প্রতীকী ছবি।
ইউক্রেনের উপরে আগ্রাসনের জন্য মার্চের মাঝামাঝি রাশিয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রের উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল আমেরিকা এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে রাশিয়ায় উৎপাদিত অশোধিত তেল আমদানি। অথচ মস্কো থেকে তেল আমদানি কমানোর ব্যাপারে দিল্লি কোনও পদক্ষেপ না করলেও, আমেরিকা বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য করছে না কেন সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সে দেশের বিভিন্ন মহলে। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের সামনে এ ব্যাপারে ওয়াশিংটনের অবস্থান স্পষ্ট করলেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি। তিনি জানালেন, ভারত যে তেল আমদানি করে তার মাত্র ১%-২% আসে রাশিয়া থেকে। আর ভারত সেটা বাড়ানোর ব্যাপারেও বিরাট কোনও পদক্ষেপ করেনি।
অন্য দিকে বরং ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আমেরিকা যাতে উদ্যোগী হয়, সে জন্য জো বাইডেন প্রশাসনকে পরামর্শ দিয়েছেন বিরোধী রিপাবলিকান পার্টির এক গুরুত্বপূর্ণ সেনেট সদস্য। তেল নয়, আমেরিকার আশঙ্কা রাশিয়ায় উত্তোলন করা হিরে ভারত-সহ অন্যান্য দেশের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া ঘিরে।
বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার চাপে রাশিয়া যখন কিছুটা কোণঠাসা, তখন ভারতকে কম দামে তেল বিক্রি করতে চাইছে মস্কো। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি সম্প্রতি সেই তেল কিছুটা কিনেছেও। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারির কথায়, ‘‘রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি তাদের সামগ্রিক আমদানি চাহিদার মাত্র ১%-২%।... রাশিয়ার থেকে আমদানি কমানোর ফলে কোনও দেশের তেলের জোগানে যদি টান পড়ে, সে ক্ষেত্রে আমরা তাদের সাহায্য করতে তৈরি।’’ আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপ-পরামর্শদাতা দিলীপ সিংহ সম্প্রতি ভারত সফরে এসে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন সাকি।
এ দিকে, ভারত-অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্য চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে দিল্লির সঙ্গে এই ধরনের চুক্তির ব্যাপারে যথেষ্ট উদ্যোগী না হওয়ার জন্য বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন সেনেটের বৈদেশিক নীতি কমিটির সদস্য জিম রিচ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্য চুক্তি হওয়ায় আমি খুশি। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাণিজ্যকে শক্তিশালী করার জন্য আমেরিকারও উচিত এমন পদক্ষেপ করা। বাইডেন প্রশাসনের ব্যর্থতায় ওই অঞ্চলে আমাদের সম্পর্ককে আরও শক্তশালী করা যাচ্ছে না।’’ গত ফেব্রুয়ারিতে অবশ্য ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল জানান, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে কথা বলছে ভারত সরকার।
তবে রাশিয়ায় উত্তোলন হওয়া হিরে ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের মাধ্যমে রফতানি কী ভাবে আটকানো যায়, সে ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসনকে ভাবনাচিন্তা করার আবেদন জানিয়েছে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই দলই। বিদেশসচিব টনি ব্লিঙ্কেন এবং অর্থসচিব জ্যানেট ইয়েলেনকে দেওয়া এক চিঠিতে দুই দলের একটি গোষ্ঠী জানিয়েছে, রাশিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞার শর্তের মধ্যেই এই সংক্রান্ত ফাঁক রয়েছে। যার ফলে রাশিয়া তথা বিশ্বের বৃহত্তম হিরে উত্তোলন সংস্থা আলরোসার গায়ে কার্যত নিষেধাজ্ঞার কোনও আঁচ লাগছে না। বিশ্ব জুড়ে দিব্যি লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এই সংস্থায় রুশ সরকারেরও অংশীদারি রয়েছে। এই সংস্থা-সহ সারা বিশ্বে উত্তোলিত কাঁচা হিরের ৯০% কাটা এবং পালিশ করা হয় ভারতে। এই বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বাইডেন প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন ওই প্রতিনিধিরা।