Business News

বাজারের এই পতন অবশ্যম্ভাবী ছিল

শেয়ার বাজারের সূচক যে শিখরে পৌঁছেছিল এবং যে ভাবে একটানা তুঙ্গে থাকছিল, হঠাৎ সেই ছবিতে পরিবর্তন। কেন পতন শেয়ার সূচকে? এর ফলাফল কী হতে পারে? বিশ্লেষণে শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ। উত্থান বাজেট-পূর্ববর্তী আশায় আশায়, বাজেটে দীর্ঘমেয়াদী মূলধনী কর ফিরে আসায় পতন— ব্যাপারটা সহজ ভাবে এই রকম দেখাচ্ছে।

Advertisement

অদিতি দে নন্দী

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ২২:২৪
Share:

বহুদিন ধরেই আসলে সংশোধন অবশ্যম্ভাবী ছিল শেয়ার বাজারে। বাজার একটু বেশিই চড়ে ছিল। মুম্বই শেয়ার বাজারের সূচক সেনসেক্স ৩২৬০০-র কাছে মোটামুটি শক্তপোক্ত ঘাঁটি গেড়েছিল ইদানীং। তার পর থেকে তার উত্থান পুরোটাই একটানা। তত্ত্ব বলে, এক-তৃতীয়াংশ সংশোধন বাজারের পক্ষে স্বাস্থ্যসম্মত। সেনসেক্স উঁচুতে উঠেছিল ৩৬২৮৩, যা বাজেটের আগের সর্বোচ্চ। এ বারের সংশোধন সেই হিসেবে এক-তৃতীয়াংশের বেশিই হয়েছে, এখনও পর্যন্ত।

Advertisement

উত্থান বাজেট-পূর্ববর্তী আশায় আশায়, বাজেটে দীর্ঘমেয়াদী মূলধনী কর ফিরে আসায় পতন— ব্যাপারটা সহজ ভাবে এই রকম দেখাচ্ছে। কিন্তু আসলে ঘটনাটা বোধহয় এতটা সরলরৈখিক নয়। বাজেটে প্রস্তাবিত হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী মূলধনী কর লাগবে ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮-র শেয়ারের দামকে ভিত্তি ধরে। এক বছরের বেশি বিনিয়োগের পর শেয়ার বিক্রি করে ১ লক্ষ টাকার চেয়ে বেশি লাভে ১০%। অর্থাৎ আগে দাম যাই হোক, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮-য় একটি শেয়ারের দাম যদি ১০০ টাকা হয়, এক বছরের বেশি ধরে রাখার পর ১ জুলাইয়ে ২০১৮-য় যদি তা ১১০ টাকায় বিক্রি হয়, মোট শেয়ার এই ক্ষেত্রে যদি ১০০০০ বা তার বেশি হয়, তবেই ১০% কর দিতে হবে।

ঘটনাচক্রে ৩১ জানুয়ারির পর থেকে বাজার নীচের দিকে। দীর্ঘমেয়াদে যাঁরা শেয়ার ধরে রেখেছেন, তাঁরা এই সুযোগে কর না দিয়ে বিক্রি করে চলেছেন। প্রথমত, বাজার সর্বকালীন শিখরের কাছাকাছি। দ্বিতীয়ত, দাম ৩১ জানুয়ারি ২০১৮-র থেকে কম। এই দলে শুধু বড় মাপের ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারী নেই, আছেন বিভিন্ন ফান্ড ম্যানেজার। তাঁদের দায়িত্ব ফান্ডটির লাভ যথাসম্ভব সুনিশ্চিত করা।

Advertisement

আরও পড়ুন: বাজার নামার জেরে ঢালাও সুযোগ লগ্নির

দীর্ঘমেয়াদী মূলধনী কর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের খুব একটা গায়ে লাগবে না। ৩৬০০০-এর চূড়া থেকে ১ লক্ষ টাকা লাভ হতে বেশ সময় লেগে যাবে। আবার বিনিয়োগের পরিমাণও ভাল রকম হতে হবে। তার থেকে বরং এই সংশোধনের সুযোগে খুচরো বিনিয়োগকারী একটু কম দামে ভাল শেয়ার কিনে নিতে পারবেন।

এ বার উল্টো দিকটা দেখা যাক। শেয়ার বাজারের গত কয়েক বছরের বৃদ্ধিহার দেখলে সেনসেক্স যদি এখন বড়জোর ৩৩০০০-এ থাকে, তবেই তা কেনার যোগ্য জায়গায় আসে। এই তথ্য আসছে বাজারের গড় প্রাইস/আরনিং অনুপাত (পি/ই) এবং গড় শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) এর অঙ্কের ভিত্তিতে। অতিরিক্ত তেজি বাজার সেই দিক থেকে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ উপকারী নয়।

অতএব, সংশোধন হলেও বাজারে যাঁরা হাত লাগাবেন তাঁদের দেখেশুনে পা ফেলতে হবে। চড়া বাজারে বহু অযোগ্য সংস্থার শেয়ার ফুলেফেঁপে ওঠে। এদের সম্বন্ধে নানা রকম খবরও চতুর্দিকে ছড়ায়। সযত্নে এদের থেকে দূরে থাকুন। ভরসা রাখুন চেনাশোনা, বহুদিন ধরে লাভ করে চলা সংস্থার ওপর। যাদের তৈরি দু’চাকা বা চার চাকা গাড়ি হুহু করে বিক্রি হয় বলে আমরা সবাই জানি, যাদের ওষুধ-ব্যবসা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই, যাদের তৈরি তেল-সাবান-শ্যাম্পু-টুথপেস্ট –এর বিক্রি বাজার বা বাজেটের ওপর নির্ভর করে না, সেই সব সংস্থার লাভ নিয়ে সংশয় থাকার কথা নয়।

আরও পড়ুন: ৪০ হাজার কোটি কর তোলার আশা মূলধনী লাভে

শেয়ারবাজারে অনেকেই ছোট সংস্থা খোঁজেন যাদের লাভ অনেক বেশি হতে পারে। কিন্তু এঁদের শেয়ারে টাকা ঢালার আগে লাভ-ক্ষতির খতিয়ান ষোলো আনা বুঝে নেওয়া ভাল। অল্প দিনের জন্য বিনিয়োগে সংশোধনের বাজারে ঝুঁকি খুবই বেশি থাকে, সে কথাও মাথায় রাখতে হবে। আবার দীর্ঘমেয়াদে একটু একটু করে বিভিন্ন ভাল শেয়ারে বিনিয়োগ করার আসল সময় কিন্তু পড়তি বাজার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement