আধুনিক জ্যোতিষশাস্ত্রে, বুধকে রাশিচক্রের তৃতীয় এবং ষষ্ঠ ঘরের অধিপতি হিসাবে গণ্য করা হয়। যদিও ঐতিহ্যগতভাবে মনে করা হয়, রাশিচক্রের সপ্তম ঘরে অবস্থান করলে বুধ আনন্দে থাকে। সনাতন পুরাণ বলছে, দেবতাদের বার্তাবাহক হলেন বুধ। আমাদের দৈনন্দিন অভিব্যক্তি এবং সম্পর্কের কারক গ্রহ বুধের কাজই হল, প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলিকে প্রথমে পৃথক করে পুনরায় একত্রিত করা।
সবুজ গাছপালা, পাখি, এগারো বছর বয়স পর্যন্ত বালিকা-কে বুধের প্রতিরূপ হিসেবে গণ্য করা হয়। বুধ মানে যেমন ব্যবসা বাণিজ্য, তেমনই বুধ মানেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, আমাদের দেহের স্নায়ুতন্ত্রও নিয়ন্ত্রিত হয় বুধ গ্রহ দ্বারা।
আপনার রাশিচক্রে বুধের অবস্থান ভালো না খারাপ, বুঝবেন কীভাবে? — লক্ষণগুলি মিলিয়ে নিন। শিশু জন্মের পরেই যদি দীর্ঘমেয়াদি জন্ডিসে আক্রান্ত হয়, ঘনঘন ঠান্ডা-কাশির ধাত, শৈশবকাল জুড়ে বারংবার সর্দি-কাশি কমাতে কাশির সিরাপের ব্যবহার, কোনও কাজ শেষ করার ধৈর্য নেই... কাজ শুরু করে মাঝপথেই ছেড়ে দেয়, সামান্যতেই বিরক্ত হয়, নিজের প্রভাব বিস্তার করতে sacrifice করতেও পিছুপা হয় না, দৃঢ়ভাবে কোনও কাজ স্থির করে কিন্তু শেষ করতে পারে না... বুঝতে হবে রাশিচক্রে বুধ খারাপ। অথবা, কাজের জায়গায় ভীষণ ভালো, দুনিয়াদারিতে অত্যন্ত ভালো, কিন্তু নিজের পিতা-মাতার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নয়, পিতা-মাতা অত্যন্ত সামাজিক কিন্তু তিনি নিজে প্রয়োজনে সমাজের বা আত্মীয়দের কাছ থেকে কোনও সমর্থন পান না, সুন্দর-সুশ্রী দেখতে, মিষ্টভাষী, মিষ্টি ব্যবহার... অথচ অন্তর রক্তাক্ত, কান্নাভেজা মন, বুঝতে হবে বুধ খারাপ। বুধ খারাপ হওয়ার আরও একটি লক্ষণ হল, যাঁরা নাইট ল্যাম্প জ্বালিয়ে ঘুমাতে স্বচ্ছন্দ্য নন। একেবারে অন্ধকার ঘরে ঘুমাতে পছন্দ করেন মানে ধরে নিতে হবে বুধ খারাপ।
পাশাপাশি শারিরীক কিছু সমস্যাও লক্ষ্য করা যায়, যেমন বুধ খারাপ হলে দাঁত, স্নায়ুর সমস্যা দেখা দেয়, মাঝেমধ্যে পেশীতে যন্ত্রণা হতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সমস্যা হতে পারে। অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন, নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, মানে বুধ খারাপ। যদি নিজের বোন, মাসি-পিসি স্থানীয় কারো কাছ থেকে সমস্যা-ঝামেলা-অশান্তি পেতে হয়, ধরে নিতে হবে বুধ অবশ্যই খারাপ।
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি, নির্দিষ্ট কিছু কিছু বয়সে বুধ সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করে। যেমন, ১৭, ১৮, ১৯, ৩৪, ৩৫, ৪৬, ৫২, ৫৩.... এই বয়সে বুধের বিশেষ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বুধ খারাপ থাকলে বিশেষত ব্যবসা ক্ষেত্রে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। অন্যের ব্যবসায় দুর্দান্ত বুদ্ধি বা পরামর্শ দিতে পারে, কিন্তু নিজের ব্যবসাবুদ্ধি সঠিক হয় না। তবে নিজের স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে অথবা অন্য পার্টনারশিপে ব্যবসা করতে পারেন। যদিও যাঁদের রাশিচক্রে বুধ খারাপ, তাঁদের জন্য ব্যবসা অপেক্ষা চাকরি করা শ্রেয়। কারণ, এঁরা প্রয়োজনে প্ল্যান করলেও, বারবার সেই প্ল্যান বদলে ফেলেন, এক সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারেন না। এঁদের নিজের বুদ্ধির উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না, দ্বৈত সত্তা কাজ করে, সকালে এক চিন্তা করলে... রাতে আবার অন্য চিন্তা মাথায় ঘোরে, অযৌক্তিক কথাবার্তা বলেন, ঝগড়া করে ফেলেন, আনন্দ-মজা-ফুর্তিতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে, সম্পদ নষ্ট করে ফেলেন।
আবার আপনার রাশিচক্রে যদি মঙ্গল খারাপ হয়, ধরে নিতে হবে বুধ অবশ্যই খারাপ হবে। বুধ এমন এক গ্রহ, রাশিচক্রের যে ঘরে যে গ্রহের সঙ্গে বসে থাকে, সেই গ্রহের উপরেই নির্ভর করে এমনকি সেই গ্রহের মতোই ফলাদেশ দেয়। যেমন, রাশিচক্রে অশুভ নক্ষত্রে বুধ কেতু যুক্ত হলে সারাজীবন অর্থের জন্য হাহাকার চলতে থাকে, কিছু সম্পত্তি ছেড়ে দিতে বাধ্য হতে পারেন, কাউকে সাহায্য করে ক্ষতি হবে, অথবা প্রবল কৃপন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বুধ রাহু যুক্ত হলে, পারিবারিক সুখ থেকে বঞ্চিত হতে হয়, শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না। বুধ বৃহস্পতি যুক্ত হলে ছন্নছাড়া জীবন কাটাতে হয়, ভুল জায়গায় অর্থ বিনিয়োগ করে বিপদ বাড়ে। আবার রাশিচক্রে ভুল নক্ষত্রে যদি বুধ এবং চন্দ্র যুক্ত হয় তাহলে সেই ব্যক্তির বাস্তুর উত্তর দিক দূষিত হয়। এক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি যদি ব্যবসায়ী হন, তাঁর ব্যবসায় উন্নতিতে বাধার সৃষ্টি হয়, প্রচুর পরিশ্রম, হাড়ভাঙা খাটুনি সত্ত্বেও কোনও সঞ্চয় (savings) করতে পারেন না। আবার বুধ খারাপ হলে সেই ব্যক্তির বাস্তুতে প্রধান দরজা বা টয়লেটের কিছু অংশ ভাঙা থাকে, নাহলে টয়লেটে ব্যবহৃত মগ-বালতি প্রভৃতি কিছু না কিছু ভাঙা থাকে। বাড়িতে প্লাম্বারের (কলের মিস্ত্রি) আসা-যাওয়া লেগেই থাকে। বাস্তুতে নিকাশি ব্যবস্থা সঠিক হয় না। এই লক্ষণগুলি আপনাদের জানানোর একটাই উদ্দেশ্য, যাতে আপনারা নিজেরাই মিলিয়ে দেখতে পারেন রাশিচক্রে বুধের অবস্থান ভালো না খারাপ।
যেমন বুধ ভালো হলে, একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর সেই ব্যক্তির মধ্যে এক অদম্য মানসিক শক্তি চলে আসে। কোনও ব্যক্তির হয়তো শিক্ষাগত যোগ্যতা তেমন নয়, অথচ দুর্দান্ত ব্যবসা করছেন, প্রভূত অর্থশালী মানে তাঁর বুধ অত্যন্ত ভালো। রাশিচক্রে বুধ যদি খুব ভালো নক্ষত্রে ভালো অবস্থানে থাকে, তাহলে তাঁর আর্থিক জায়গা অত্যন্ত ভালো হয়। কিন্তু ভালো নক্ষত্রে, ভালো অবস্থানে বসে থাকা সত্ত্বেও বুধ যদি রাহু-কেতু বা চন্দ্র যুক্ত হয়, তাহলে প্রভূত অর্থ থাকলেও সেই ব্যক্তি বারবার বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, মনোকষ্টে থাকেন, একটা সম্পর্ক ভেঙে আবার সম্পর্কে জড়ান, অন্যকে দমিয়ে রাখার প্রবৃত্তি তৈরি হয়। এমনকি অন্তিম সময়ে নিজের সন্তানের কাছেও অত্যাচারিত হতে হয়।
এর বাইরেও বুধ সংক্রান্ত প্রচুর সূত্র রয়েছে, সনাতন জ্যোতিষশাস্ত্রের পাশাপাশি নিজের অভিজ্ঞতায় যা আমি জেনেছি... পরবর্তী পর্বে সে বিষয়ে আলোচনা করব।
Guided Symbol Meditation এবং বাস্তু বিষয়ক পরামর্শ পেতে WhatsApp - 86173 72545 / 98306 83986 (Payable & Non-Refundable).
ডিসক্লেইমার: এটি একটি বিজ্ঞাপন প্রতিবেদন এবং বিজ্ঞাপনদাতার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত। প্রতিবেদনে প্রকাশিত সমস্ত বক্তব্য / মন্তব্য একান্তই বিজ্ঞাপনদাতার নিজস্ব। এর সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের সম্পাদকীয় দফতরের কোনও সম্পর্ক নেই। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই যাচাই করে নিন।