ফাইল চিত্র।
করোনার আবহে ১০ মাসে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পে ৬৩,০০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক। সোমবার টুইট করে এ কথা জানিয়েছেন রাজ্যের শিল্প তথা অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। টুইটে ‘‘মো-শাহ বলুন’’ বলে তাঁর কটাক্ষ, কেন্দ্র বাংলার লগ্নি নিয়ে যে মিথ্যে প্রচার করছে, তা ফাঁস হয়ে গিয়েছে। সেই প্রচারের ফানুস যে আদতে কতটা অসার, তা কেন্দ্রীয় সরকারি তথ্য থেকেই প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী।
অমিতবাবু এ দিন জানান, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজ্য স্তরের বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির ঋণনীতি নির্ধারক কমিটির (এসএলবিসি) বৈঠক ছিল। সেখানে পেশ করা নথিতে বলা হয়েছে, গত বছরের এপ্রিল থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যের ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পকে ৬৩,০০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। যা স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছে, ১০ মাসেই রাজ্যে এই শিল্পে ৬৩,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। তাঁর দাবি, কেন্দ্রের নীতি মেনেই ছোট শিল্পে প্রতি ১ কোটি টাকা বিনিয়োগে ৩৬ জনের কর্মসংস্থান হয় বলে ধরা হয়। সেই হিসেব অনুযায়ী রাজ্যে গত ১০ মাসে ২৩ লক্ষ মানুষ কাজ পেয়েছেন।
অর্থমন্ত্রীর দাবি, ব্যাঙ্কগুলি যাতে ঋণদানের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারে, সে জন্য কয়েকটি সাব-কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। সরকারের কাজ ছিল ছোট উদ্যোগের মালিকদের কোথায় ঋণ পেতে অসুবিধা হচ্ছে, তা খুঁজে বের করে ব্যাঙ্কের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে দেওয়া। সেই কাজ সফল ভাবে হয়েছে বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে লকডাউনের বছরে কী ভাবে এত বিনিয়োগ হল? ব্যাঙ্ক কাদের এবং কোন ক্ষেত্রে লগ্নির জন্য এত ঋণ দিল? ঋণ পেয়ে উদ্যোগপতিরা কাদের কাজ দিলেন?
অমিতবাবু অবশ্য এ ক্ষেত্রে স্পষ্ট জবাব দেননি। তিনি বলেন, কোন ক্ষেত্রে পুঁজি ঢালা হয়েছে তা দফতর বিশ্লেষণ করছে। করোনাকালেও বিনিয়োগ থেমে থাকেনি। তাঁর দাবি, ‘‘ব্যাঙ্কের ঋণ নিয়ে তো কেউ বাড়িতে বসে থাকবেন না। বরং লগ্নি করবেন। ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পে লগ্নি দ্রুত হয়। ফলে ২৩ লক্ষ লোক কাজ পাওয়ার খবরে কোনও অসত্যতা নেই।’’
বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য করোনাকালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পে ৬৩,০০০ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণকে কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্য হিসাবে দাবি করেছেন। তাঁর ব্যাখ্যা, করোনার পরে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ঋণভারে ন্যুব্জ সংস্থাগুলিকে নতুন করে ঋণ দিতে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা ঢেলেছেন। ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ঋণভারে ন্যুব্জ সংস্থাগুলির মোট ঋণের ২০% বন্ধক ছাড়াই পুনরায় ঋণ দেওয়ার প্রকল্প নিয়েছিলেন। অজস্র সংস্থা করোনার সঙ্কট সয়ে সংস্থাকে বাঁচিয়ে রাখতে ফের ধার নিয়েছে, তাতে কর্মীদের বেতন, বকেয়া মেটানো গিয়েছে। শমীকবাবুর দাবি, মূলধন জোগাতে কেন্দ্র ছোট শিল্পকে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করায় রাজ্যের সংস্থাগুলি বেঁচেছে। বহু মানুষ কাজ হারানোর থেকে বেঁচেছেন। সেটিই এখন রাজ্য সরকার নিজেদের সাফল্য বলে দেখাতে চাইছে।