—প্রতীকী চিত্র।
ইজ়রায়েল এবং হামাসের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে দুর্বল বাজার গত বৃহস্পতিবার হঠাৎই শক্তি ফিরে পায়। জানা যায়, আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভ এই দফায় সুদ বাড়াবে না। সুদ বাড়ানো থেকে বিরত থেকেছে ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ডও। এই খবরে উল্লসিত হয়ে বিশ্ব বাজার তেড়েফুঁড়ে ওঠে গত সপ্তাহের শেষ দিকে। কিছু দিন আগেই লাগাতার পড়ে ৬৩,১৪৯ অঙ্কে নেমে গিয়েছিল সেনসেক্স। গত শুক্রবার ফের তা ৬৪ হাজার পেরোয়। সপ্তাহের শেষ দু’দিনে সেনসেক্স ওঠে মোট ৭৭৩ পয়েন্ট। লগ্নিকারীদের ধারণা, সুদের হারের ঊর্ধ্বগতিতে এ বার দাঁড়ি পড়ল। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের ব্যারেল পিছু ৮৫ ডলারে নেমে আসাও শক্তি জোগায় সূচককে।
ভাল খবর দেশের ভিতর থেকেও এসেছে। অক্টোবরে জিএসটি আদায় ১৩% বেড়ে পৌঁছেছে ১.৭২ লক্ষ কোটি টাকায়। গত এপ্রিলে ১.৮৭ লক্ষ কোটির পরে এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম সংগ্রহ। উৎসবের মরসুমে গাড়ি বিক্রি বেড়েছে। ভাল ব্যবসা করেছে প্রথম সারির প্রায় সবক’টি সংস্থা। মারুতির বিক্রি ছুঁয়েছে প্রায় ২ লক্ষ। গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় ১৯% বেশি। হুন্ডাই, টাটা মোটরস, মহীন্দ্রা, টয়োটার গাড়িও ভাল মতো বিকিয়েছে। উন্নত আর্থিক ফল প্রকাশ করেছে বেশ কিছু সংস্থা। যেমন, জুলাই-সেপ্টেম্বরে স্টেট ব্যাঙ্কের নিট লাভ ৮% বেড়ে হয়েছে ১৪,৩৩০ কোটি টাকা, ব্যাঙ্ক অব বরোদার ২৮% বেড়ে ৪২৫৩ কোটি টাকা। তা ৪৪.৫% বেড়ে এল অ্যান্ড টি-র হয়েছে ৩২২৩ কোটি। ৫৬% বেড়ে গেল ইন্ডিয়ার নিট লাভ ছাড়িয়েছে ২৪০০ কোটি টাকা। অম্বুজা সিমেন্টের ক্ষেত্রে তা বেড়েছে ৩৬৩%। মুনাফা বেড়েছে সান ফার্মা, হিরো মোটোকর্প, টাইটান, এমআরএফ ইত্যাদি সংস্থারও। লোকসান থেকে মুনাফায় ফিরেছে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স। তবে ৬৫১১ কোটি টাকা ক্ষতি গুনেছে টাটা স্টিল। মুনাফা কমেছে ভারতী এয়ারটেলের।
সম্প্রতি কিছু শিল্প এবং পরিষেবা ক্ষেত্র থেকে খারাপ খবরও পেয়েছে বাজার। দেশের মূল আটটি পরিকাঠামোর উৎপাদন সেপ্টেম্বরে নেমেছে ৮.১ শতাংশে। যা চার মাসে সব থেকে কম। কারখানায় উৎপাদন সূচক আট মাসের ন্যূনতম হয়েছে। সেপ্টেম্বরের ৫৭.৫ থেকে শিল্পের পিএমআই সূচক অক্টোবরে নেমেছে ৫৫.৫-এ। শ্লথ হয়েছে পরিষেবা ক্ষেত্রও। অক্টোবরে পিএমআই পরিষেবা সূচক নেমে এসেছে ৫৮.৪-এ। সেপ্টেম্বরে ছিল ৬১।
বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল যখন ৭০-৭৫ ডলারে নেমেছিল, তখন ভারতে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম কমেনি। কারণ হিসেবে তেল বিপণন সংস্থাগুলির লোকসানকে তুলে ধরা হয়েছিল। এখন তারা বিপুল মুনাফায় ফিরেছে। ২০২২-এর জুলাই-অক্টোবরে ইন্ডিয়ান অয়েলের ২৭২ কোটি টাকা ক্ষতির জায়গায় এ বার লাভ হয়েছে ১২,৯৬৭ কোটি। তবু জ্বালানির দাম কমানোর কোনও লক্ষণ নেই। ইজ়রায়েল-হামাস সংঘর্ষ বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করায় দেশে জ্বালানির দাম কমার সম্ভাবনা আরও ফিকে হয়েছে।
মোদ্দা কথা, একগুচ্ছ ভাল খবর থাকলেও বাজারের পিছু ছাড়ছে না দুশ্চিন্তা। উৎসবের মরসুমে উৎপাদন এবং পরিষেবা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড আরও চাঙ্গা হওয়ার কথা। কিন্তু উল্টে শ্লথ হয়েছে। এটাই ভাবাচ্ছে বিভিন্ন মহলকে। তার উপর দেশে মূল্যবৃদ্ধির হার এখনও স্বস্তিজনক জায়গায় নামেনি। বাজারে আনাজপাতি কিনতে গিয়ে সাধারণ রোজগেরে গৃহস্থ তা ভাল মতোই টের পাচ্ছেন। আর কয়েক দিনের মধ্যে প্রকাশিত হবে খুচরো বাজারে অক্টোবরের মূল্যবৃদ্ধির পরিসংখ্যান। এর ঠিক পরে রয়েছে দিওয়ালি। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বাজারের চঞ্চল থাকারই আশঙ্কা।
(মতামত ব্যক্তিগত)