অমিত মিত্র
এক দিকে গণতন্ত্র, সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষুধা— এই তিন আন্তর্জাতিক সূচকে ভারতের পিছিয়ে থাকার পরিসংখ্যান। অন্য দিকে রাজ্যগুলিকে জিএসটি ক্ষতিপূরণ মেটানোর জন্য সেস খাতে আয়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও কেন্দ্রের পৌঁছতে না-পারা ও তার হাত ধরে ফের ক্ষতিপূরণ বাকি পড়ার আশঙ্কা। দেশের অর্থনীতির কাহিল চেহারা তুলে ধরে কেন্দ্রকে দুরমুশ করতে মঙ্গলবার এই জোড়া তোপ দাগলেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থ তথা শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র। একই সঙ্গে দাবি করলেন, এর মধ্যেও এ রাজ্যের বৃদ্ধির হার-সহ আর্থিক উন্নয়নের ছবিটা অত্যন্ত উজ্জ্বল।
এ দিন বণিকসভা সিআইআইয়ের পশ্চিমবঙ্গ শাখার বার্ষিক অনুষ্ঠানে অমিতবাবু ভারতের সার্বিক পরিস্থিতির প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূচকে দেশের পেছনের সারিতে দাঁড়ানোর তথ্য। সরব হন অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়েও। আর এই সব কিছুকেই লগ্নি না-আসার কারণ হিসেবে দেখিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করান মোদী সরকারকে।
গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে অমিতবাবুর দাবি, ‘‘আন্তর্জাতিক এক পত্রিকার গবেষণায় বিশ্বে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির সূচকে ভারত আরও ১০ ধাপ নেমে দাঁড়িয়েছে ৫১ নম্বরে। এটা বিপজ্জনক। লগ্নিকারী সব সময়েই স্থায়িত্ব চান।’’ অর্থনীতির হাল বোঝাতে শিল্পোৎপাদন কমা বা বেকারত্ব বাড়ার মতো দেশীয় নানা পরিসংখ্যানের পাশাপাশি এ দিন তিনি হাতিয়ার করেন ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের বিশ্বব্যাপী সামাজিক উন্নয়ন সূচক ও গত বছর প্রকাশিত বিশ্ব ক্ষুধা সূচককেও। স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মান কেমন ও তা কতটা মিলছে, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন কতটা হচ্ছে, কাজের সুযোগ ও মজুরি বাড়ছে কি না, নাগরিকদের সামাজিক সুরক্ষাই বা কতটা, এ সবের ভিত্তিতেই স্থির হয় সামাজিক উন্নয়ন সূচক। অমিতবাবু জানান, তাতে ৮২টি দেশের মধ্যে ভারত ৭৬তম। অন্য দিকে, ২০১৯ সালের ক্ষুধা সূচকে ১১৭টি দেশের মধ্যে ১০২ নম্বরে।
অর্থনীতির দুরবস্থা ব্যাখ্যা করতে রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের ঠিক সময়ে জিএসটি ক্ষতিপূরণ দিতে না-পারার কথাও বলেন অমিতবাবু। তাঁর আশঙ্কা, সেস বাবদ আয় বৃদ্ধির হার কমছে। ফলে ফের ক্ষতিপূরণ বাকি পড়তে পারে। তড়িঘড়ি জিএসটি চালু নিয়ে সরকারকে বিঁধে মন্ত্রীর দাবি, প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকির ঘটনা ঘটেছে। উপরন্তু প্রযুক্তিগত সমস্যায় রিটার্ন ঠিক সময়ে দাখিল করতে না-পারায় বিভিন্ন সংস্থার মোট ৪৬ হাজার কোটি জরিমানা হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, ত্রুটিপূর্ণ কর ব্যবস্থার জন্য সংস্থাকে কেন জরিমানা গুনতে হবে?