বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণে বিমানবন্দর লাগোয়া চা বাগানের জমির লিজ ফেরতের প্রস্তুতি। —ফাইল চিত্র
বাগডোগরা বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণ এবং সম্প্রসারণের জন্য প্রস্তাবিত জমির অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল পুরোদমে। প্রশাসন সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহেই বিমানবন্দর লাগোয়া চা বাগানের জমির একাংশের লিজ ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। গত সপ্তাহেই বাগান কর্তৃপক্ষকে লিজের নথিপত্র জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরে জমা করার জন্য বলা হয়েছে। তা হয়ে গেলেই জমিটি ফেরত নিয়ে এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (এএআই) হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলবে।
সম্প্রসারণের জন্য প্রস্তাবিত ১০৪ একরের মধ্যে ৯৪ একর জমিতে রয়েছে চা বাগান। সেখানে লাগানো চা গাছ, ছায়া গাছ বাবদ যে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক দাঁড়াবে তা চা বাগান গোষ্ঠীটিকে দেওয়া হবে। বাকি জমি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। গত দু’সপ্তাহে মালিকপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। তা দেওয়ার পরে গোটা জমি এএআইকে রাজ্য দিয়ে দেবে। এর জন্য সরকারের ৩.৬৫ কোটি টাকার মত খরচ হবে।
দার্জিলিঙের জেলাশাসক দীপাপ প্রিয়া পি বলেন, ‘‘বাগান কর্তৃপক্ষকে এই সপ্তাহের মধ্যেই লিজের নথিপত্র জমা করতে বলা হয়েছে। তা হয়ে গেলেই জমি ফেরত নিয়ে অধিগ্রহণ করে তা এএআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার কাজ শুরু হবে।’’ তিনি জানান, বাকি জমির মালিকেরা রাজি হয়েছেন। ওঁদের ক্ষতিপূরণের অঙ্কের বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে অনুমোদন করার জন্য বলা হয়েছে। বিমানবন্দর অধিকর্তা সুব্রমণি পি বলেন, ‘‘সম্প্রতি প্রশাসন, ভূমি দফতরের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়ে গিয়েছে। খুব দ্রুত আমরা জমি পেয়ে যাব বলেই মনে হচ্ছে।’’
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটে গত কয়েক বছর ধরে আটকে রয়েছে বাগডোগরা বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের কাজ। প্রথমে এএআই কর্তৃপক্ষ ১০৪ একরের অনেক বেশি পরিমাণ জমি চেয়েছিল। বিমানবন্দরের সামনের অংশে দু’টি চা বাগান, বায়ুসেনার জমি খতিয়ে দেখে পরিকল্পনার নকশা তৈরি হয়। প্রায় ৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে এএআই আগেই ঘোষণা করে রেখেছিল। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই এলাকায় রাজ্যের হাতে কোনও জমি নেই। অধিকাংশই চা বাগানকে লিজে দেওয়া। ক্ষতিপূরণের টাকা কেন্দ্র বা এএআই-কেউ দিতে হবে। এর বেশ কয়েকমাস পরে এএআই বোর্ড ঠিক করে তারাই প্রকল্পের টাকা থেকে ২৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের জন্য রাখবেন। এএআইয়ের এমন সিদ্ধান্ত দেশের মধ্যে প্রথম।
এরপরে ঠিক হয় গঙ্গারাম চা বাগানের ৯৪ একর জমি ছাড়াও বাকি ১০ একর পেতে কিছু রায়তি জমি নেওয়া হবে। সম্প্রসারণের কাজের জন্য প্রতিরক্ষা দফতরের কয়েক একর জমিও নেওয়া হবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জমি দিতে রাজি হয়। গঙ্গারাম চা বাগানে দুই হাজার একরের মত লিজ জমি রয়েছে। সেখান থেকে লিজ ফেরত নিয়ে ৯৪ একরের মত নেওয়া হবে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বাগানের মালিকপক্ষ প্রথম দিকে রাজি না হয়ে হাইকোর্টে যায়। রাজ্য ওই চা বাগান গোষ্ঠীকে জানিয়ে দেয়, ২ হাজারের একরের মধ্যে মাত্র ৯৪ একর জনস্বার্থে নেওয়া হবে। পরে অবশ্য জটিলতা হয়নি। হাইকোর্টের রায়ও সরকারের পক্ষেই থাকে।