দশ বছরের পুরনো ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য কেয়ার্ন এনার্জিকে সুদ-সহ ২৯,০৪৭ কোটি টাকা বকেয়া করের কথা মনে করিয়ে ফেব্রুয়ারিতে চিঠি পাঠিয়েছিল আয়কর দফতর। এ বার কেন্দ্রের কাছে পাল্টা প্রায় ৩৭,৪০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাইল ব্রিটিশ তেল সংস্থাটি।
আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে জমা দেওয়া এক বিবৃতিতে ওই করের দাবি ভারতকে ফিরিয়ে নিতে বলেছে কেয়ার্ন। তাদের অভিযোগ, ব্যবসা ঢেলে সাজতে চালানো পুরনো লেনদেনে কর চাপিয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে করা লগ্নি-চুক্তির দায়বদ্ধতা পালনে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। রাখেনি সব সংস্থার লগ্নিকে সমান মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও। শুধু তাই নয়, আজ বহু দিন আয়কর দফতরের নিষেধাজ্ঞার জেরে কেয়ার্ন ইন্ডিয়ার ৯.৮% শেয়ার বেচতেও পারেনি তারা। সঙ্গে পোহাতে হয়েছে বকেয়া করের একের পর এক নোটিসের হয়রানি। এই সমস্ত কারণেই ক্ষতিপূরণ চাওয়ার ওই সিদ্ধান্ত। উল্লেখ্য, গত বছরেই এই দাবি প্রথম তুলেছিল তারা।
২০০৬ সালে ভারতীয় শাখার (কেয়ার্ন ইন্ডিয়া) হাতে এ দেশের সব সম্পত্তি তুলে দিয়েছিল কেয়ার্ন এনার্জি। এই চুক্তি থেকে তারা পায় ২৪,৫০০ কোটি টাকারও বেশি। সেই সূত্রেই সংস্থাটিকে সুদ-সহ বকেয়া করের নোটিস পাঠায় আয়কর দফতর। তার পর ভারতীয় শাখাটির মালিকানা ২০১১ সালে বেদান্তকে বেচলেও কেয়ার্নের হাতে রয়ে গিয়েছিল ৯.৮% শেয়ার। কিন্তু কর বকেয়া থাকার যুক্তি দর্শিয়ে তা বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞাও জারি করে দফতর। তাই বিপুল লোকসান গুনতে হয় বলে অভিযোগ তোলে কেয়ার্ন। কেন্দ্রের করের দাবির সঙ্গে ওই শেয়ারের মূল্য যোগ করেই ক্ষতিপূরণের অঙ্ক স্থির করেছে তারা।
কেয়ার্নের কর বিতর্ক নিয়ে ১০ বছরে জল গড়িয়েছে বহু দূর। এক সময় ভারতে এসে এ নিয়ে তোপ দাগেন ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড। পুরনো লেনদেনে কর নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক তেতো হয়েছে ভোডাফোন, শেল, আইবিএম ও মাইক্রোসফটেরও। প্রশ্ন উঠেছে এতে বিদেশি লগ্নিকারীরা ভারতে আসতে শঙ্কিত বোধ করবেন কি না। মোদী সরকার পুরনো লেনদেনে কর নিয়ে বিতর্কে দাঁড়ি টানার প্রতিশ্রুতি দিলেও আগুন নেভেনি। কেন্দ্র ব্যবসার পরিবেশ সহজ করার কথা বলছে। কর কাঠামো স্বচ্ছ করতে চাইছে। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে পুরনো লেনদেনে কর নিয়ে হয়রানি কমানোর। এ অবস্থায় কেয়ার্নের পদক্ষেপ ভাবমূর্তিতে ধাক্কা দেবে কিনা, সেটাই চিন্তার।