হারা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুব্রত রায়। —ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ রোগভোগের পরে গতকাল রাতে মারা গিয়েছেন সহারা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুব্রত রায়। তার পরেই নতুন করে চর্চায় উঠে এসেছে সেবি-সহারা অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকা ২৫,০০০ কোটি টাকা। যা এখনও ফেরত দেওয়া যায়নি লগ্নিকারীদের। সেই প্রক্রিয়া অত্যন্ত ঢিমেতালে চলছে বলে অভিযোগ উঠেছিল আগেই। এ বার সহারা কর্তার প্রয়াণের পরে উঠেছে প্রশ্ন, ওই পুঁজির ভবিষ্যৎ কী? তা সমস্ত লগ্নিকারীকে আদৌ ফেরানো যাবে তো?
বেআইনি অর্থ লগ্নি প্রকল্পের (পনজ়ি) মাধ্যমে কোটি কোটি লগ্নিকারীর থেকে টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছিল সহারার বিরুদ্ধে। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে তারা অবশ্য আইন ভাঙার অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছে। ২০১১ সালে বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি সহারার দুই সংস্থাকে (সহারা ইন্ডিয়া রিয়েল এস্টেট কর্পোরেশন ও সহারা হাউসিং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন) তিন কোটি লগ্নিকারীর টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়। অভিযোগ, ঋণপত্রের (অপশনালি ফুললি কনভার্টিবল বন্ড বা ওএফসিডি) মাধ্যমে বেআইনি ভাবে তাঁদের থেকে টাকা তোলা হয়েছিল। আইনি লড়াইয়ের শেষে ২০১২-র ৩১ অগস্ট সেবির নির্দেশ বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। জানায়, ১৫% সুদ-সহ মূলধন ফেরাতে হবে লগ্নিকারীদের। এ জন্য সহারাকে সেবির কাছে ২৪,০০০ কোটি টাকা জমার নির্দেশও দেওয়া হয়। সুব্রতর গোষ্ঠী অবশ্য দাবি করে, ৯৫ শতাংশের বেশি লগ্নিকারীকে সরাসরি টাকা ফিরিয়েছে তারা।
সেবির সর্বশেষ বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ১১ বছরে সহারার দুই সংস্থার লগ্নিকারীদের মাত্র ১৩৮.০৭ কোটি টাকা ফেরাতে পেরেছে তারা। অথচ জমে থাকা তহবিলের সঙ্গে সুদ যোগ হয়ে আমানতের অঙ্ক ২৫,০০০ কোটি ছাড়িয়েছে। রিপোর্টে আরও বলছে, ৫৩,৬৮৭টি অ্যাকাউন্টের লগ্নির টাকা ফেরত চেয়ে এ পর্যন্ত ১৯,৬৫০টি আর্জি জমা পড়েছে। তার মধ্যে ১৭,৫২৬টির প্রেক্ষিতে ৪৮,৩২৬টি অ্যাকাউন্টের মোট ১৩৮.০৭ কোটি টাকা ফেরানো হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ফেরানো হয়েছে সাকুল্যে ৭ লক্ষ। আর সুদ হিসেবে আমানত বেড়েছে ১০৮৭ কোটি। পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এবং সেবির নির্দেশিকা কার্যকর করে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সহারার ১৫,৬৪৬.৬৮ কোটি।
অন্য দিকে, গত অগস্টে সহারার চারটি সমবায় সমিতির আমানতকারীদের মোট ৫০০০ কোটি টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেন্দ্র। টাকা পাওয়ার আবেদনের জন্য সিআরসিএস-সহারা রিফান্ড পোর্টাল চালু করেছেন সমবায়মন্ত্রী অমিত শাহ। এখনও পর্যন্ত ১৮ লক্ষ আমানতকারী সেই পোর্টালে নাম নথিবদ্ধ করেছেন।