প্রতীকী ছবি।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক দু’দফায় রেপো রেট ৯০ বেসিস পয়েন্ট (যে সুদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় তারা) বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণে মোটা হারে সুদ বাড়াতে দেখা গিয়েছে। ফলে গাড়ি, বাড়ি, ব্যক্তিগত-সহ প্রায় সব ঋণের মাসিক কিস্তির খরচ বেড়েছে। কিন্তু ব্যাঙ্কে সাধারণের আমানতে এইগতিতে সুদ বাড়েনি। মঙ্গলবার স্টেট ব্যাঙ্ক ২ কোটি টাকার কম জমায় নির্দিষ্ট কিছু মেয়াদে মাত্র ২০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত সুদের হার বাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, ঋণের সুদ যে হারে বেড়েছে তার তুলনায় এটা সামান্য।
স্টেট ব্যাঙ্ক অবশ্য ২ কোটি টাকার বেশি জমায় সুদ বাড়িয়েছে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট। তবে প্রশ্ন উঠেছে, সেই আমানত ক’জনের থাকে? এতে বঞ্চিত হলেন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষ।
আর্থিক এবং ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞদের দাবি, সুদ কম থাকায় আমানত আকর্ষণ হারাচ্ছে। তবে তাতে ব্যাঙ্কগুলির যায়-আসে না। ঋণে সুদ বাড়িয়ে আয় বাড়াচ্ছে তারা। বন্ধন ব্যাঙ্কের কর্ণধার চন্দ্রশেখর ঘোষ বলছেন, ‘‘সুদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ঋণ ও আমানতের তুলনা চলে না। ব্যাঙ্কের নগদ দরকার হলে তবেই তারা আমানতকারীদের উৎসাহ দিতে জমায় সুদ বাড়াবে। এখন ঋণের চাহিদা কম। তহবিল যথেষ্ট।’’
আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্তের মতে, ‘‘প্রায় সব ব্যাঙ্কেই জমায় সুদ মূল্যবৃদ্ধির হারের তলায়। অর্থাৎ সুদেরআয় শূন্যের নীচে। ফলে খরচ সামলাতে পারছেন না সুদ নির্ভর মানুষ। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকেরা।’’ ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি দেবব্রত সরকার বলেন, ‘‘স্থায়ী আমানতের থেকে বন্ডে লগ্নি লাভজনক। সরকারি ঋণপত্রে প্রায় ৭.৫% পর্যন্ত সুদ (কুপন রেট) মিলছে।’’ তবে ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেনের আশ্বাস, ‘‘বন্ডের বাজার চাঙ্গা হলে লগ্নিকারীরা সেখানে ঝুঁকতে পারেন। ফলে ব্যাঙ্কে আমানতকারী কমতে পারে। এই অবস্থায় একটা সময়ের পরেতারা সুদ বাড়াতে বাধ্য হতে পারে।’’
পটনা আইআইটি-র অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিকের মন্তব্য,‘‘মূল্যবৃদ্ধি কমাতে চাহিদাকে দুর্বল করা হচ্ছে। তাই ঋণের খরচ বাড়ছে। ফিক্সড ডিপোজ়িটের ভরসায় সংসার চালানো মানুষও সুদ না বাড়লে খরচ বাড়াতে পারবেন না। কিন্তু জোগানের সমস্যায় যে মূল্যবৃদ্ধি মাথাচাড়া দিয়েছে, তাকে চাহিদা কমিয়ে বাগে আনার চেষ্টায় অর্থনীতির বড় ক্ষতি হতে পারে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।