রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। —ফাইল চিত্র।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে আর সুদ বাড়ায়নি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। তবে কমায়ওনি। বছরখানেক ধরে তাদের রেপো রেট (যে সুদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় আরবিআই) ৬.৫ শতাংশে থমকে। ফলে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে চড়ে রয়েছে ঋণের সুদও। কোথাও কোথাও তা বরং বাড়ছে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি ঘোষণার আরও একটি মরসুমে পা রেখে তাই চড়া মূল্যবৃদ্ধিতে দীর্ঘ দিন ধরে নাকাল এবং বিপুল সুদ গুণতে গিয়ে বিপাকে পড়া বহু ঋণগ্রহীতার প্রশ্ন, সুদের এই ভার কমবে কবে? আজ থেকে শুরু হচ্ছে আরবিআইয়ের ঋণনীতি কমিটির বৈঠক। শুক্রবার ঘোষণা করা হবে সুদ নিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত।
বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য সকলেই প্রায় একমত, এ বারও সম্ভবত সুদের হার অপরিবর্তিতই রাখতে চলেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। কারণ মূল্যবৃদ্ধির হার এখনও তাদের লক্ষ্য অনুযায়ী ৪ শতাংশের কাছে নামেনি। ঋণনীতি কমিটির ছয় সদস্যের ভোটাভুটিতে কেউ কেউ সুদ ছাঁটাইয়ের পক্ষে থাকতে পারেন। তবে বেশির ভাগই হয়তো এখন সেই ঝুঁকি নিতে চাইবেন না।
অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের মতে, ‘‘গত অর্থবর্ষের (২০২৩-২৪) প্রথম তিনটি ত্রৈমাসিকেই ৮% ছাড়িয়েছে জিডিপি বৃদ্ধির হার। এই পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, আর্থিক বৃদ্ধি মোটের উপর ভাল। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাশা অনুযায়ী মাথা নামায়নি। উল্টে খাদ্য-সহ কিছু পণ্যে তা এখনও অস্বস্তিজনক। ফলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের এখন প্রধান লক্ষ্য হবে, পণ্যের দাম কমিয়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া। তাই এখনই সুদ কমাবে না তারা।’’ মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রার মুখ্য অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ারের ধারণা, ঋণনীতির অভিমুখ অগস্টের আগে পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। কারণ— প্রথমত: ওই সময়েই দেশে বর্ষার গতিবিধি বোঝা যাবে। দ্বিতীয়ত: আঁচ পাওয়া যাবে আর্থিক বৃদ্ধির। তৃতীয়ত: আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সুদ কমাচ্ছে কি না স্পষ্ট হবে। অদিতির কথায়, ‘‘আগামী অক্টোবরে সুদের হার কমাতে পারে আরবিআই। তবে মাঝের ত্রৈমাসিকগুলিতে আর্থিক বৃদ্ধি আচমকা গতিপথ বদলে কোনও নেতিবাচক চমক না দিলে। সে ক্ষেত্রেও সুদ ছাঁটাই সীমিত থাকবে ৫০ বেসিস পয়েন্টের মধ্যে।’’
অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরী বলছেন, সুদ নিয়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক গুরুত্ব দেবে দু’টি বিষয়কে। একটি দেশীয় এবং অন্যটি বিদেশি। ফেব্রুয়ারিতে দেশে মূল্যবৃদ্ধি ছিল ৫.১%। শীর্ষ ব্যাঙ্ক ওই হার আরও নামাতে চাইবে। তার উপর যে আর্থিক বৃদ্ধির জন্য সুদ কম থাকা জরুরি, তা এমনিতেই গত অক্টোবর-ডিসেম্বরে ৮.৪% ছুঁয়েছে। ফলে সেই নিরিখে তড়িঘড়ি সুদ কমানোর চাপ কম। অন্য দিকে, আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো দেশ সুদ কমানোর পথে হাঁটতে শুরু না করলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক আগেভাগে সেই সিদ্ধান্ত নিতে চাইবে না।