বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র গোপালকৃষ্ণ আগরওয়াল
কেন্দ্রের পরিসংখ্যান মন্ত্রক সম্প্রতি পূর্বাভাস দিয়েছিল, চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে আটকে থাকবে। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ) তাদের পূর্বাভাস সামান্য কম বলায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল বিজেপি।
আইএমএফ সোমবার জানিয়েছে, চলতি বছরে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি হতে পারে ৪.৮%। মঙ্গলবার বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র গোপালকৃষ্ণ আগরওয়াল বলেন, ‘‘আইএমএফের অনুমান নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’’ বিজেপির এই বক্তব্যের সঙ্গে কেন্দ্র কি একমত? তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রক সরকারি ভাবে খুলতে চায়নি। তবে মন্ত্রকের কর্তারা আইএমএফের পূর্বাভাসের সঙ্গে মোটামুটি একমত। তাঁরা মনে করাচ্ছেন, পরিসংখ্যান মন্ত্রক এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কও ৫% বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রক তা খারিজ করেনি।
তা হলে বিজেপির সন্দেহ কোথায়? গোপালকৃষ্ণের যুক্তি, ‘‘নরেন্দ্র মোদী সরকার জাতীয় পরিকাঠামো পাইপলাইন, ছোট-মাঝারি শিল্প ও এনবিএফসির জন্য ঋণের জোগানের পদক্ষেপ করেছে। দেউলিয়া বিধি, জিএসটির মতো সংস্কার হয়েছে। সেগুলো আইএমএফ বিবেচনা করেছে কি না, তা নিয়েই সন্দেহ।’’ গোপালকৃষ্ণ কয়েক দিন আগে পর্যন্ত বিজেপির আর্থিক শাখার প্রধান ছিলেন। বিজেপির অন্দরমহলে তিনি অর্থনীতির চিন্তাবিদ হিসেবে পরিচিত। সর্বোপরি, ১ ফেব্রুয়ারির বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তথা মোদী সরকারের সঙ্গে বিজেপির যে আলাপ-আলোচনা চলছে, তাতে গোপালকৃষ্ণই সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আর্থিক বৃদ্ধির হার আর কমবে না। আগামী দিনে যথেষ্ট বাড়বে।’’
ভবিষ্যতে বৃদ্ধিতে গতি আসবে বলে অবশ্য আইএমএফের মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথও পূর্বাভাস দিয়েছেন। তাঁর মতে, আগামী অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ৫.৮ শতাংশে পৌঁছবে। সুফল মিলবে কর্পোরেট কর ও সুদ কমানোর। তবে এই পূর্বাভাসও আগের বারের থেকে কম। চলতি বছরে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি আশানুরূপ না-হওয়া সারা বিশ্বের বৃদ্ধিকে টেনে নামাবে বলেও জানান গীতা।
এ দিন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম কটাক্ষ করেছেন, ‘‘আমার ধারণা, আইএমএফ ও গোপীনাথের উপরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।’’ আক্রমণ না-করলেও গীতার যুক্তি উড়িয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। গীতা বলেছিলেন, ঋণ বৃদ্ধিতে দুর্বলতাই পূর্বাভাস ছাঁটাইয়ের কারণ। সঙ্গী এনবিএফসিগুলির বেহাল দশা, চাহিদায় টান, গ্রামে আয় তেমন না-বাড়া। গোপালকৃষ্ণের বক্তব্য, ‘‘আইএমএফ যা বলছে, সেগুলি কারণ নয়। ব্যাপারটা উল্টো। বিশ্বের শ্লথ বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে ভারতে। আছে আমেরিকা, ইউরোপের রক্ষণশীল বাণিজ্য নীতি, চিন-মার্কিন শুল্ক-যুদ্ধ, আমেরিকা ইরান সংঘাত ও ইউপিএ জমানায় ভারতের স্বার্থ খুইয়ে বাণিজ্য চুক্তির মতো কারণ।’’ চিদম্বরমের পাল্টা, ‘‘পূর্বাভাস ঘোর বাস্তব। তা আরও কমলেও অবাক হব না।’’