ছবি: সংগৃহীত।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির কর্মী-অফিসারদের ১৫% বেতন বাড়ানোর চুক্তি হয়েছে সম্প্রতি। দীর্ঘ তিন বছর পার করে দাঁড়ি পড়েছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সংগঠন ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ) এবং কর্মী-অফিসারদের ইউনিয়নগুলির যৌথ মঞ্চ ইউনাইটেড ফোরাম অব ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন্সের (ইউএফবিইউ) আলোচনায়। তবে সেই সঙ্গে দু’পক্ষের সম্মতিক্রমেই নতুন পথে পা রেখেছে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। এই প্রথম ব্যাঙ্কের পারফরম্যান্স বা মুনাফার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে কর্মী-অফিসারদের বছরে বাড়তি ভাতার ব্যবস্থা। চুক্তিতে বলা হয়েছে এটি ‘পারফরমেন্স লিঙ্কড ইনসেন্টিভ’ (পিএলআই)। ব্যাঙ্কিং মহলের দাবি, পিএলআই এর আগে কখনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে দেখা যায়নি। কর্তৃপক্ষ মহলের দাবি, এই মুহূর্তে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মুনাফা বাড়ানো জরুরি। সেই লক্ষ্যে কর্মীদের উঠেপড়ে লাগার জন্য উৎসাহিত করতেই এক ঢিলে দুই পাখি মারার এই কৌশল।
একাংশের অবশ্য দাবি, বাধ্য হয়েই এই বদলের রাস্তা ধরল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। আপাতত ব্যাঙ্কের লাভের উপর ভিত্তি করে কর্মীদের বাড়তি উৎসাহ ভাতা আয়ের পথ খোলা হল। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য, আগামী দিনে বেসরকারি ব্যাঙ্কের মতো ব্যক্তিগত কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতে বেতন বৃদ্ধি। এমনকি ব্যাঙ্ক ইউনিয়নের একাংশেরও সেটাই ধারণা।
তবে একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, বিপুল অনুৎপাদক সম্পদের বোঝায় বহু দিন ধরেই বেহাল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, করোনার জেরে তা আরও বাড়তে পারে। এমন এক সময় এই বেতন বৃদ্ধি অনেক ব্যাঙ্ককে আরও আর্থিক চাপে ফেলবে না তো! বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষ মানছেন, আগামী দিনে চাপ হতে পারে। তবে কর্মী ইউনিয়নগুলির যুক্তি, দেউলিয়া আইনে বকেয়া আদায়ের ক্ষেত্রে গড়ে ৫৫% টাকা ছেড়ে দিয়ে রফা করছে ব্যাঙ্কগুলি। ১০ বছরে ১.৬৮ লক্ষ কোটির বকেয়া ঋণ মোছা হয়েছে হিসেবের খাতা থেকে। সেই তুলনায় এই বেতন বৃদ্ধি বাবদ বছরে ব্যাঙ্ক শিল্পের মোট ৭৮৯৮ কোটি তো নগন্য।’’
এক ঝলকে
• ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর থেকে সব রাষ্ট্রায়ত্ত ও কিছু পুরনো বেসরকারি ব্যাঙ্কে কর্মীদের বেতন বেড়েছে ১৫%।
• এর উপর তাঁরা বছরে অতিরিক্ত ভাতা পাবেন ব্যাঙ্কটির মুনাফার নিরিখে। যা ব্যাঙ্কের ‘পারফরমেন্স লিঙ্কড ইনসেন্টিভ’ (পিএলআই)।
পিএলআই-এর হিসেব
• প্রতি অর্থবর্ষের আগের বারের থেকে কোনও ব্যাঙ্কের মোট মুনাফা ৫ শতাংশের কম হলে, তার কর্মী-অফিসারেরা পিএলআই পাবেনই না।
• মোট মুনাফা ৫ থেকে ১০ শতাংশ হলে, পাবেন ৫ দিনের মূল বেতন ও মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ।
• মোট মুনাফা ১০ শতাংশের বেশি থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত হলে, মিলবে ১০ দিনের মূল বেতন ও ডিএ। তবে ব্যাঙ্কটিকে নিট লাভও করতে হবে। না-হলে পিএলই হিসেবে পাবেন ৫ দিনের বেতন এবং ডিএ।
• ব্যাঙ্কের মোট মুনাফা ১৫ শতাংশের বেশি হলে কর্মী-অফিসারেরা পাবেন ১৫ দিনের মূল বেতন ও ডিএ। এ ক্ষেত্রেও পিএলআই পেতে নিট লাভ করতে দেখার শর্ত আছে। না-হলে বাড়তি আয় ওই ৫ দিনের বেতন, ডিএ।
• চলতি আর্থিক বছর থেকেই চালু হবে পিএলআই প্রথা।
অন্য কিছু সুবিধা
• ৫৫ বছর পর্যন্ত বয়সের কর্মীরা বছরে ৫ দিনের ছুটি বিক্রি করতে পারবেন। তার বেশি বয়স হলে ৭ দিন।
• পেনশন প্রকল্পে (এনপিএস) কর্মী ও কর্তৃপক্ষের দেয় টাকা ১০% থেকে বেড়ে ১৪%।
• নীতিগত ভাবে পারিবারিক পেনশনের পরিমাণ ৩০% বাড়াতে রাজী আইবিএ। কার্যকর হবে কেন্দ্র সায় দিলে।
• আলোচনা চলছে প্রতি সপ্তাহে স্থায়ী ভাবে দু’দিন ছুটি চালু নিয়ে।
বেতন চুক্তি অনুযায়ী ব্যাঙ্ক কর্মীদের জন্য চালু হয়েছে আরও বেশ কিছু সুবিধা। তবে এআইবিইএ-র সভাপতি রাজেন নাগর জানান, ‘‘সপ্তাহে ৫ দিন কাজ এবং অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে এখনও ফয়সালা হয়নি। আলোচনা চলছে।’’
চুক্তিতে সই করেছে ৮টি ইউনিয়ন। যার মধ্যে নেই ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ় ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (বেফি)। বেফির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস বসু চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের দীর্ঘ দিনের বেশ কিছু দাবি ছেড়ে দিয়ে চুক্তি হয়েছে। তাই সই করিনি। ৫ দিনের সপ্তাহ বা পেনশন বৃদ্ধির বিষয়গুলি নীতিগত ভাবেও মানেনি আইবিএ। ওগুলি আদৌ হবে কি না সন্দেহ।’’ বেফির অভিযোগ, কৌশলে আইবিএ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কাজের ভিত্তিতেই আংশিক ভাবে বার্ষিক আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা চালু করল।