প্রতীকী ছবি।
অশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুড শুক্রবার ব্যারেলে ৯৩ ডলার ছাড়িয়ে গেল। ফলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা মিলিয়ে দাম ১০০ ডলার ছাড়াবে কিনা, সেই উদ্বেগ বিশ্ব জুড়ে। বিশেষত ভারতে, যেখানে তেলের বেশির ভাগটাই আমদানি হয়। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ব্রেন্ট ৮০-৮৫ ডলার থাকাকালীন দেশে পেট্রল-ডিজ়েল ১০০ টাকা হয়েছিল। আর এখন তো ব্রেন্ট আরও চড়া। কাজেই আগামী দিনে জ্বালানির আঁচে মানুষের ভোগান্তি আরও ভয়ানক রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। কারণ, ইতিমধ্যেই মূল্যবৃদ্ধির হার মাথা তুলেছে। তেলের খরচে খাদ্য ও জরুরি পণ্য আরও দামি হতে পারে। পাঁচ রাজ্যে ভোট বলেই যে ৯১ দিন ধরে তেল স্থির, তা পরিষ্কার। খোদ সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত, তেল সংস্থাগুলির পক্ষে আমদানি খরচের ধাক্কা বেশি দিন বহন করা অসম্ভব। ফলে ৭ মার্চ ভোট মিটলে দফায় দফায় বাড়বে দাম। রান্নার গ্যাস নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। কলকাতায় তার দাম এখন ৯২৬ টাকা।
এই যখন অবস্থা, তখন আশা ছিল দেশবাসীর পাশে দাঁড়াতে বাজেটে তেলের করে আরও ছাড় দেবে মোদী সরকার। নভেম্বরে যেমন পেট্রলে ৫ টাকা এবং ডিজ়েলে ১০ টাকা উৎপাদন শুল্ক কমিয়েছিল। কিন্তু হয়েছে উল্টোটা। ইথানল বা জৈব জ্বালানি না-মেশানো পেট্রল-ডিজ়েলে লিটারে ২ টাকা করে বাড়তি শুল্ক চাপিয়েছে তারা। এটি অক্টোবর থেকে বসবে ঠিকই। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, তত দিনে তেল আরও উঁচুতে উঠলে? এই শুল্কের কাঁটাতেই তো দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে ডিজ়েল এবং কিছু রাজ্যে পেট্রলের দাম আরও বাড়বে। কারণ, ৭৫%-৮০% অঞ্চলে ইথানলযুক্ত পেট্রল বিক্রি হয়। কিন্তু ডিজ়েলে তা হয় খুব কম। যে ডিজ়েল গণপরিবহণ, খাদ্য-সহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহণের প্রধান জ্বালানি। বিরোধীদের অভিযোগ, তেলের দামে রেহাই চেয়েছিল মানুষ। অথচ কেন্দ্র ঘুরপথে শুল্ক বৃদ্ধির পথ খুলল। যদিও সরকারের যুক্তি, তাদের লক্ষ্য তেলে ইথানল মেশানোয় জোর দেওয়া।
শুক্রবার তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীও বলেছেন, বিভিন্ন সংস্কারের হাত ধরে তেলে ইথানল মিশ্রণের গড় ৮% ছাড়িয়েছে। ২০২৫ সালে ২০% করার লক্ষ্য। দাবি করেছেন, উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমাতে ভারত তেল-গ্যাস খননের জায়গা ২০২৫ সালের মধ্যেই দ্বিগুণের বেশি বাড়াবে। ২০৩০-এর মধ্যে লক্ষ্য ১০ বর্গ কিলোমিটার। সংশ্লিষ্ট মহলের কটাক্ষ, কেন্দ্র ২০২৫-৩০ সালের লক্ষ্যে এগোচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে তেলের দামে, মূল্যবৃদ্ধিতে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষ কী করবে!
আশঙ্কা যে অমূলক নয় তার প্রমাণ বিমান জ্বালানি এটিএফ। তিন দফায় দাম বেড়ে তা রেকর্ড গড়েছে। কলকাতায় কিলোলিটার ৯০,৪০৭.০৮ টাকা। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দাদরা নগর হাভেলি ও দমন-দিউ এটিএফের ভ্যাট ২০% থেকে ৩ শতাংশে নামিয়েছে। বিমানমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বাকি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকেও এমন পদক্ষেপ করতে বলেছেন। প্রশ্ন উঠছে, এই উদাহরণ কেন্দ্রকে কেন শুল্ক ছাঁটতে অনুপ্রাণিত করছে না!