ব্যক্তির জন্মছক তাঁর জন্মের মুহূর্তে আকাশের একটা নীল নকশা। বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্রের নয় গ্রহ প্রত্যেক ব্যক্তির জন্মছকের এক একটা ঘরের (ভব) মধ্যে অবস্থান করে। কারও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অমূল্য অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করা ছাড়াও, গ্রহের স্থান নির্ধারণ করে ব্যক্তি কী ভাবে সংযুক্ত থাকে এবং কী ভাবে তার চার পাশের জগতের সঙ্গে সহাবস্থান বা প্রতিক্রিয়া করে। কোনও ব্যক্তির জন্মছকের ১২টা ঘর তাঁর অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের রোডম্যাপ। আকাশের গ্রহগুলো এই ঘরগুলো জুড়ে গমনের সঙ্গে সঙ্গে জাতক-জাতিকার জীবনে বাস্তবিক ও সংবেদনশীল নানা ধরনের বিষয়ের সূত্রপাত হয়। রাষ্ট্রপতি পুরষ্কারপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্রবিদ ডাঃ সোহিনী শাস্ত্রীর কাছ থেকে আমরা এই বিষয়ে একটা সম্যক ধারণা নিতে পারি।
রাশিফলের প্রতিটা ঘর একটা অনন্য অর্থ বহন করে এবং জীবনের একটা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রকৃতপক্ষে, বারোটা ঘরই জ্যোতিষশাস্ত্রকে এত দর্শনীয় করে তুলেছে। এই ঘরগুলো কী ভাবে কাজ করে, তা মোটামুটি একটা জটিল বিষয় বলা যেতে পারে। এখানে আমরা দ্বাদশ ঘরের বিষয়ে আলোকপাত করব।
বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্রে দ্বাদশতম ঘর:
জন্মছকের দ্বাদশতম ঘর প্রতিনিধিত্ব করে ব্যক্তির অবচেতন মন এবং গোপনীয়তা প্রকৃতির। বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্রে এটা ব্যয়াভাব নামে পরিচিত। ক্ষতি, মুক্তি, বিচ্ছিন্নতা এবং পতনের ঘর বলে পরিচিত এই ঘর।
উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং উন্নতির ঘর হিসাবে দ্বাদশতম ঘরকে ব্যাখ্যা করা হয়। এই ঘর দুঃখ, অপচয়, ব্যয়, ঐশ্বরিক জ্ঞান, সহানুভূতি, মোক্ষ (চূড়ান্ত মুক্তি) এবং মৃত্যুর পরের জীবনকে নির্দেশিত করে। এটা নির্লিপ্ততার ঘরও বলে বলা যেতে পারে।
এই ঘর ব্যক্তিকে বিভিন্ন উপায়ে ব্যয় বহন করতে বাধ্য করে। যখন গ্রহগুলো দ্বাদশতম ঘরে স্থানান্তরিত হয়, তখন সেই ব্যক্তি জীবনের কর্মময় ব্যক্তিদের আকৃষ্ট করে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে সমস্ত সম্পর্ক স্থায়ী হয় না।
শেষ ঘর হওয়ায়, দ্বাদশ ঘর মোক্ষের সঙ্গেও সম্পর্কিত হয় যার অর্থ জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে চূড়ান্ত মুক্তি। এটা চূড়ান্ত শান্তি ও প্রশান্তি লাভের দরজা খুলে দেয়। এক জন ব্যাক্তির জীবন যখন শেষের কাছাকাছি আসে এবং পরবর্তী জন্মে একটা উন্নত জীবন অর্জনের উদ্দেশ্য পূরণ করার চেষ্টা করে, তখন এটা বিশ্বাস করা হয় যে জীবনকে আধ্যাত্মিক ভাবে উন্নত না করলে সময়ের অপচয় হয়।
কালপুরুষ চক্রে দ্বাদশ ঘর এবং ভাব আমাদের জীবনে আয়-ব্যয়,কর্মজীবনে কি প্রভাব ফেলে - ডাঃ সোহিনী শাস্ত্রী
কুণ্ডলীর ১২শ তম ঘরে বিভিন্ন গ্রহের অবস্থান – তাৎপর্য এবং প্রভাব:
-
সূর্য বা রবি: দ্বাদশ ঘরে সূর্যের অনুকূল অবস্থান ব্যক্তির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে, চ্যালেঞ্জগুলো পরিচালনা করতে এবং সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে এবং পেশাদার জীবনে অনেক সাফল্য পায়। আয়ের নিশ্চিন্ততা এদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি। এরা অন্যের কাছ থেকেও অনেক আঘাত পায়, ভালবাসার মর্যাদা পায় না। এরা কখনও কখনও সামাজিক মানহানির শিকারও হয়। এরা ডান চোখের অসুখে ভুগতে পারে। এদের অন্তর্দৃষ্টি শক্তি উচ্চতর হতে পারে। কিন্তু সূর্য পীড়িত হলে জীবনে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতে পারে।
-
চন্দ্র: দ্বাদশ ঘরে যাদের চন্দ্র অবস্থান করে, সেই সকল ব্যক্তিদের মানসিক ভারসাম্য কম হয়। এরা হতদরিদ্রদের কল্যাণে কাজ করতে পছন্দ করে, যত্নবান হয়। অত্যধিক দিবাস্বপ্ন দেখা এবং কল্পনা করা এই জাতীয় ব্যক্তিদের মধ্যে সাধারণ। এরা খুবই আবেগী হয়। কখনও কখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া এদের পক্ষে মুশকিল হয়ে পড়ে।
-
বৃহস্পতি: দ্বাদশ ঘরের কারক গ্রহ বৃহস্পতি। জন্মছকে দ্বাদশ ঘরে বৃহস্পতি অবস্থিত হলে জাতক-জাতিকারা পরোপকারী এবং জীবনের প্রতি আশাবাদী হয়ে ওঠে। এরা খুবই আধ্যাত্মিক প্রকৃতির হয়। এরা বিচারক, গবেষক, অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী হতে পারে। এরা বিদেশে পড়াশোনা করতে পারে। ঈশ্বর বিশ্বাসী হয়। এদের ক্যারিয়ারের গ্রোথ ও আর্থিক উন্নতি প্রচুর হয়। জাদুবিদ্যা এবং মনস্তাত্ত্বিক বিষয়েও এদের আগ্রহ থাকতে পারে। এক জন অভিভাবক দেবদূতের মতো, বৃহস্পতি ব্যক্তির উপর নজর রাখে এবং তাকে সমস্যার মোকাবিলা করতে সহায়তা করে। নীচস্থ বৃহস্পতি থাকলে তা ক্যানসারের কারণ হতে পারে। জটিল সমস্যাগুলো দক্ষতার সঙ্গে এবং সুন্দর ভাবে আবির্ভূত হয়। এই স্থান ব্যক্তিকে উদার এবং সহানুভূতিশীল করে তোলে।
-
শুক্র: দ্বাদশ ভাবে শুক্র উচস্থ থাকলে জীবন আনন্দপূর্ণ হয়। ব্যক্তি গোপনে জীবনের অর্থ আবিষ্কার করতে চায়। গোপনীয়তার সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষমতা এদের থাকে। এই ঘরে শুক্র ব্যক্তিকে সহানুভূতিশীল করে তোলে, যাদের প্রয়োজনে সেবা করার প্রবল ইচ্ছা থাকে। এদের জীবন খুবই ব্যয়বহুল হয়। জীবনের শুরুতে কষ্ট করতে হলেও ৩২ থেকে ৩৯ বছর বয়সের পর থেকে তাদের জীবনে একটা আমূল পরিবর্তন আসে যাতে তারা প্রায় রাজার মতন জীবন কাটাতে শুরু করে। দিবাস্বপ্ন এই গ্রহের অবস্থানের একটা অংশ। এদের সন্তান ধারণের ক্ষমতা কম থাকে। সন্তান ধারণ করলেও সেই সন্তানের মৃত্যু ঘটতে পারে, গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা দেখা যায়। বিবাহিত জীবন সুখের হয় না। বাঁ চোখ নিয়ে একটু ভুগতে হতে পারে।
-
মঙ্গল: মঙ্গল যাদের দ্বাদশ ঘরে রয়েছে তাদের জীবন কিছু দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার সম্মুখীন হতে পারে। এরা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রছাত্রী হতে পারে। এরা বিদেশে থেকে চাকরির সুযোগ পেতে পারে। গোপন শত্রু তৈরি হতে পারে, যারা আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। তীব্র আবেগ ব্যক্তির কষ্টের মূল কারণ হয়ে ওঠতে পারে। এই ঘরে মঙ্গল ব্যক্তিগত শক্তি, সাহস এবং শৃঙ্খলাকে ঘিরে বিভ্রান্তি এবং অসুবিধাও নির্দেশ করে। ব্যক্তির শক্তিশালী ইচ্ছাশক্তি এবং আত্ম-ক্ষমতায়নের জন্য আরও আত্মদর্শী পদ্ধতির প্রয়োজন। দ্বাদশ ঘরে মঙ্গলের অবস্থানের কারণে ব্যক্তি মাঙ্গলিকও হতে পারে।
-
বুধ: দ্বাদশ ঘরে বুধের উপস্থিতি ব্যক্তিকে স্বপ্নদর্শী করে তোলে। এই স্থান আপনাকে রহস্য, জাদুবিদ্যা, আধ্যাত্মিকতা এবং ধর্মের দিকে প্ররোচিত করে। এদের মন জীবনের রহস্যের গভীরে খনন করতে পারদর্শী। এদের কর্মজীবনের উন্নতি হয়, মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, এদের জীবনে অযথা শত্রু তৈরি হতে পারে, শত্রুতার কারণে চাকরির ক্ষতিও হতে পারে। বুধ উচ্চস্থ থাকলে উকিল, বিচারক, ব্যবসায়ী, চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের পেশা এদের জন্য ভাল হয়। বুধের অবস্থান ব্যক্তিকে গণিতে দূর্বল করে দেয়। পীড়িত বুধ বক্তব্যের সঙ্গে বিভ্রান্তি প্রতিফলিত করে ও হতাশা এবং ভুল যোগাযোগের দিকে নিয়ে যায়।
-
শনি: লগ্ন থেকে দ্বাদশ ঘরে শনি অবস্থান করলে, সেই জাতক বা জাতিকাদের মোক্ষ লাভ হয়। এরা খুব চিন্তাশীল হয়। এরা আমদানি-রফতানির ব্যবসা, অস্ত্রোপচারের পণ্যের ব্যবসা খুব ভাল করতে পারবে। শনিকে নির্জনতার গ্রহও বলা হয়। এর কারণে ব্যক্তির মনের একটা পরিপক্ক এবং দার্শনিক দিক থাকতে পারে। এটা জীবনের রহস্য উন্মোচন করতে আপনাকে মনোযোগী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তুলবে। এই গ্রহের অবস্থানের একটা বড় অংশ হল ক্ষতি সত্ত্বেও সুন্দর ভাবে প্রবাহিত হতে শেখা এবং ভয় ছাড়াই অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাস করা। এই অবস্থানের কারণে দেখা যায় যে এদের পায়ে ছোটবেলা থেকেই সমস্যা। আবার কখনও ৪০ বছরের পর হঠাৎ কোনও দুর্ঘটনার কারণে হঠাৎ পায়ে কোনও সমস্যা হতে পারে। মানসিক অবসাদ ও শারীরিক ক্ষতিও হতে পারে।
-
রাহু: এই স্থানকে সাধারণত বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্রে খুব ইতিবাচক হিসাবে বিবেচনা করা হয় না। ১২শ তম ঘরে রাহুর অবস্থান ব্যক্তিকে পলায়নপ্রবণ করে তোলে এবং এরা বিভিন্ন নেশার বশবর্তী করে হয়ে পড়ে। এদের ব্যয় বৃদ্ধি ঘটতে পারে যা বেশিরভাগই অপচয়মূলক ব্যয়। এরা কল্পনাপ্রবণ হয়। সেই কল্পনা বেশ প্রাণবন্ত এবং আবেগপূর্ণ হয়। এদের ক্ষেত্রে মনে করা হয় এটা এদের শেষ জন্ম। সারাজীবন ভাল ভাবে কাটালে এদের শেষ জীবন খুবই ভালো কাটে ও সুন্দর মৃত্যু ঘটতে পারে। এদের পরবর্তী জন্ম আর হয় না। রাহুর কারণে হঠাৎ দুর্ঘটনা, সর্প দংশন, ক্যানসার ইত্যাদি হতে পারে।
-
কেতু: দ্বাদশ ঘরে কেতুকে রাশিফলের অন্যতম আধ্যাত্মিক অবস্থান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এদের আধ্যাত্মিকতার প্রবল বোধ থাকে। ব্যক্তির নিজ-কর্ম তাকে জ্ঞানার্জনের পথে নিয়ে যায়, কারণ এটাই ব্যক্তির জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকে। এরা স্বভাবতই অন্তর্মুখী হয় ও নির্জনতা পছন্দ করে। কেতু ব্যক্তিকে বিরোধিতার উপর বিজয়ী হতে সাহায্য করে। যাইহোক, তবে পীড়িত কেতু স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়ে আসতে পারে এবং ব্যয়ের কারণও হতে পারে।
সার্বিক আলোচনার পরে বলা যায়, জীবনে কোনও সমস্যার সঙ্গে এই লক্ষণগুলোর মিল খুঁজে পেলে নিজে কোনও সিদ্ধান্ত না নিয়ে অবশ্যই কোনও অভিজ্ঞ জ্যোতষশাস্ত্রবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
দেশের প্রখ্যাত জ্যোতিষশাস্ত্রবিদদের অন্যতম ডা: সোহিনী শাস্ত্রী।
ডা: সোহিনী শাস্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের দূরভাষ নম্বর: +91 91635 32538 / +91 90381 36660
ওয়েবসাইট: sohinisastri.com
ফেসবুক: facebook.com/drsohinisastri
ইউটিউব: youtube.com/@dr.sohinisastribestastrolo2355/
ডিসক্লেইমার: এটি একটি বিজ্ঞাপন প্রতিবেদন এবং বিজ্ঞাপনদাতার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত। প্রতিবেদনে প্রকাশিত সমস্ত বক্তব্য / মন্তব্য একান্তই বিজ্ঞাপনদাতার নিজস্ব। এর সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের সম্পাদকীয় দফতরের কোনও সম্পর্ক নেই। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই যাচাই করে নিন।