—প্রতীকী চিত্র।
ব্যাঙ্কের অনাদায়ি ঋণ হিসাবের খাতা থেকে মুছে ফেলার (রাইট অফ) ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাইল ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য শিল্পের কর্মী সংগঠনগুলি। ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে ওই সব ইউনিয়ন ‘ব্যাঙ্ক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’ নামে যে নাগরিক মঞ্চ গড়েছে, তারাই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের কাছে তদন্তের দাবি জানিয়ে বুধবার চিঠি দিয়েছে।
তথ্য জানার আইনে সম্প্রতি এক প্রশ্নের উত্তরে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, গত অর্থবর্ষে ব্যাঙ্কগুলি ২.০৯ লক্ষ কোটি টাকা অনাদায়ি ঋণ হিসাবের খাতা থেকে মুছে দিয়েছে। গত তিন বছরে মোছা হয়েছে যে ৫,৮৬,৮৯১ কোটি টাকা, তার মধ্যে মাত্র ১,০৯,১৮৬ কোটি বা ১৮.৬০% আদায় হয়েছে। কেন ওই ঋণ মোছা হল, কার তাতে সুবিধা হল, ব্যাঙ্ক ও অর্থনীতির তাতে কতটা ক্ষতি হল— এই সব নিয়েই তদন্ত চাওয়া হয়েছে।
নাগরিক মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক বিশ্বরঞ্জন রায় এবং সৌম্য দত্ত বলেন, “যে সব সংস্থা বা ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ঋণ শোধ করেনি, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে এই ভাবে ছেড়ে দেওয়া হল কেন? বহু সাধারণ মানুষের, ছোট সংস্থার চড়া সুদে ধার শোধ করতে কালঘাম ছুটছে। আর ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বাঁচিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে তদন্ত চালিয়ে সত্য প্রকাশ করা হোক।’’ তাঁদের আশঙ্কা, কিছু ব্যাঙ্ক কর্তা, শিল্পপতি-সহ আরও কিছু পক্ষকে আড়াল করা হচ্ছে। সৌম্যবাবু জানান, “এক সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পর্ষদে কর্মী-অফিসারদের প্রতিনিধি থাকতেন। তাঁরা ব্যাঙ্কের নীতি নির্ধারণে নজরদারি করতেন। ২০১৭-র পরে কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেই এই নিয়োগ হয়নি।’’
দেউলিয়া আইনের মাধ্যমে কী ভাবে বহু ক্ষেত্রে অনাদায়ি ঋণের সিংহভাগ টাকা বাদ দিয়ে দেউলিয়া আদালতে ফয়সালা করা হচ্ছে, চিঠিতে তারও উল্লেখ করা হয়েছে। নাগরিক মঞ্চ বলেছে, বহু ক্ষেত্রে বকেয়া ঋণের ৬৫-৭০ শতাংশ টাকা ছাড় দিয়ে সংস্থা বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এগুলির তদন্ত করার জন্যও প্রধান বিচারপতির কাছে আর্জি জানানো হয়েছে। সৌম্যবাবুর ক্ষোভ, “রাইট অফ এবং দেউলিয়া প্রক্রিয়ায় লাভবান হচ্ছে ঋণ খেলাপি এবং কিছু কর্পোরেট। লুট হচ্ছে দেশের সম্পদ। এটা আর্থিক অপরাধ। আশা করব, আমাদের আর্জি মেনে তদন্তের ব্যবস্থা হবে।’’
এ দিন আরবিআই জানিয়েছে, ন’বছরে ১০,১৬,৬১৭ কোটি টাকার অনাদায়ি ঋণ আদায় হয়েছে। ইউনিয়নগুলির তোপ, আদায়ের অঙ্ক বলা হয়েছে। কিন্তু ওই সময়ে কত টাকা মুছে ফেলা হয়েছে তা বলা হয়নি। আদায়ের তথ্য দিয়ে সেই অঙ্ককে এড়ানো যায় না।