প্রতীকী ছবি।
যে হারে বিমান পরিবহণে লোকসান বাড়ছে, তাতে অচিরেই ভারতের এক বা একাধিক উড়ান সংস্থা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করল সেন্টার ফর এশিয়া প্যাসিফিক এভিয়েশন (কাপা)। তারা বলছে, ভারতে সব থেকে বেশি উড়ান চালানো এবং এ দেশের আকাশের সব থেকে বেশি অংশ দখলে রাখা ইন্ডিগোও ১০% কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে, সেটা পরিষ্কার।
উড়ান সংস্থাগুলির যা হাল, তাতে অবিলম্বে সেখানে লগ্নি জরুরি বলে মনে করছে কাপা-সহ সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, ধুঁকতে থাকা উড়ান সংস্থায় নতুন করে পুঁজি ঢালবে কে? কী ভাবেই জোগাড় হবে সেই তহবিল? ফলে ছাঁটাইয়ের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে খরচ কমানোর পথে হাঁটছে তারা। যা আগামী দিনে আরও বাড়ার আশঙ্কা। একই পথে হেঁটেছে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ার ইন্ডিয়াও (এআই)।
সঙ্কটে উড়ান
• অতিমারির আগেই ধাক্কা খেয়েছে বিমান শিল্প।
• বন্ধ হয়েছে কিংফিশার, জেট এয়ারওয়েজের মতো এক সময়ের জনপ্রিয় সংস্থা।
• করোনা সংক্রমণে মাস দুয়েকের জন্য স্তব্ধই হয়ে গিয়েছিল পরিষেবা।
• ক্রিসিলের সমীক্ষা অনুযায়ী, আগামী দুই অর্থবর্ষে দেশীয় বিমান সংস্থাগুলির ১-১.৩ লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে।
• একই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ৪০-৪৫ শতাংশের বেশি যাত্রী হবে না ঘরোয়া উড়ানের।
• খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাই, বেতন কমানো, বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠানোর মতো পদক্ষেপ করছে বিভিন্ন সংস্থা।
বিতর্কে এআই
• বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠানোর জন্য কর্মী চিহ্নিত করবে এয়ার ইন্ডিয়া (এআই)।
• কর্মদক্ষতা, শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে এই কাজ করার জন্য বিভাগীয় প্রধান এবং আঞ্চলিক ডিরেক্টরদের নির্দেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
• কর্মীরা স্বেচ্ছায় এই প্রকল্পে যোগ দিতে পারেন।
• বিমানমন্ত্রীর কাছে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ইউনিয়নগুলি।
ধাক্কা ইন্ডিগোয়
• ২৩,৫০০ কর্মীর মধ্যে ১০ শতাংশকে বসানোর সিদ্ধান্ত বৃহত্তম দেশীয় উড়ান সংস্থা ইন্ডিগোর।
• কাপার বক্তব্য, এখন যা অবস্থা, তাতে নতুন কোনও লগ্নিকারী বিমান সংস্থাগুলিতে টাকা ঢালবে না। ফলে এমন আরও কঠোর সিদ্ধান্ত অদূর ভবিষ্যতে নিতে হবে সংস্থাগুলিকে।
করোনা সংক্রমণে এআইয়ের পাঁচ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কর্মীদের আক্ষেপ, চাকরি রাখাই যে দায়! তাঁদের একাংশকে বাধ্যতামূলক ভাবে বেতনহীন ছুটিতে পাঠানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এআই, তাকে ‘ন্যক্কারজনক’ তকমা দিয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে ইউনিয়নগুলি। কর্মীদের ছ’টি সংগঠন বিমানমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীকে চিঠি লিখে বলেছে, এমন প্রকল্প ‘বেআইনি’। এখনই তা বন্ধের নির্দেশ দিক কেন্দ্র।
গত ১৪ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তিতে এআই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বাছাই করা কর্মীদের বেতনহীন ছুটিতে পাঠানো হবে। বিশেষত যাঁরা অসুস্থ, কর্মক্ষমতা কম তাঁদের। ছুটি হতে পারে পাঁচ বছর পর্যন্ত। এ নিয়ে প্রথমে পাইলট সংগঠন আপত্তি তোলে। কর্মীদের অন্যান্য ছ’টি সংগঠন পুরীকে লেখা চিঠিতে বলেছে, কেউ স্বেচ্ছায় বেতনহীন ছুটি চাইলে অন্য কথা। কিন্তু কোনও ভাবেই বাধ্য করা যাবে না। আগে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।