এক দিকে নোটের আকাল। অন্য দিকে বেসরকারি উদ্যোগের পরিবর্তে রাজ্য সরকারের নিজস্ব মদপাইকারি ব্যবস্থা তৈরির সিদ্ধান্ত। এই জোড়া সঙ্কটে বিপর্যস্ত রাজ্যের পাইকারি মদের ব্যবসা। সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, এর ফলে রুজি-রুটি হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন এই ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত কর্মীরা। ইতিমধ্যেই দুশ্চিন্তায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এ রকম দুজনের মৃত্যুও হয়েছে বলে দাবি তাদের। অস্তিত্ব রক্ষার শেষ চেষ্টা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে আর্জি জানিয়েছে পাইকারি বিক্রেতারা।
সম্প্রতি রাজ্য জানিয়েছে, বেসরকারি মদ-পাইকারি ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হবে। পরিবর্তে সরকার নিগম তৈরি করে নিজেই এই ব্যবসা সামলাবে। যে ভাবে নিগম করে তা চালায় তামিলনাড়ু, ওড়িশা, কর্নাটক ও ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্য। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল। কারণ, রাজ্য জুড়ে মদ পাইকারি ব্যবসা ১০২টি। সূত্রের হিসেব, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই ব্যবসায় জড়িয়ে ১৭ হাজার মানুষ। নতুন ব্যবস্থায় যাঁরা কাজ হারানোর ভয়ে রয়েছেন।
মদ ব্যবসায়ীদের দাবি, যে সব রাজ্যে নিগম আছে, সেখানে এই ব্যবসায় ঢালাও কারচুপি ও বেআইনি কাজকর্ম চলত। ফলে মার খেত সরকারি রাজস্ব। কিন্তু এ রাজ্যে মদ বিক্রিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ ১০০%। তার উপর ই-আবগারি চালু হওয়ায় কর জমার পুরো প্রক্রিয়াই অনলাইনে হয়। ফলে সরকারি আয় মার যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সংশ্লিষ্ট ওই মহলের হিসেব, সব মিলিয়ে এ রাজ্য ৪,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব পায়। বার্ষিক ১৮% হারে যা বাড়ছে। যেখানে অন্য যে সব রাজ্যে সরকারি পাইকারি ব্যবস্থা চালু হয়েছে, সেখানে রাজস্ব বৃদ্ধির হার ১০%। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, ২% লভ্যাংশ নিয়ে কাজ করেন তাঁরা। অর্থাৎ বছরে লাভ প্রায় দেড়শো কোটি।
সমস্যার আশঙ্কা দোকানি বা খুচরো ব্যবসায়ীদেরও। এখন পাইকারি ব্যবসায়ীদের থেকে তাঁরা ধারে কিনতে পারেন। সরকারি ব্যবস্থা চালু হলে নগদে কিনতে হবে। নোট বাতিলের জেরে তৈরি নগদের আকালে যা চাপ বাড়াবে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
প্রশ্ন উঠেছে পাইকারি ব্যবস্থার এই পরিকাঠামো তৈরির যুক্তি নিয়েও। আর্থিক টানাটানিতে জেরবার রাজ্য সেই খরচ কি করে জোগাবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে সরকারের অন্দরেও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, এ রকম পরিকাঠামো গড়তে লাগবে অন্তত ৪০০ কোটি। সরকারি নিগম চালানোর খরচও কম নয়। পুরো পরিস্থিতির সঠিক ছবি তুলে ধরতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চায় ওয়েস্ট বেঙ্গল লিকার ম্যানুফ্যাকচারার্স, ডিস্ট্রিবিউটার্স অ্যান্ড বটলার্স অ্যাসোসিয়েশন। তাঁদের আশা, মুখ্যমন্ত্রীকে জানালে সিদ্ধান্ত বিবেচনা করে দেখবে সরকার।