পতন-চিত্র: সোমবারের বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন। ছবি: পিটিআই।
বিশ্ব জুড়ে লগ্নিকারীদের রক্তচাপ বাড়িয়ে শেয়ার বাজারে ফের ‘কালো সোমবার’।
অর্থনীতি নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যেই ভারতে সেনসেক্স এবং নিফ্টি— উভয় সূচকই গড়েছে পতনের নতুন নজির। আজ এক সময়ে সূচক ২৪০০ পয়েন্টেরও বেশি পড়ে যায়। পড়তে থাকে নিফ্টিও। এক দিনে সূচক পতনের এ সর্বকালীন রেকর্ড।
দিনের শেষে অবশ্য দুই সূচকেরই নিম্নগতিতে কিছুটা রাশ পড়ে। তত ক্ষণে লগ্নিকারীরা খুইয়েছেন অন্তত ৭ লক্ষ কোটি টাকা। মার্চের গোড়ায় এক দিনে সেনসেক্স পড়েছিল প্রায় ১৪৪৮ পয়েন্ট। ২০১৫ সালের ২৪ অগস্ট তা নেমেছিল ১৬২৫ পয়েন্ট।
আরও পড়ুন: ইয়েস: রাণার স্ত্রী এবং তিন মেয়ের নামে এফআইআর
শুধু ভারত নয়, আমেরিকাতেও বাজার খোলার পর থেকেই সূচকের গতি নিম্নমুখী। আমেরিকায় মার্কিন বাজারের সূচক এসঅ্যান্ডপির পতনের জেরে বেশ কিছু ক্ষণের জন্য লেনদেন বন্ধ রাখতে হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়া এবং সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দর ব্যারেল প্রতি ৩০ ডলারের কাছে পৌঁছে যাওয়া— এই জোড়া ধাক্কায় বিশ্বে ফের ছড়িয়েছে আর্থিক মন্দার আতঙ্ক। ১৯৯১ সালের প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পরে এক দিনে অশোধিত তেলের দর এতটা পড়ে যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম।
ভারতে গত মাসের শেষ থেকে দু’এক দিন বাদে মোটামুটি নিয়মিত পড়েছে সেনসেক্স। শুক্রবার বাজার যে অঙ্কে বন্ধ হয়েছিল, এ দিন বাজার খোলার সময়ে তার চেয়ে নীচে শুরু হয় লেনদেন। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ওএনজিসির দর পড়ে প্রায় ১৬ শতাংশ। যা ১৯৯৫ সালের পরে সবচেয়ে খারাপ। রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের দর পড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। তবে ইয়েস ব্যাঙ্কের শেয়ার দর এ দিন উঠেছে প্রায় ৩১ শতাংশ।
ধস শেয়ার বাজারে
• সোমবার সেনসেক্স ১৯৪১.৬৭ পয়েন্ট নেমে দাঁড়াল ৩৫,৬৩৪.৯৫ অঙ্কে
• নিফ্টি ৫৩৮ নেমে ১০,৪৫১.৪৫
• এক দিনে দুই সূচকের
এই পতন সর্বকালীন রেকর্ড
• তবে দিনের এক সময়ে সেনসেক্স নেমে গিয়েছিল ২৪৬৭ পয়েন্ট
• নিফ্টিও পড়ে প্রায় ৭০০
• লেনদেন চলাকালীন
আগে কখনও সূচক দুটি এতটা পড়েনি
• লগ্নিকারীরা খুইয়েছেন প্রায় ৭ লক্ষ কোটি টাকা
• বিশ্বের বিভিন্ন শেয়ার বাজারেও পতন অব্যাহত
• এ দিন খোলার পরে মার্কিন বাজারের সূচক এসঅ্যান্ডপি এতটাই পড়ে যায় যে ১৫ মিনিটের জন্য লেনদেন বন্ধ রাখতে হয়
পতনের কারণ
• করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে যাওয়ায় ফের আর্থিক মন্দার আশঙ্কা
• বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর বিপুল পড়ে যাওয়া
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মতোই বিশ্বের অর্থনীতিতে মন্দার মেঘের ছায়ায় পড়ছে অশোধিত তেলের দরও। অর্থনীতি ধাক্কা খেলে তেলের চাহিদা কমবেই। বস্তুত, ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে গত প্রায় এক দশকের মধ্যে তেলের চাহিদা প্রথম বার কমেছে বলে জানিয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি’। সেই আশঙ্কা থেকেই তেলের উৎপাদন ছাঁটাইয়ের প্রস্তাবও খতিয়ে দেখছিল আন্তর্জাতিক মহল। কিন্তু ওপেক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি এবং রাশিয়া সহমত হতে পারেনি। বরং সৌদি আরব তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছে। জোগান না-কমলে এবং চাহিদায় ভাটা পড়ার আশঙ্কায় এ দিন আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দর নামে।
তবে এ দিনের সূচকের নজিরবিহীন পতনেও দেশের পরিস্থিতি নিয়ে খুব একটা চিন্তার কিছু দেখছে না ভারতের শিল্পমহলের একাংশ। বাজারের এই ওঠাপড়া স্বল্পমেয়াদি বলেই মনে করছে তারা। তাদের যুক্তি, দেশের অর্থনীতির মূল কাঠামো এখনও দৃঢ়। বণিকসভা অ্যাসোচেমের সেক্রেটারি জেনারেল দীপক সুদ বলেন, ‘‘তেলের দামে পতন ও বিশ্ব বাজারের অবস্থার প্রেক্ষিতে এমন ঘটলেও ভারত তেল
আমদানির ক্ষেত্রে অন্যতম বড় দেশ। তেলের দাম কমলে ভারত উপকৃত হবে। মূল্যবৃদ্ধির হারও কমতে পারে।’’ পিএইচডি কমার্সের প্রেসিডেন্ট ডি কে আগরওয়ালেরও দাবি, বাজারের এই ওঠাপড়া সাময়িক ও করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করেই। ভারতের অর্থনীতি এই পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে সক্ষম।
যদিও মুম্বইয়ের আরিহান্ত ক্যাপিটাল মার্কেটসের কর্তা অনীতা গাঁধী বলেন, ‘‘নিফটি ১০ হাজারের নীচে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। করোনাভাইরাস প্রতিরোধ নিয়ে আরও স্বচ্ছতা জরুরি।’’ মোতিলাল অসওয়াল সিকিয়োরিটিজ়ের কর্তা সিদ্ধার্থ খেমকার কথাতেও উদ্বেগ। তাঁর কথায়, ‘‘যে ভাবে দ্রুত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চিনের বাইরে ছড়াচ্ছে, অর্থনীতিতে তার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দু’ সপ্তাহ ধরে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ক্রমাগত শেয়ার বেচে চলেছে।’’
কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জের দুই প্রাক্তন সভাপতি অজিত দে ও কমল পারেখ জানান, এক দিনে সূচকের এতটা পতন তাঁরা স্মরণকালে দেখেননি। কমলবাবুর আশঙ্কা, বাজার আরও পড়তে পারে। তবে করোনাভাইরাসের সমস্যা কেটে গেলে এবং নতুন করে আন্তর্জাতিক ও দেশের বাজারে বড় সমস্যা তৈরি না হলে বাজার ফের দ্রুত উঠবে বলেই তাঁদের আশা।