গৌতম আদানি। —ফাইল চিত্র।
দরপত্রের মাধ্যমে দেশের ছ’টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্ব হাতে নিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। বিপুল ব্যবসাও করছে সেখানে। সংবাদমাধ্যমের খবর, আদানি এন্টারপ্রাইজ়েসের প্রতিনিধি এক ‘প্রেজ়েন্টেশন’-এ দাবি করেছেন, নির্বাচনের পরে ছোট-বড় মিলিয়ে আরও ৩০-৩৫টি বিমানবন্দরের বেসরকারিকরণ করবে কেন্দ্র। তার মধ্যে অন্তত ২৫টি হাতে নিতে আগ্রহী আদানি এয়ারপোর্ট হোল্ডিংস। সেই অনুযায়ী দরপত্র পেশ করবে তারা। এই খবর প্রকাশের পরেই মোদী সরকার এবং গৌতম আদানির সংস্থার বিরুদ্ধে তেড়েফুড়ে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের হুঁশিয়ারি, কেন্দ্রে নতুন সরকার গঠনের পরে আদানি গোষ্ঠীর এই পরিকল্পনা সফল তো হবেই না। উল্টে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গঠন হবে।
২০১৯ সালের নিলামে ত্রিবান্দ্রম, ম্যাঙ্গালুরু, আমদাবাদ, জয়পুর, লখনউ এবং গুয়াহাটি বিমানবন্দর হাতে নেয় আদানি গোষ্ঠী। আর ২০২১ সালে জিভিকে-র হাত থেকে নেয় মুম্বই বিমানবন্দর। সব মিলিয়ে ভারতের ২৩% বিমানযাত্রীকে পরিষেবা দেয় তারা। সংস্থা সূত্রের খবর, মুম্বই বিমানবন্দরের ভার কমানোর জন্য শীঘ্রই নবি মুম্বই থেকে পরিষেবা চালু করতে চাইছে তারা। এই অবস্থায় সংবাদমাধ্যমের খবর, সংস্থার ‘প্রেজ়েন্টেশন’-এ আদানি এন্টারপ্রাইজ়েসের চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার দাবি করেছেন, নির্বাচনের পরে ফের বিমানবন্দর বিক্রি করবে কেন্দ্র। তার মধ্যে থাকবে চেন্নাই, ভুবনেশ্বর, অমৃতসর এবং বারাণসীর মতো বড় বিমানবন্দর। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছোট বিমানবন্দরও তালিকায় থাকবে। একসঙ্গে ‘বান্ডল’ হিসেবে দরপত্র পেশ করলে অপেক্ষাকৃত কম খরচে বেশি বিমানবন্দর হাতে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে সংস্থা।
আদানি এন্টারপ্রাইজ়েসের চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার সৌরভ শাহ বলেছেন, ‘‘ভোটের পরে বিমানবন্দর বেসরকারিকরণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রের আমরা নিশ্চিত ভাবে দরপত্র পেশ করব। যেখানে আমাদের পক্ষে ব্যবসা চালানো সহজ, সে দিকেই নজর থাকবে আমাদের। এই প্রসঙ্গে বিরোধীদের অভিযোগ, সাধারণ মানুষের করের টাকায় যে সমস্ত বিমানবন্দর তৈরি হয়েছে, সেগুলি ‘বন্ধু শিল্পপতির’ হাতে তুলে দিতে চাইছে মোদী সরকার। আর সেই শিল্পপতির সংস্থাই এই পরিকল্পনা ফাঁস করেছে।
মঙ্গলবার কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ এক্স-এ এই সংবাদ প্রতিবেদন পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর কৃপা ইতিমধ্যেই আদানি গোষ্ঠীকে দেশের একমাত্র বেসরকারি বিমানবন্দর পরিচালকে পরিণত করেছে। এ বার সেই আদানি মোদী সরকারের আরও ২৫টি বিমানবন্দর বেসরকারিকরণের পরিকল্পনার কথা ফাঁস করে দিয়েছে। এই সরকারি সম্পত্তিতে সাধারণ মানুষের বিপুল করের টাকা জড়িয়ে রয়েছে। আর সেই সমস্ত বিমানবন্দর যৎসামান্য টাকায় টেম্পো ম্যানকে বিক্রি করা হচ্ছে।’’ রমেশের আরও বক্তব্য, ‘‘কিন্তু বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর বন্ধু দুর্ভাগ্য, ইন্ডিয়া জনবন্ধন সরকার মোদানি কেলেঙ্কারির জেপিসি তদন্ত করাবে।’’ এ দিকে, এ দিনই আবাসন সংস্থা রেডিয়াস এস্টেট অধিগ্রহণের জন্য আদানি গুডহোমসের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে এনসিএলটির আপিল ট্রাইবুনাল এনসিএলএটি। তবে এখানে ঋণদাতাদের ৯৩% বকেয়া ঋণ ছেড়ে দিতে হচ্ছে। দু’টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর বিরুদ্ধে আবেদন জানালেও এনসিএলএটি তা খারিজ করেছে।