অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে যেটুকু আশার পরিবেশ তৈরি হচ্ছিল, তাতে আবার ধাক্কা লেগেছে। ফের শিল্পে উৎপাদন কমেছে এবং খুচরো বাজারে মাথা তুলেছে মূল্যবৃদ্ধির হার। আঘাত আছড়ে পড়েছে বিশ্ব বাজারের দিক থেকেও। আমেরিকায় বন্ডের ইল্ড ক্রমাগত বাড়ায় আরও কমেছে তার দাম। কম দামে বন্ডে লগ্নির সুযোগ খোলায় এবং তাতে সুদ বৃদ্ধির আশায় লগ্নি সরছে বন্ড বাজারে। ফলে বিশ্বময় পড়ছে শেয়ার বাজার। শুক্রবার ভারতেও নামে সেনসেক্স, নিফ্টি।
ডিসেম্বরে শিল্প বৃদ্ধি দেখেছিল। জানুয়ারিতে ফের সঙ্কোচন। বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির প্রত্যাশায় জল ঢেলে কল-কারখানায় উৎপাদন কমেছে। মূলধনী পণ্য, ভোগ্যপণ্য এবং খননেও উৎপাদন বাড়েনি। যা অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ নয়। অন্য দিকে ফেব্রুয়ারিতে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হারও তিন মাসে সর্বোচ্চ, ৫.০৩%। দুশ্চিন্তা কয়েক গুণ বাড়িয়েছে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি।
তেলের রেকর্ড দাম পরিবহণ খরচ বাড়িয়ে দেওয়ায় এটা যে হতে পারে, সেই আশঙ্কা ছিলই। এতে রাশ টানা না-গেলে মাসুল গুনবে অর্থনীতি।তার উপর বন্ড বাজার নিয়ে উদ্বেগ তো আছেই। ভারতে ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ড ইল্ড ৫.৮৫% থেকে বেড়ে হয়েছে ৬.২৩%। ইল্ড বাড়ার তাৎপর্য অর্থনীতিতে বেশ গভীর।
ইল্ড বাড়লে—
* সুদ বাবদ সরকারের খরচ বাড়ে। বিশেষত কোষাগারে ঘাটতি যখন বিপুল। আগামী অর্থবর্ষে এই ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ১২ লক্ষ কোটি টাকা, যার অনেকটাই সরকার মেটাবে বাজারে বন্ড ছেড়ে টাকা তুলে।
* বন্ডের বাজার দর কমলে লোকসান গোনেন বন্ড এবং বন্ড ফান্ডের লগ্নিকারীরা। সরকারি বন্ডের সিংহভাগ বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি কেনে বলে এই খাতে ব্যাঙ্কগুলির লাভ কমার অথবা লোকসান হওয়ার আশঙ্কা।
* পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি লাগামছাড়া হলে তাতে রাশ টানতে সুদ বাড়াতে হয়। অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে, তখন সুদের হার বাড়লে ঋণের খরচ বাড়ায় ধাক্কা খাবে চাহিদা, শিল্পের লগ্নি। যা কাম্য নয়।
* আমেরিকায় বন্ডের দাম কমলে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশ থেকে লগ্নি সেখানে সরে যেতে পারে। তাতে টাকায় ডলারের দাম বাড়ে। বেড়ে ওঠে সরকারের আমদানি খরচ।
* ইল্ড বাড়লে নতুন লগ্নির জন্য অবশ্য ভাল। বেশি সুদ মিলতে নতুন ইসু করা বন্ড থেকে।
(মতামত ব্যক্তিগত)