Investment

বাজারে উত্থানের সুফল ফান্ডের লগ্নি, এনপিএসে

সূচক উপেক্ষা করেছে এপ্রিলে কারখানার উৎপাদন প্রায় ১৩% পতনের খবরকে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২১ ০৪:৪৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিকে কার্যত তোয়াক্কা না-করেই উঠছে সূচক। কারণ একটাই, ভবিষ্যতে তার ঘুরে দাঁড়ানোর আশা। উচ্চতার নতুন নজির শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীদের বিপুল লাভের সন্ধান দিচ্ছে। গত সপ্তাহে সেনসেক্স মোট ৩৭৫ পয়েন্ট এগিয়ে এই প্রথম পৌঁছেছে ৫২,৪৭৫ অঙ্কে। যা এখনও পর্যন্ত রেকর্ড। নিফ্‌টি দৌড়চ্ছে ১৬ হাজারের দিকে। মূল দুই সূচকের পাশাপাশি ভাল রকম বাড়ছে মাঝারি এবং ছোট সংস্থাগুলির শেয়ার সূচকও। ফলে খুশি সর্ব স্তরের লগ্নিকারীরাই।

Advertisement

তবে আশঙ্কার মেঘ যেন কাটছে না। কারণ, শেয়ার বাজারের উত্থান ঘটেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন আর্থিক এবং মূল্যায়ন সংস্থা চলতি অর্থবর্ষে (২০২১-২২) ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানো সত্ত্বেও। সূচক উপেক্ষা করেছে এপ্রিলে কারখানার উৎপাদন প্রায় ১৩% পতনের খবরকে। চড়া বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধিকেও তেমন পাত্তা দিচ্ছে না। বরং গত এক বছরের বেশি সময় ধরে বাজার যে হারে রিটার্ন দিয়েছে, তাতে শেয়ার লগ্নিকারীরা তো তৃপ্ত বটেই। বেজায় খুশি শেয়ার ভিত্তিক (ইকুইটি) ফান্ডে লগ্নিকরীরাও। এক বছরে ৬০ থেকে ১৩০ শতাংশ পর্যন্ত লাভের সন্ধান দিয়েছে বেশ কিছু ইকুইটি ফান্ড। এর মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পও। বেশি রিটার্ন দিয়েছে সরাসরি লগ্নি করা (বন্টনকারীর মাধ্যমে নয়) প্রকল্পগুলি। ফান্ডে নতুন লগ্নির পরিমাণও বাড়ছে। মে মাসে ইকুইটি ফান্ডে নিট লগ্নি এসেছে ১০,০৮৩ কোটি টাকা। এর থেকে এক মাসে বেশি লগ্নি এসেছিল ২০২০ সালের মার্চে, ১১,৭২৩ কোটি।

পরিসংখ্যান বলছে, এসআইপি-র পথে মে মাসে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি এসেছে ৮৮১৯ কোটি টাকা। এপ্রিলে এসেছিল ৮৫৯৬ কোটি। তবে গত মাসে ঋণপত্র নির্ভর (ডেট) ফান্ড থেকে তোলা হয়েছে ৪৪,৫১২ কোটি।

Advertisement

ইকুইটি ফান্ডে লগ্নি এতখানি বেড়ে ওঠার কারণ—

• শেয়ারে অস্বাভাবিক রিটার্নের কারণে ফান্ডের ন্যাভ দ্রুত বেড়ে ওঠা।

• ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরে সুদ বেশ কমা এবং ভবিষ্যতে আরও নামার আশঙ্কা।

• আয়করের দিক থেকে সুবিধা। ইকুইটি ফান্ড থেকে বছরে প্রথম ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাভের উপর কোনও কর দিতে হয় না। মুনাফা এর বেশি হলে তার উপরে দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভকর দিতে হয় ১০% হারে।

• কোভিড আবহে নানা খাতে মানুষের খরচ কমায় অতিরিক্ত সাশ্রয়ের একাংশ ফান্ডে প্রবাহিত হওয়া।

• অতি সহজে লগ্নি এবং তা ভাঙিয়ে তহবিল জোগাড়ের সুবিধা। কিস্তিতে অর্থাৎ এসআইপি-র পথে অল্প করে দীর্ঘ মেয়াদে জমানোর সুবিধা।

• ঝুঁকি নিয়ে সঞ্চয় বাড়ানোয় রাস্তায় পা রাখায় মানুষের অনীহা কমা।

মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নিতে পশ্চিমবঙ্গের স্থান মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, গুজরাতের পরেই, অর্থাৎ চতুর্থ। ফান্ড শিল্পের ৩৩.০৬ লক্ষ কোটি টাকার মোট সম্পদের ১৪.৫৫ লক্ষ কোটি এসেছে মহারাষ্ট্র থেকে। কর্নাটক থেকে ২.২৭ লক্ষ কোটি। গুজরাত থেকে ২.২৩ লক্ষ কোটি এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় ১.৭১ লক্ষ কোটি টাকা।

শুধু ফান্ড নয়, শেয়ার বাজারের লাভ প্রতিফলিত হয়েছে ন্যাশনাল পেনশন স্কিম অর্থাৎ এনপিএস-এর ইকুইটি প্রকল্পে। গত এক বছরে প্রত্যেক ফান্ড ম্যানেজারই ভাল লাভের হদিশ দিয়েছেন। বাজারের এমন গতিপথ মুনাফা দেবে প্রভিডেন্ট ফান্ডের গ্রাহকদেরও। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, পিএফ তহবিলে বাৎসরিক জমা থেকে ছোট একটি অংশ বাধ্যতামূলক ভাবে লগ্নি করতে হয় ইকুইটিতে। শেয়ার এবং ইটিএফ-এর (এক্সচেঞ্জ ট্রেডেট ফান্ড) অতি আকর্ষণীয় হারে বাড়ায়, সেই লাভ বর্তাবে বিভিন্ন সংস্থার পিএফ তহবিলেও। লাভবান হয়েছেন তাঁরা, যাঁরা সরাসরি ইকুইটিতে লগ্নি না-করে ইকুইটি নির্ভর এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডে পুঁজি লাগিয়েছেন। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে শেয়ার বাজারের এই উত্থানের ফসল পৌঁছে যাবে বহু ঘরে।

তবে, ইকুইটি ফান্ডের অতি উঁচু হারে রিটার্নের পাশাপাশি ডেট ফান্ড গত এক বছরে বেশ ম্লান। ফেব্রুয়ারি-মার্চে বন্ড ইল্ড বেড়ে ৬.২৫% পর্যন্ত উঠে আসায় আনুপাতিক পতন হয়েছিল বেশ কিছু বন্ড ফান্ডের নিট অ্যাসেট ভ্যালুর (ন্যাভ)। পরে ইল্ডকে নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক খোলা বাজার থেকে বন্ড কিনতে শুরু করলে তা অনেকটা কমে আসে। বর্তমানে ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের ইল্ড ঘোরাফেরা করছে ৬ শতাংশের আশেপাশে। ফলে ন্যাভ-ও কিছুটা বেড়েছে আগের তুলনায়।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement