ভাল শেয়ারের দাম কমে কেনার পথ গড়ে দিচ্ছে সাধারণ লগ্নিকারীদের সামনে।
প্রায় সব দেশের লগ্নিকারীদের আশঙ্কা একটাই, আবার লকডাউন শুরু হবে না তো! সেটা হলে তলিয়ে যেতে পারে বিশ্ব বাণিজ্য। আরও বহু ব্যবসা ধুয়েমুছে যাবে। বাড়বে কর্মহীনতা। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই ফের মুখ থুবড়ে পড়বে। এই সব আশঙ্কায় ভারতের মতো আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানি, জাপান, কোরিয়া, হংকং-সহ বিভিন্ন দেশে উল্কা গতিতে পড়েছে শেয়ার সূচক (সারণিতে কিছু দেশের সূচকের পতনের হার দেওয়া হল)।
বিশেষজ্ঞদের অবশ্য পরামর্শ, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। করোনার প্রথম ধাক্কার পরে বাজার যে ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, এ বারও সম্ভবত তাই হবে। অর্থনীতি অনেকটা ঘুরে দাঁড়ানোয় হয়তো পতনকে খানিকটা রুখেও দেওয়া যাবে। ফলে এখন ভাল শেয়ার ধরে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। হাতে নগদ থাকলে, এই সুযোগে কিছুটা কম দামে পছন্দের শেয়ারগুলি কেনা যেতে পারে। চলতি সপ্তাহে বাজার কোন দিকে যায় তা দেখে নিয়ে একলপ্তে অথবা দফায় দফায় কিছু টাকা লগ্নি করা যায় মিউচুয়াল ফান্ডেও। গত এক মাসে ভারতীয় সূচক প্রায় ৭% নামায় সুবিধা হচ্ছে সেই সব ফান্ডের, যারা গত দু’তিন মাসে বাজার থেকে মোটা টাকা তুললেও তার পুরোটা এখনও লগ্নি করেনি।
এমনকি এই আশঙ্কার পরিবেশে ভারত সুবিধা নিতে পারবে তেলেও। চাহিদা কমায় বিশ্ব বাজারে ব্যারেল প্রতি ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া অশোধিত তেল (ব্রেন্ট ক্রুড) নেমেছে ৭২.৮৯ ডলারে। এতে দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম কমার পথ খুলেছে। এতে মূল্যবৃদ্ধির হারও মাথা নামাবে। গোটা দেশ এখন জ্বালানি সস্তা হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে।
তবে ফের আঘাত পাওয়ার আশঙ্কায় প্রমাদ গুনছে পর্যটন শিল্প, বিশেষত আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ব্যবসা চালায় যারা। ভারত আন্তর্জাতিক উড়ান চালু করার কথা বলায় সম্প্রতি একটু স্বস্তি পেয়েছিল তারা। কিন্তু নিমেষে সেই স্বস্তি উধাও।
(মতামত ব্যক্তিগত)