মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি পিটিআই
কলকাতায় বিদ্যুৎ বণ্টন ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকদের মধ্যে বহু আলোচিত প্রতিযোগিতার প্রসঙ্গটি শেষ পর্যন্ত তুলে দিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।
আমপানের পরে প্রায় তিন দিন কেটে গেলেও অনেক সিইএসসি এলাকার বিদ্যুৎ বিপর্যয় চলছে। ক্ষুব্ধ মানুষ পথে নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। গ্রাহকদের একাংশ সিইএসসি-র একচেটিয়া বিদ্যুৎ ব্যবসা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। বিভিন্ন সূত্রে খবর, বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের অন্দরমহলেও। এই পরিস্থিতিতে কাকদ্বীপে ও নবান্নে সংস্থাটির ভূমিকা নিয়ে শনিবার মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘সিইএসসি বেসরকারি সংস্থা। প্রায় ৩০ বছর ধরে কলকাতায় আছে। সিপিএমের আমলে কেন্দ্র একা তাদের অনুমতি দিয়েছে। আমি তো প্রতিযোগিতা চাই।’’ তবে মুখ্যমন্ত্রী চান, নিজেদের পরিকাঠামো থাকায় সিইএসসি ভাল ভাবে কাজ করুক।
তবে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিযোগিতার কথা তুললেও, একই এলাকায় বিদ্যুৎ বণ্টনে প্রতিযোগিতা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিন্ন মত রয়েছে। অনেকে যেমন বলছেন, কলকাতায় বিদ্যুৎ বণ্টন ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা জরুরি। সে ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা উন্নত পরিষেবার পাশাপাশি কম মাসুলের সুবিধাও পেতে পারেন। রাজ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনে কয়েকটি সংস্থা আসতে চেয়ে আগ্রহও দেখিয়েছিল বলে অনেকের দাবি। অন্য অংশের আবার মত, বিদ্যুৎ আইনে ব্যবস্থা থাকলেও, একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে একাধিক বণ্টন সংস্থা পরিষেবা দিতে চায় না। দেশে কোনও একটি শহরের মধ্যেই কোথাও তা নেই।
আরও পড়ুন: দায়ী বিদ্যুৎ না থাকাই, দাবি টেলি শিল্পের
এ দিকে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরেই তোপ দেগেছেন সিপিএমের নেতা শ্যামল চক্রবর্তী। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘সিইএসসি ইংরেজ আমলে তৈরি। আজ থেকে কমবেশি ১৩৫ বছর আগে। আর সংস্থার বর্তমান মালিক তো শাসকের ঘরের লোক!’’
ঝড়ের বিপর্যয় ও বিদ্যুৎ, জল না-থাকা নিয়ে মানুষের ক্ষোভ নিয়ে কথা বলতে গিয়েই এ দিন সিইএসসির প্রসঙ্গ টেনেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতায় আর কোনও সংস্থা নেই যে, একটির বদলে অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নেব। এইখানে হাত পা বাঁধা। তাই মারধর করব? বাবাবাছা করে কাজটা করিয়ে নিতে চাই। আমার হাতে কোনও বিকল্প নেই।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, সিইএসসি কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েন্কার সঙ্গে তাঁর বহু বার কথা হয়েছে। বলেছেন, কোনও কথা তিনি শুনবেন না। যত তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে। শনিবার রাতে ভিক্টোরিয়া হাউসে গিয়ে সিইএসসি-র পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন মমতা। তবে কর্মীর অভাবে সব কাজ যে করা যাচ্ছে না, তা মেনেছেন তিনি। জানান, করোনার পরিস্থিতিতে বড় বড় গাছ কাটার মতো দক্ষ কর্মী নেই। তাই সাধারণ মানুষকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানান তিনি।
আমপানে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর থেকেই ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা সিইএসসির ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। অনেকের বক্তব্য, কলকাতা ও হাওড়ায় সিইএসসি এলাকায় কোনও প্রতিযোগিতা নেই বলেই কি আমপানের তীব্রতা নিয়ে হাজারো পূর্বাভাসের পরেও সংস্থার এত গা-ছাড়া ভাব? এ দিন সিইএসসি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট (ডিস্ট্রিবিউশন) অভিজিৎ ঘোষের যদিও দাবি, দিন-রাত নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সমস্ত গ্রাহককে বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সিইএসসি-র দীর্ঘদিনের সুনাম রয়েছে। এই ঝড়ের তীব্রতা অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে ক্ষতিও বেশি হয়েছে। এটা ঠিক যে, কিছু এলাকায় পরিষেবা এখনও ব্যাহত। তাঁরা দ্রুত তা ঠিক করার চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন: জিডিপি সঙ্কোচনের ইঙ্গিত